মাহবুব-উল আলম (১৮৯৮-১৯৮১)

44

মাহবুব-উল আলম, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক। ১৮৯৮ সালের ১ মে চট্টগ্রাম জেলার ফতেয়াবাদ গ্রামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। একই জেলার ফতেপুর গ্রামে ছিল তাঁর পৈতৃক নিবাস। পিতা মৌলবি নসিহ্উদ্দীন ছিলেন সমাজ-সংস্কারক।
মাহবুব-উল আলম ১৯১৬ সালে ফতেয়াবাদ এম.ই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কিছুদিন চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়ন করেন। পরে ১৯১৭ সালে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে তিনি মেসোপটেমিয়া যান এবং যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধশেষে ১৯১৯ সালে দেশে ফিরেন। ১৯২০ সালে তিনি সাবরেজিস্ট্রার পদে যোগদান করেন। এ সময় তিনি পল্টন জীবনের স্মৃতি গ্রন্থটি লিখেন। ১৯৪৯ সালে তিনি ডিস্ট্রিক্ট সাবরেজিস্ট্রার, ১৯৫২ সালে ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার এবং একই বছর জুন মাসে ইন্সপেক্টর অব রেজিস্ট্রেশন পদে উন্নীত হন। দু’বছর পর ১৯৫৪ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে মাহবুব-উল আলম যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে মার্কিন মুলুক সফর করেন।
অবসর গ্রহণের পর মাহবুব-উল আলম সাংবাদিকতায় যোগদান করেন এবং ওই বছরই চট্টগ্রাম থেকে তাঁর সম্পাদনায় সাপ্তাহিক জামানা পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সম্পাদকীয়ের বিষয় নির্বাচন ও রচনারীতিতে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য তিনি সাংবাদিকতায় পথিকৃতের মর্যাদা লাভ করেন। তাঁর প্রথম গ্রন্থ পল্টন জীবনের স্মৃতি, প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। আত্মচরিতমূলক এ গ্রন্থে তাঁর সৃষ্টিশীল মনের পরিচয় পাওয়া যায়।
তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ: স্মৃতিকথা বর্মার হাঙ্গামা (১৯৪০), মোমেনের জবানবন্দী (১৯৪৬); গল্পগ্রন্থ: তাজিয়া (১৯৪৬), পঞ্চ অন্ন (১৯৫৩); উপন্যাস: মফিজন (১৯৪৬); রসরচনা: গোফসন্দেশ (১৯৫৩), ইন্দোনেশিয়া (১৯৫৯), তুর্কী (১৯৬০), সৌদী আরব (১৯৬০)। তাঁর সাড়া জাগানো আত্মজৈবনিক উপন্যাস মোমেনের জবানবন্দী। উপন্যাসটি ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় অনূদিত হয় এবং পেশোয়ার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য হয়। বিশেষত ছোটগল্পে তাঁর শিল্পিসত্তা পূর্ণভাবে বিকশিত হয়েছে। তাঁর অন্যান্য লেখায়ও সমাজ ও মানবজীবনের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে।
মাহবুব-উল আলম চট্টগ্রামের ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন, যার ফলে প্রকাশিত হয় তিন খন্ডে রচিত তাঁর চট্টগ্রামের ইতিহাস (১৯৪৭-১৯৫০) গ্রন্থ। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে চার খন্ডে রচনা করেন বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের ইতিবৃত্ত। তাঁর জীবদ্দশায় এটিই শেষ গ্রন্থ। তাঁর মরণোত্তর হাস্য-রসাত্মক গল্পসংকলন প্রধান অতিথি ও তাজা শিংগী মাছের ঝোল, রঙবেরঙ ও পল্টনে পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া জাগায়। মাহবুব-উল আলমের ভাষা সহজ, কিন্তু তাঁর জীবনদৃষ্টি গভীর।
সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৫), প্রেসিডেন্টের প্রাইড অব পারফরমেন্স পুরস্কার (১৯৬৭) এবং একুশে পদক (১৯৭৮) লাভ করেন। ১৯৮১ সালের ৭ আগস্ট চট্টগ্রামের কাজির দেউরিস্থ নিজ বাসভবনে তাঁর মৃত্যু হয়। সূত্র : বাংলাপিডিয়া