মার্চ-এপ্রিলের বাড়ি ভাড়া মওকুফের দাবি

77

করোনা ভাইরাস আতঙ্কে থমকে গেছে জনজীবন। নগরজুড়ে জনচলাচলসহ প্রায় সবকিছু বন্ধ। করোনা থেকে বাঁচতে সরকারি আদেশে মানুষ বাধ্য হয়েছেন ঘরে থাকতে। এতে ধাক্কা লেগেছে আয়ের উৎসে। বাসায় কোনোরকম দিনাতিপাত চললেও বাড়ি ভাড়া নিয়ে চিন্তারভাজ ভাড়াটিয়াদের কপালে। তাই বারবার দাবী আসছে মার্চ-এপ্রিল মাসে বাড়ি ভাড়া মওকুফের।
তবে বাড়ির মালিকদের আর্থিক সামর্থ্যরে কথা চিন্তা করে পুরো ভাড়া মওকুফ না করতে পারলেও কিছুটা ছাড় দেওয়া আহব্বান জানিয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
এ নগরে যারা শ্রমজীবী আছেন। যারা দিনে কাজ করে যা পায়, তা দিয়ে নিটুর বাস্তবতায় সংসার চালান। তাদেরও ঘরভাড়ার অংকটা অনেক ছোট হলেও বড় কঠিন বটে। শ্রমজীবীরা কাজ করতে পারছেন না। আয় না থাকায় সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকায় যেখানে দায়, সেখানে ঘর ভাড়া জোগাড় করা অনেক কঠিন।
শায়েরা খাতুন, থাকেন রহমান নগর বস্তিতে। বাড়িতে রয়েছে দুই মেয়ে। বাসা-ভাড়িতে রান্নার কাজ করেই চলত তার জীবিকা নির্বাহ। কিন্তু করোনার কারণে তার ছুটি মিলেছে কিন্তু বেতন মিলেনি। কাজ না করলেও বেতনও মিলবে না। আর কাজ করার সুযোগও নেই। তাই দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন তিনি। কেননা মাস শেষে ‘নাছোড়বান্দা’ জমিদারকে দিতে হবে দেড় হাজার টাকা।
একইভাবে ভাবনায় কোন কূল খুঁজে পাচ্ছে না ভ্যান চালক আলমগীর। পাঁচ জনের সংসার নিয়ে বসে থাকা মানে ‘মৃত্যুকে’ স্বেচ্ছায় বরণ করে নেওয়া বলে জানান তিনি। তাই তিনি মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার নয়, চান বাড়ি ভাড়া মওকুফ ও দু’মুঠো ভাত।
নাগরিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা নগর ও নাগরিকের সভাপতি লায়ন এম আইয়ুব বলেন, চলমান সময়টি ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিক সবার জন্য দুর্যোগের সময়। তাই কারও উপর একপক্ষীয় চাপ দেওয়া যাবে না। তাই বাড়ির মালিকরা নিজের সামর্থ্য অনুয়ায়ী মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। এছাড়া পুরোটা নয়, অর্ধেকভাড়া মওকুফের ঘোষণা দিতে পারে সরকার।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে গেছে। অনেকের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আয়ের একটি বড় অংশ ভাড়া হিসেবে দিতে হবে। এ মহামারির সময়টায় তাদের অনেক কষ্ট হবে। সেক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনা করে বাড়ির মালিকরা পুরোটা অথবা অর্কেক মওকুফ করতে পারে। এক্ষেত্রে বাড়ির মালিকদের সারচার্জ মওকুফ করে প্রণোদনা দিতে পারে সিটি করপোরেশন।
তিনি আরও বলেন, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন মানবিকতায় অনেক এগিয়ে। তাই এমন দুর্যোগপূর্ণ সময়ে ভাড়াটিয়াদের পাশে থাকবেন মেয়র। এমনটাই প্রত্যাশা করি।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, শহরে বেশিরভাগ বাড়ির মালিকদের ভিন্ন কোন আয়ের উৎস নেই। একই ভবনে চার-পাঁচ ভাইয়ের সংসার চলে বাড়ির ভাড়া দিয়ে। তাদের অংশ কোনভাবে উপেক্ষিত করার মত নয়। তাই যারা বিত্তবান, তাদের মওকুফ বা ছাড় দেওয়ার মত সামর্থ্য রয়েছে, তাদের প্রতি আহŸান থাকবে, দেশের দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে দেশের মানুষের পাশে থাকতে। ভাড়াটিয়াদের ভাড়া পুরোটা মওকুফ করতে না পারলেও কিছুটা যেন ছাড় দেন। বাড়ির মালিকদের সারচার্জ মওকুফের বিষয়ে বলেন, যারা ভাড়াটিয়াদের সেক্রিফাইস করবেন, তারা মানবিকতায় এমননিতেই করবেন। তাছাড়া আমি টেক্স মওকুফ করার এখতিয়ার রাখি না, সেটা রাষ্ট্রপতি ছাড়া আরও কেউ পারেন না।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন চলে করের টাকা দিয়ে, এমনিতে মানুষ এখন কর দিবে না। তাই সাড়ে ১০ হাজার কর্মচারীর বেতন-ভাতা দেওয়াটা আমার জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। আগামী মাসে রমজান, উৎসব ভাতা, বোনাস সবমিলিয়ে সিটি করপোরেশন অনেক চাপে আছে। এক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নভাবে কোন সিটি করপোরেশন নয়, জাতীয়ভাবে কোনো উদ্যোগ আসলে বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করি।
তিনি আরও বলেন, যদি সরকার সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য কোন প্রণোদনা ফান্ড দেয়, সেক্ষেত্রে আমরা সারচার্জ মওকুফ করার সাহস করতে পারি।