মহাতপস্বী সাধক শ্রীমৎ নারায়ণ পুরী মহারাজ

360

আবীর চক্রবর্তী

পূণ্যভূমি বাঁশখালীর বাণীগ্রামে শ্রীমৎ স্বামী অচ্যুতানন্দ পুরী মহারাজ ও জ্যোতির্ময়ী অনুরূপা দেবীর ঘর আলোকিত করে ১৯৫০ সালের ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার ধরায় আসেন মহাতপস্বী গৃহীসাধক শ্রীমৎ স্বামী নারায়ণ পুরী মহারাজ। ঋষিকূল শিরোমণি জগদগুরু স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ ভ্রাতুষ্পুত্রকে দেখে উৎফুল্ল হলেন। নবজাতককে কোলে তুলে নিয়ে আশীর্বাদ করলেন-এই শিশু সংসারী হয়েও বিচরণ করবে মায়াময় সংসার জগতের ঊর্ধ্বে। অতঃপর সাধনলব্ধ তপঃশক্তি তিনি প্রবেশ করিয়ে দিলেন কোলে থাকা শিশুর সুকোমল দেহে। অমনি হেসে উঠলো শিশুটি। এ দৃশ্য দেখে অদ্বৈতানন্দ পুরীর চরণে লুটালেন কনিষ্ঠ ভ্রাতা স্বামী অচ্যুতানন্দজী। আপনা আপনিই স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী শিশুর নামকরণ করলেন বিশ্বপিতার নামে। বাইরে তখন মায়ের দল উলুধ্বনিরত। মন্দিরে পুজো শেষে ব্রাহ্মণ করলেন শঙ্খধ্বনি।
শৈশবের গÐি পেরুতেই চৌধুরী বংশের কূলতিলক বালক নারায়ণ মিত্র আকুল হয়ে ওঠেন সত্যের সন্ধান পেতে। পিতৃদেবের কঠোর অনুশাসন এবং জননী অনুরূপা দেবীর অপত্য স্নেহধারায় তিনি নবজীবন লাভ করলেন। সেই থেকে শুরু হয় তাঁর দুর্গম পথচলা। শিক্ষা-দীক্ষা এবং সংস্কৃত শাস্ত্র বিষয়ে তিনি পারঙ্গম হয়ে উঠলেন অল্প সময়ে। ১৯৬৬ সালের ১৬ এপ্রিল শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজের তিরোধানের পর ১৯৮৩ সালের ২১ মে লোকান্তরিত হলেন শ্রীমৎ স্বামী অচ্যুতানন্দ পুরী মহারাজও। ফলে বংশ পরম্পরায় ১৯৮৩ সালের ৭ জুন স্বামীজিদ্বয়ের রেখে যাওয়া আকাশবৃত্তির তীর্থকেন্দ্র বাঁশখালীর ঋষিধাম অধিপতি এবং চট্টলার নন্দনকাননস্থ তুলসীধামের মোহন্ত মহারাজ হিসেবে অভিষিক্ত হন শ্রীমৎ স্বামী নারায়ণ পুরী মহারাজ। তপস্যার তপোবনে সূর্যপ্রভ তরুণ তাপস স্বামী নারায়ণ পুরী মহারাজ সেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন ২০১৫ সালের ৯ মার্চ সোমবার পর্যন্ত। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তুলসীধামে সন্ধ্যারতি শেষে গৃহমন্দিরে আসনের সামনে ধ্যানাবস্থায় তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে। পরদিন ১০ মার্চ মঙ্গলবার সর্বস্তরের ভক্তবৃন্দের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে তুলসীধামে স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজের সমাধি মন্দিরের পাশে মোহন্ত মহারাজের পূতঃদেহ শাস্ত্রীয় বিধি অনুযায়ী সমাধি দেয়া হয়। মার্চ-এপ্রিল-মে তিনমাসের মিল রেখে তিন মহান পুরুষ অদ্বৈত-অচ্যুত-নারায়ণ পুরী মহারাজের প্রস্থান ঘটলো দেবলোকে। তিনজনই বেছে নিলেন একই প্রয়াণ পদ্ধতি। সদালাপি, মিষ্টভাষী এই জ্ঞানমার্গের সাধক অনেক অন্ধকার পথের যাত্রীকে দিয়েছেন আলোর সন্ধান। মহারাজজী তাঁর জীবদ্দশায় স্বামীজিদ্বয়ের আদর্শ ও ভাবধারা প্রচার করে গেছেন। শ্রীমৎ স্বামী নারায়ণ পুরীর ৭০তম আবির্ভাব দিবস শনিবার (১৭ অক্টোবর)। মহারাজের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক: সাংবাদিক