মিয়ানমারে গণহত্যার অভিপ্রায়েই রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ : জাতিসংঘ

94

সংখ্যালঘু মুসলমানদের নির্মূল করতে গণহত্যার অভিপ্রায় থেকেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়ন করে বলে উঠে এসেছে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে। পশ্চিমের রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাস দমনের নামে সেনা অভিযান নিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে এমন উপসংহার টানা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘শত শত রোহিঙ্গা নারী ও মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তথ্য প্রমাণ বলছে, ধর্ষণের ৮০ শতাংশ ঘটনাই ইচ্ছা করে ঘটানো হয়েছে। গণধর্ষণের যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার ৮২ শতাংশের দায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর’।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে কয়েকটি সীমান্ত পুলিশ পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় ৯ পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাজ্যে বিশেষ করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনা অভিযান শুরু হয়। প্রাণ বাঁচাতে সেখানকার প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশ আশ্রয় নেয়। পালিয়ে আসা ওইসব রোহিঙ্গাদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বা শরীরে পোড়া ক্ষত নিয়ে আসেন। নারীদের শরীরে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট ছিল। খবর বিডিনিউজের
পালিয়ে আসা ওই সব মানুষদের অভিযোগ ছিল, সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রামে নির্বিচারে গুলি চালায় এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। নারী ও শিশুদের ধর্ষণ করছে। অভিযোগ তদন্তের জন্য ওই বছরই জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল বিভিন্ন দেশের তদন্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্তদল গঠন করে।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মিয়ানমার সরকার গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত কাউকে আটক করতে ব্যর্থ হয়েছে। গণহত্যার অভিযোগ উঠা ব্যক্তিদের ‘জেনোসাইড কনভেনশন’র অধীনে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদাণে ব্যর্থতার দায় মিয়ানমার সরকারের।
মিয়ানমার সরকার শুরু থেকেই রাখাইন রাজ্যে বেসামরিক মানুষদের উপর দমন-নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণ সুযোগ তারা কাউকে দেয়নি। এমনকি, জাতিসংঘের তদন্ত দলকেও রাখাইন রাজ্যে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
যে কারণে তদন্ত কর্মকর্তারা বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির, বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা, উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান, গবেষক এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে এই তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকেই রাখাইনে নারী ও মেয়েদের উপর যৌন সহিংসতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে ধ্বংস করতেই সেখানে গণধর্ষণ চালায়। যুক্তিসংগত ভাবেই একে গণহত্যার ষষ্ঠ প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে আমরা আমাদের প্রতিবেদনের ইতি টানছি’।
বিপুল সংখ্যায় এবং বেছে বেছে নারী ও মেয়েদের হত্যা, সন্তান জন্মদানে সক্ষম নারী ও মেয়েদের বেছে বেছে ধর্ষণ, অন্তঃসত্ত¡া নারী ও ছোট শিশুদের উপর আক্রমণ, নারীদের যৌনাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত এবং শরীর, বিশেষ করে গাল, গলা, স্তন ও উরুতে কামড়ের দাগ দেখে তারা এই উপসংহারে পৌঁছেছেন বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তারা।
রাখাইনে গণহত্যা চালানোর দুই বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত এর জন্য দায়ী কোনো সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এর মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার ‘জঘন্যভাবে নিজেদের দায় অস্বীকার করেছে’ বলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে দুই শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্তের আহ্বান জানানো হলেও তারা এখনো স্বদর্পে নিজেদের পদে বহাল আছেন। মিয়ানমারের ওই দুই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তাদের নাম গোপন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।