মুনির উল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

77

ভন্ডামির অভিযোগে মুনিরীয়ার সভাপতি ও কাগতিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুনির উল্লাহর বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ৫ সদস্যের তদন্ত দল কাগতিয়ায় এসেছে। তদন্ত দলের কাছে প্রেরিত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নানা অভিযোগ করেন। এর মধ্যে অনেক অভিযোগ দুদককে অবহিত করার কথা বলেন তারা।
তদন্তকারী দলের কাছে এলাকার শতশত নারী-পুরুষ ছাড়াও নগরীর বায়োজিদে মানুষের জায়গা জবর দখল, হামলা-মামলার শিকার একাধিক মানুষ। এছাড়া তার আপন দুই বড় ভাই মোহাম্মদ উল্লাহ ও হাবিব উল্লাহ মুনির উল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
অভিযোগ মৌখিক ও লিখিতভাবে দিয়েছেন মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধারা। এদের মধ্য ৫ শিক্ষককে মুনির উল্লাহ সরকারি বেতন থেকে অর্ধেক কেটে রাখার অভিযোগ দেন। তদন্তকালে ক্ষতিগ্রস্ত শতশত নারী-পুরুষ মানববন্ধনও করেন। তদন্ত দলের নেতৃত্ব দেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোহাম্মদ সিরাজ।
ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন সাহাবুদ্দিন আরিফ বলেন, একজন পীর দাবিদার মুনির উল্লাহ ৫ শিক্ষক থেকে বেতনের টাকা কেটে রাখার পর তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে থাকার যোগ্যতা রাখেন না। এমন কোন অপকর্ম নেই, যা তার ইন্দনে হয়নি।
তদন্তকারী কর্মকর্তাদের আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মুনির উল্লাহ দাখিল ও আলিম পরীক্ষা দিয়েছে প্রক্সির মাধ্যমে। আবার কামিল ১৯৯৬ সনে পাশ দেখিয়ে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়া পরের বছর ৯৭ সনে কীভাবে সরাসারি অধ্যক্ষ হন, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
স্থানীয় ইলিয়াছ বলেন, আমার বাড়ি দখল করার জন্য মুনিরীয়ার লোকজন আমাকে মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যায়। এতে আমার স্ত্রী আমাকে বাঁচাতে পায়ে ধরলে মুনিরীয়ার লোকজন আমার কাছ থেকে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন।
মুনির উল্লাহর বড় ভাই মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আমাকে বাপের বাড়িতে আসতে দেয় না। তাকে বাপের বাড়ি রেজিস্ট্রি করে না দেওয়ায় আমার বাবা তফজ্জল আহমদের শহরের কেনা বিল্ডিয়ের ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। পরে আমার বাগিনা কায়েস চৌধুরীর শহরের বিল্ডিংয়ের ২য় তলা দিবে বলে বাপের ভিটা নিয়ে নেয়। প্রতারনা করে আমাকে আমার ভাগের ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা দেয়নি।
তিনি বলেন, আমি নজরুল নামে এক ছেলেকে নিয়ে বাপের কবর জেয়ারত করতে আসলে মুনিরীয়ার লোকজন ছেলেটিকে পেটায়। পরে আমি পালিয়ে যাই।
মুনির উল্লাহর আরেক ভাই হাবিব উল্লাহ বলেন, আমাকে আমার ভাই মুনির উল্লাহ নানাভাবে নির্যাতন করেছে। আমার বাবার মান-সম্মান আজ তিনি ক্ষুন্ন করেছেন। আমি আজ তার কুর্কীতি জেনে হতভম্ব।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডর আবু জাফর চৌধুরী বলেন, কাগতিয়া মাদ্রাসায় তফজ্জল আহমদের পৃষ্ঠপোষকতায় মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ক্যাম্প ছিল। এ ক্যাম্পের রাজাকারদের হাতে শহীদ হন মুছা খান। আর সেই পথ ধরেই আগাচ্ছে তার ছেলে মুনির। এতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধা শফিকুল আনোয়ার ও আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হকের উপর বর্বরোচিত হামলা।
স্থানীয় ব্যক্তি আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, মুনির উল্লাহ তরিকা ও মাদ্রাসাকে ব্যবহার করে এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। সম্প্রতি চট্টগ্রামে ২৭ কোটি টাকার একটি জায়গা ক্রয় কীভাবে করল।
স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করে বলেন, মুনির উল্লাহর অপকর্মের কোন নিউজ পত্রিকায় আসলে হত্যা, হামলা মামলার পাশাপাশি চাকরি যাওয়ারও হুমকি দিতেন। রাউজান প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি জাহেদুল আলমকে মামলা ও রাউাজন প্রেস ক্লাবের সভাপতি তৈয়ব চৌধুরীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এর আগে সাংবাদিক এসএম ইউসুফ উদ্দিনকে হত্যার হুমকি দেয় মুনিরীয়ার লোকজন।
মানববন্ধন : মুনিরীয়ার কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও সভাপতি মুনির উল্লাহকে গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কে উপজেলার মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়েতুল মোদাররেসিনের ব্যানারে উপজেলার সকল মাদ্রাসার শিক্ষকরা মানবন্ধন ও সমাবেশে করেছে।
এ সময় বক্তারা বলেন, মুনির উল্লাহর বাহিনী থেকে রেহাই পাননি আলেম ওলামারা। আলেম-ওলামাদের উপর চলত নানা নির্যাতন। রাউজানের ৩৪টি মাদ্রাসার শিক্ষকরা আজ মুনির উল্লাহর বিচার চান।
সংগঠনের সভাপতি ও কদলপুর হামিদিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মুহাম্মদ আবু জাফর সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাউজান পৌরসভার প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুফাচ্ছির ইউনুছ রেজভীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ ইব্রাহিম নঈম, অধ্যক্ষ সাইদুল আলম খাকী, মুহাদ্দিস আল্লামা ইব্রাহিম হানাফি, অধ্যক্ষ ইলিয়াছ নুরী, অধ্যক্ষ হাসান রেজা, রাউজান দারুল ইসলাম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা রফিক আহমদ ওসমানী, উপাধ্যক্ষ মারফাতুন নুর, সহকারী অধ্যাপক নুরুল মনোয়ার চৌধুরী, জমিয়েতুল মোদাররেসিনের সহ সভাপতি এটিএম আবদুল হাই, অর্থ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল মান্নান চৌধুরী, পূর্ব গুজরা মোহাম্মদীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ মো. আবু মোস্তাক আলকাদেরী, অধ্যক্ষ আবু মোহাম্মদ আনোয়ারী, পশ্চিম গুজরা মুনিরীয়া দারুচ্ছুন্নাহ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান, মাওলানা আবুল হাসেম, অধ্যাপক নাসির উদ্দিন, অধ্যাপক ওসমান গনি, হাফেজ সুপার মাওলানা শাহ আলম, সুপার মাওলানা মো. ইউনুছ, মাওলানা মেজবাহ উদ্দিন, সুপার আবু মোহাম্মদ, সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মাওলানা হানিফ উদ্দিন, সহ সম্পাদক মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিদ্দিকী, হাফেজ আবু তাহের, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সালেক, মাওলানা আরমান উদ্দিন, সুপার শওকত হোসেন রেজভী, সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আকবর হোসেন, সুপার মাওলানা মঈন উদ্দিন, মাওলানা শামসুল আলম হেলালী।