বিভাগের সাড়ে ১২ লাখ পশুর অর্ধেকই চট্টগ্রামে

50

আসন্ন কোরবানির জন্য চট্টগ্রাম বিভাগের সাড়ে বারো লাখ পশুর মধ্যে অর্ধেক চট্টগ্রাম জেলায় বিক্রি হবে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। এবার চট্টগ্রাম বিভাগে প্রস্তুত ১২ লাখ ৩৯ হাজার ১৭৩টি পশু। বিভিন্ন ব্যক্তির খামার ও বাতানে এসব পশু প্রস্তুত হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলাতেই প্রস্তুত আছে ৬ লাখ ১০ হাজার ২১৯ টি পশু। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপবিভাগীয় প্রাণিসম্পদ পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেন জানান, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেলায় ৬ লাখ, ১০ হাজার ২১৯টি পশু বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করেছে খামারী ও পশু ব্যবসায়ীরা। জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, চট্টগ্রামে এবারও পশুর সংকট হবে না। তবে সুস্থ থাকতে হলে চর্বিযুক্ত মোটা তাজা পশু না কেনার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাতে চর্বি পাবেন। চর্বিমুক্ত মাংস পেতে হলে কিনতে হবে হৃষ্টপুষ্ট পশু। এসব পশুর মাংস মানুষের জন্য নিরাপদ। তিনি জানান, বাজার মনিটরিংয়ে প্রত্যেক উপজেলায় ৩টি করে দল গঠন করা হয়েছে। এসব দল ৫ আগস্ট থেকে পশুর চিকিৎসা, বাজার তদারকি ও তথ্য সংগ্রহ করবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে চাহিদার চেয়ে এবার বেশি গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া রিষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। ফলে আসন্ন কোরবানির বাজারে পশু সংকট হবে না। গত বছর কোরবানীর ঈদে প্রায় ২০ হাজার পশু অবিক্রিত থেকে যায়। চট্টগ্রামে বিত্তবান মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বড় ও সুন্দর গরুর চাহিদা থাকে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে দেশি মাঝারি আকারের গরুর। গত দুই বছর চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর বাজারে সংকট হয়নি। এবারও সংকট হবে না।
তবে এর মাঝেও পাবনাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, তিন পার্বত্যজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচুর কোরবানীর চট্টগ্রামের বাজারে নিয়ে আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম জেলার গ্রামে-গঞ্জে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা বিভিন্ন খামার ও বাতানে চলছে শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা। প্রাণি সম্পদ দপ্তরের হিসেব অনুয়ায়ী যাদের বাসা-বাড়িতে পশু রাখার এবং লালন-পালনের সুযোগ আছে, তারা এখন থেকে কেনাকাটা শুরু করেছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদক কর্মকর্তা রেয়াজুল হক জানান, নিরাপদ গো-মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে আমরা খামারিদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে মনিটরিং কার্যক্রমও জোরদার করেছি। ফলে আশানুরূপ ফল আসতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার পটিয়ায় কৃষক সমাবেশ করে পশু মোটা তাজাকরণ পশুর চেয়ে রিষ্টপুষ্ট পশু লালন পালন পদ্ধতি এবং চর্বিমুক্ত মাংস উৎপাদনের উপর কর্মশালা করা হয়। তাতে বলা হয়, মোটা পশু না কিনে রিষ্টপুষ্ট পশু কিনতে এবং লালন পালন করতে হবে। মোটা পশুর মাংসে অতিরিক্ত চর্বির কারণে মানুষের নিত্যদিন নানা রোগ বলাই জন্ম হয়। চর্বিমুক্ত রিষ্টপুষ্ট পুশুর মাংস সারা বছর খেলেও কোনো সমস্যা হয় না। একটি পশুতে সর্বোচ্চ আড়াই বছর পর্যন্ত নিরাপদ মাংসের বৃদ্ধি হয় জানিয়ে বলা হয়, বয়স্ক পশুর মাংস থেকে রান্নার আগে সব চর্বি মুক্ত করা উচিত। চর্বি কেটে মুক্ত করা না গেলে রান্নার আগে মাংস সিদ্ধ করে চর্বিমুক্ত করে নিতে হবে। এরপর আলাদা পানি দিয়ে রান্না করে খেতে হবে। পশু তৃণভোজী প্রাণি, তাই ভাতসহ মানুষের খাবার কোনোভাবেই পশুকে খাওয়ানো যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের খাবার পশুকে খাওয়ানো আইন বিরোধী।
উপজেলার মনসাস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত কৃষক সমাবেশ পটিয়া উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুব্রত সরকারের সভপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডা. এনি চৌধুরী, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মালিক ওমর প্রমুখ। তাতে ৫ শতাধিক কৃষক অংশ নেন।
উপবিভাগীয় প্রাণি সম্পদ পরিচালক ডা. ফরহাদ হোসেন জানান, চট্টগ্রাম বিভাগে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করা পশুর মধ্যে প্রায় অর্ধেক চট্টগ্রাম জেলায় আসছে। এবারও পশুর ঘাটতি হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে গত বারের চেয়ে বেশি তথা ২০-৫০ হাজার পশু চাহিদার কারণে অবিক্রিত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। চট্টগ্রামের বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে গাড়িতে করে পশু নিয়ে আসছে ব্যবসায়ীরা। শেষ পর্যন্ত বাইরে থেকে আসা পশুর সংখ্যা ৩ লাখ পর্যন্ত হতে পারে। তিনি বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় ৩টি করে মনিটরিং দল বাজার পর্যবেক্ষণ করবেন। তারা একেক দিন একেক বাজারে গিয়ে পশুর চিকিৎসা, বাজার তদারকি ও তথ্য সংগ্রহ করবেন। এসব টিম ৫ আগস্ট থেকে কাজ শুরু করবে।