বিড়াল হত্যার দায়ে তরুণীর বিরুদ্ধে মামলা

46

গত ১৯ মার্চ রাতে একটি ভিডিও আপলোড করেন ইশরাত জাহান মেহজাবিন নামে এক তরুণী। ভিডিওটিতে ছিল একটি বিড়ালের বাচ্চাকে হত্যা করে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা করার দৃশ্য। এই দৃশ্য দেখার পর প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইনে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন প্রাণীদের কল্যাণে কাজ করা সংগঠন কেয়ার ফর পস-এর সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন।
গত বৃহস্পতিবার মুগদা থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৭ মার্চ রাত ১০টার দিকে জীবন্ত বিড়ালের বাচ্চাকে হত্যার ভিডিও ধারণ করে ইশরাত জাহান মেহজাবিন। এরপর বাচ্চাটির মৃতদেহ পলিথিনে মুড়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেন। পরদিন ১৮ মার্চ ময়লাওয়ালা তা নিয়ে যায়। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
বিড়ালটিকে হত্যার ভিডিও ১৭ মার্চ ধারণ করা হলেও ইশরাত জাহান তা নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে আপলোড করেন ১৯ মার্চ রাত ৯টার দিকে। নিষ্ঠুর এই হত্যাকান্ডের ভিডিওটি রাতের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একটি প্রাণীকে এভাবে হত্যার নিন্দা জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। একইভাবে ভিডিওটি চোখে পড়ে প্রাণীদের কল্যাণে কাজ করা সংগঠন কেয়ার ফর পস-এর সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেনের।
তিনি প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তরুণীর পরিচয় ও ঠিকানা খুঁজে বের করেন। এরপর ২১ মার্চ দুপুরে ইশরাতের বাসায় যান তারা। এ সময় ইশরাত বিড়ালের বাচ্চাটিকে হত্যা, ভিডিও ধারণ ও প্রকাশ করার বিষয়গুলো স্বীকার করেন বলে জানান কেয়ার ফর পস-এর সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এই নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের পরও তার মধ্যে কোনও অনুশোচনা দেখিনি। মুখে সরি বললেও ইশরাত এবং তার পরিবারের লোকজনের মধ্যে দুঃখবোধ ছিল না। উল্টো তারা শুরুতে বলেছিল, একটি বিড়ালই তো মেরেছে! কী আর হয়েছে?’
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মামলাটি ১৯২০ সালের প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইনে করা হয়েছে। আমরা এর পাশাপাশি সাইবার অ্যাক্টেও মামলাটি করতে চেয়েছিলাম। পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করেছে। তবে সাইবারে মামলা নেওয়া হয়নি। আমরা মামলাটি করেছি যাতে ভবিষ্যতে কেউ প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর হওয়ার আগে ভাবে, এমনটি হলে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবো।’

বাংলাদেশে বাড়ছে
পশ্চিমবঙ্গের পর্যটক

পশ্চিমবঙ্গের মানুষের বিদেশ ভ্রমণের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ? বিদেশ সফরের স্বাদ নিতে ব্যাংকক, পাতায়ার পাশাপাশি পাশের দেশ বাংলাদেশেও যাচ্ছেন তারা? রাজনৈতিক অস্থিরতা আর জঙ্গি হামলার জেরে বেশ কিছুদিন মন্দা গেছে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে। এখন পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করায় আতঙ্ক কাটিয়ে অন্যান্য দেশের পর্যটকদের মত পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যেও বাংলাদেশ ভ্রমণের আগ্রহ বাড়ছে।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো? বিমান ও সড়কপথের পাশাপাশি জলপথেও যোগাযোগ বাড়ছে? দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মিলও এক্ষেত্রে বড় অনুঘটক। তাই বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে?
কলকাতার টুরিজম এজেন্সি ‘তিরুপতি স্পেশাল’ প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি ও পয়লা বৈশাখের মত গুরুত্বপূর্ণ দিনে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটকদের নিয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণের আয়োজন করে।
এ প্রতিষ্ঠানের কর্মী গোপাল পাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, কলকাতার পর্যটকরা এখন প্রতিবেশী দেশ নেপাল-ভুটানের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি যায়?
খবর বাংলাট্রিবিউনের
রাজনৈতিক সুস্থিতি থাকায় অনেকেই বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছেন? তাছাড়া এখন ভিসা পাওয়া সহজ হয়েছে? ভারতের অন্যান্য প্রদেশে ঘুরতে যেতে যে খরচ হয়, তা দিয়ে সহজেই বাংলাদেশে ঘুরে আসা যায়? এই ভাবনা থেকেই পর্যটকের সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে?
খরচ কম বলে পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিরা অন্য বাংলায় বেড়াতে যাচ্ছেন- এমন বললে সাংস্কৃতিক বন্ধনের বিষয়টি আড়ালে থেকে যায়।
দেশভাগের ফলে দুই বাংলার মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া উঠলেও রবীন্দ্রনাথ-নজরুল দুই বাংলারই কবি। অন্নদাশঙ্কর রায়ের সেই বিখ্যাত পংক্তি, ‘সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে, ভাগ হয়নিকো নজরুল?
দুই বাংলার ভাষা আর সংস্কৃতির এই বন্ধনকে কোনো রাজনৈতিক সীমারেখা টেনে দ্বিখন্ডিত করা যাবে না। তাই পশ্চিমের অজস্র মানুষ পুবের দেশের শিলাইদহ, শাহাজাদপুর, পতিসরে হাজির হন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদধূলির খোঁজে।
এর সঙ্গে রয়েছে ভাষা শহীদদের জন্য অন্তরের টান? প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বহু মানুষ বিশেষ দিনটির সাক্ষী হতে, শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশে উপস্থিত হন?
সংস্কৃতি যে দুই দেশের যোগসূত্র, এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে পর্যটক গোপাল দাস বলেন, বাংলাদেশের স্থান মাহাত্ম্য আছে তো বটেই? শিলাইদহ, কুষ্টিয়ার ইতিহাসের পাশাপাশি একুশের ভাষা দিবস ও বইমেলার মাহাত্ম্য কম নয়? তাছাড়া এখন অনলাইনে পাসপোর্ট পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে, বাংলাদেশের ভিসার জন্য পয়সা লাগছে না।
পর্যটনকে চাঙ্গা করে লাগাতার প্রচারের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার পর্যটন পরিষেবার মান বাড়াতেও জোর দিয়েছে? কলকাতা-ঢাকা রুটের বিমান পরিষেবা উন্নত হয়েছে? বেড়েছে ফ্লাইটের সংখ্যাও?
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলছে ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস? শুরু হয়েছে জলপথে যোগাযোগ? ভ্রমণ সহজতর হয়ে ওঠায় বাংলাদেশে যাওয়ার ঝোঁক বেড়েছে বলে মনে করছেন ট্যুর এজেন্সিগুলোর কর্মকর্তারা।
ভ্রমণসঙ্গী নামের একটি এজন্সির নির্মলেন্দু বসু বলেন, “বাংলাদেশের জন্য টান রয়েছে? অন্যদিকে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর হয়েছে? তাই বাংলাদেশে যাওয়ার আগ্রহ আরও বেড়েছে? এর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় পর্যটকরা দূরের জায়গার থেকে বাংলাদেশই পছন্দ করছেন?”
বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান ঢাকা ভ্রমণের পাশাপাশি পৃথিবীর দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতি বছর যাচ্ছেন বহু ভারতীয় পর্যটক। বাংলাদেশে সারা বছর যত পর্যটক আসেন, তার প্রায় ৪০ শতাংশ ভারতীয়? এর মধ্যে সিংহভাগই বাঙালি? কলকাতার বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, গতবছর যে ভারতীয়রা বাংলাদেশের ভিসা নিয়েছেন, তার ৮০ শতাংশই ছিল পর্যটন ভিসা?
চলচ্চিত্র নির্মাতা লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সংস্কৃতির টানটাই বড়, প্রকৃতির নয়? তার পরিচালিত ‘মাটি’-তে দেখানো হয়েছিল, শিকড়ের সন্ধানে ‘এ বাংলা থেকে ও বাংলায়’ যাওয়ার কাহিনি?
ডয়চে ভেলেকে লীনা বলেন, আমি মনে করি, প্রকৃতি দর্শন করতে পশ্চিমবঙ্গের কেউ বাংলাদেশে যান না, সংস্কৃতির স্বাদ নিতে যান? অনেকে খোঁজেন নিজের শিকড়? ছিন্নমূল মানুষ নিজের অতীতের খোঁজ করতে ওপারে যান?
ভারত ভাগের পর অসংখ্য মানুষকে জাতীয়তার প্রশ্নে ভিটেমাটি ছেড়ে সীমান্ত পার হয়ে এক অনিশ্চিত জীবনে পা রাখতে হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের অনেকের পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, বরিশাল, কুষ্টিয়ার গ্রামে গ্রামে?
বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেন থেকে পশ্চিমবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, এমন অসংখ্য মানুষের শিকড় বাংলাদেশে? দেশভাগের সেই যন্ত্রণা এখন তাদের বাংলাদেশে টানে।
হুগলির ঝরনা সরকার বলেন, ছোটবেলা থেকে বাংলাদেশের কথা শুনেছি বড়দের মুখে? তাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে ওপার বাংলার মাটির সঙ্গে? সেগুলো মিলিয়ে দেখার জন্যও বাংলাদেশ যেতে ইচ্ছে করে? তাই এবার একুশে ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশ গিয়েছিলাম? কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম কিছুই বাদ রাখিনি?
পশ্চিমবঙ্গের ট্যুর এজেন্সিগুলোর মধ্যে ‘ভয়েজার্স ক্লাব’ সবচেয়ে বেশি পর্যটককে বাংলাদেশে নিয়ে যায়? এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ইন্দ্রজিৎ সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, আগের থেকে বাংলাদেশের পর্যটন ব্যবস্থা অনেক ভালো হয়েছে? তবে যানজটের মত সমস্যাও রয়েছে? পরিবহনের দিকটা আরও উন্নত করলে ভালো হবে? পর্যটকরাও বাংলাদেশের পর্যটন অবকাঠামো নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেছেন?
ভদ্রেশ্বরের প্রবীণ জীবানন্দ চক্রবর্তী বলেন, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে ঘুরতে গিয়ে গাইডের অভাব বোধ করেছি? গাইড থাকলে ইতিহাস জানতে সুবিধা হত। তাছাড়া যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেল পরিষেবা আরো উন্নত করা দরকার?