বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মুসল্লির ঢল

43

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে শনিবার বাদ ফজর থেকে লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে আম বয়ান শুরু হয়েছে। পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে এ বয়ান চলে রাত পর্যন্ত। আজ আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মোনাজাতে শরিক হতে ইজতেমায় দলে দলে মুসল্লিরা আসছেন। এরই মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে ইজতেমা ময়দান। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লীদের আসা অব্যাহত থাকবে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে ইজতেমা আয়োজকরা জানান।
বিশ^ ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২০ সালের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এতে যোগ দেন মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মুসল্লিরা। ১৭ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের তিন দিনের ইজতেমায় পরিচালনা করছেন দিল্লীর মাওলানা সা’দ অনুসারীরা।
ইজতেমা ময়দানের মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম জানান, শুক্রবার বাদ ফজর মদিনা নিবাসী মাওলানা মুফতি ওসমান আম বয়ান করেন, তা বাংলায় তরজমা করে মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুর। সকাল সাড়ে ৯টায় তালিমের বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি আসাদুল্লাহ, বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুফতি ওসামা ইসলাম। জুমার নামাজের আগে সালাতুত তাসবিহ নামাজের ফাজায়েল সম্পর্কে বয়ান করেন মাওলানা মুফতি ফয়জুর রহমান। বাদ জুমা বয়ান করেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরুব্বি মাওলানা চেরাগ উদ্দিন, তার বয়ান বাংলায় ভাষান্তর করেন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফ আলী। বাদ আসর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা খান শাহাবুদ্দিন নাসিম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা জামশেদ, তা বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনই জর্ডান, লিবিয়া, আফ্রিকা, লেবানন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরাক, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৩৫ দেশ থেকে দেড় সহগ্রাধিক মুসল্লি আসেন। ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ময়দানে রয়েছেন বিদেশি মেহমানরা।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, শনিবার মধ্যরাত থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মিরেরবাজার থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত, কামারপাড়া থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত এবং বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
তিনি বলেন, ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকা কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে। প্যান্ডেলের ভেতরে ও বাইরে মুসল্লি বেশে রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সহগ্রাধিক সদস্য।
দুই পর্বে ১৯ মুসল্লির মৃত্যু : টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেওয়া ১৯ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত এ ১৯ মুসল্লির মৃত্যু হয়। এছাড়া ইজতেমায় অংশ নিতে আসা আরও তিন মুসল্লি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেওয়া পাঁচ মুসল্লি মারা গেছেন। তাদের মধ্যে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার উসমানপুর এলাকার হুমায়ুন কবীর (৬৫), ঝিনাইদহ সদর থানার কালাহাট গোপালপুর এলাকার আ ফ ম জহুরুল আলম (৬২), ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার নলভোগ এলাকার ইলিয়াস মিয়া (৮৫), গাইবান্ধার সাঘাটা থানার কামালের পাড়া এলাকার আব্দুস ছোবহান (৬৫) মারা গেছেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার চানপুর এলাকার কাজী আলাউদ্দিন (৬৬) মারা গেছেন।
এর আগে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নেওয়া ১৪ মুসল্লি মারা যান। তারা হলেন- বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে ইয়াকুব আলী (৮৫), রাতে খোকা মিয়া (৬০) ও মোহাম্মদ আলী (৭০)। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকালে শহিদুল ইসলাম (৫০) নামে এক মুসল্লি মারা যান। পরে রাতে আরও পাঁচ মুসল্লি মারা যান। তারা হলেন- কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার ডিমলা এলাকার তমিজ উদ্দিন (৬৫), রাজশাহীর চারঘাট থানার বনকি এলাকার আব্দুর রাজ্জাক (৭০), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানার তোল্লা এলাকার শাহজাহান (৬০), বরিশালের গৌরনদী থানার খালিশপুর এলাকার আলী আজগর (৫৫) ও নারায়গঞ্জের বন্দর থানার কলাবাগান এলাকার ওসমান গণি ইউসুফ (৫০)। শনিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থানার গুচিহাটা এলাকার নূর ইসলাম (৫৫), রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ থানা এলাকার আলী আহমদ (৬০) ও জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানা এলাকার আব্দুল মোমিন (৫৫) মারা যান। এছাড়া আরও দু’জনের পরিচয় জানা যায়নি।
অপরদিকে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে বিশ্ব ইজতেমায় যাওয়ার পথে টঙ্গীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার আব্দুর রহমান ওরফে সুরুজ মিয়া (৫৫) ও গাইবান্দার ফুলছড়ি উপজেলার গুলজার হোসেন (৪৫) মারা যান।
এছাড়া শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায় নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার বিলজুরা এলাকার মাজহারুল ইসলাম (১৭) বাস চাপায় মারা যান। খবর বার্তা সংস্থার