বিনোদনের নামে জুয়ার আসর নয় : সিটি মেয়র

61

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, সুস্থ বিনোদনের উদ্দেশ্যে সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত ক্লাবগুলোতে খেলাধুলা বাদে যদি জুয়ার আসর বসানো হয়, আমি এর পক্ষে নই। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা ক্লাব করি নির্মল বিনোদনের জন্য। এর অন্যতম একটি মাধ্যম হলো ক্রীড়াঙ্গন। এটি একটি পবিত্র অঙ্গন এটিকে অপবিত্র করার অধিকার কারোর নেই। প্রয়োজনে নিজের সামর্থ ও শুভাকাঙ্খিদের সাথে নিয়ে ক্লাব পরিচালনা করব। গতকাল সোমবার সকালে দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমান বাজারস্থ আইএস কনভেনশন হল চত্বরে চসিক আয়োজিত সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতিবিরোধী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্থানীয় কাউন্সিলর তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চসিক আইন শৃংখলা স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল, চসিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আকতার, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা জজ) জাহানারা ফেরদৌস, হাটহাজারী থানার ওসি (তদন্ত) মো. আফজাল হোসেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক তপন কান্তি শর্মা, চসিক সাবেক কাউন্সিলর জাফর আলম চৌধুরী, দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এম এ মালেক, বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মঈন উদ্দিন মঈনু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান রশিদ। এছাড়া ওয়াহিদুল আলম শিমুল, শফিকুর রহমানসহ স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এই সভাটি ছিল চসিকের ধারাবাহিক সভার ৪০তম মাদকবিরোধী সভা। মেয়র বলেন, জুয়া, মদ, ক্যাসিনো বসিয়ে ক্লাব পরিচালনার কথা কোথাও নেই। আমাদের সংবিধান ও পবিত্র ইসলাম ধর্মে নেই। ইসলাম ধর্মে জুয়া সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। এটা জায়েজ করার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় ভ্রাতা শহীদ শেখ কামাল যিনি অনেক বড় ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন, তার নাম ব্যবহার করে জুয়ার আসর বসিয়ে ক্লাব চালাবে-এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। এখানে বিভ্রান্ত হওয়ারও সুযোগ নেই। যারা জুয়ার বোর্ড বসাবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান মেয়র। তিনি বলেন, প্রথমত আমদেরকে নিজেদের শুধরাতে হবে। যদি আমি মদ ও জুয়ার সাথে জড়িত না থাকি, তাহলে আমার বুকে সাহস থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে ১৯৮৫ সাল থেকে আমিও ক্লাব চালাই। আমি চট্টগ্রাম ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, দীর্ঘদিন যাবৎ সভাপতি পদে আছি। এ ক্লাব অনেকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমি ক্লাব করছি না কারণ ক্লাবঘর করলে কেউ না কেউ অবৈধ কাজ করবে। আমার ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়ন। এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নয় আমার ব্রাদার্স ইউনিয়ন। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও মাদক একে অপরের পরিপূরক। যেখানে মাদক সেখানেই সন্ত্রাস। মাদক নির্মূল করা গেলে সন্ত্রাসও নির্মূল হবে। ইসলামে জঙ্গিবাদের স্থান নেই উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কারণে জঙ্গিবাদ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারছে না। আর জঙ্গিবাদে জড়িতরা তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রিয়নবী কখনো কাউকে আঘাত কিংবা জোর করে ধর্মান্তর করেননি। নবী করীম (স.) বলেছেন, অন্য ধর্মের অনুসারীরা ইসলাম ধর্মানুসারীদের কাছে নিরাপদ। যারা ধর্মকে মনে প্রাণে লালন পালন করে তারা কখনো বিভ্রান্ত হয় না। তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি নিয়ে সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী কমিটি করা হবে। আমরা এগুলো নির্মূল করতে চাই। মাদকসেবী, বিক্রেতা, মাদক বহনকারী ও জঙ্গিবাদে জড়িতরা এই চট্টগ্রাম শহরে থাকার অধিকার নাই। শিঘ্রই ৪১টি ওয়ার্ডে মাদক ব্যবসার মতো ঘৃণ্য পেশার সঙ্গে জড়িতদের তালিকা তৈরি করে প্রকাশ করা হবে। এই তালিকা প্রকাশের পূর্বেই সংশোধন না হলে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হবে। সিটি মেয়র আরো বলেন, অক্টোবরের ১৫-২৫ তারিখের মধ্যে লালদীঘি মাঠে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এই সভায় কাউন্সিলর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও সিএমপি কমিশনার থেকে শুরু করে প্রশাসনের সবাই উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, একটি পরিবারের প্রত্যেকেই নিরাপদে পথ চলার সাথে সাথে সুন্দর সমাজে বাস করার অধিকার রয়েছে। তাই পরিবারের সদস্য কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেলামেশা করে, তা প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখতে হবে। তারা যাতে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে অভিভাবকমহলকে নজরদারী রাখার পরামর্শ দেন মেয়র। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা এ প্রজন্মের নাগরিক ও সমাজ ধ্বংস করছে। তরুণ সমাজরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তারাই উন্নত, সমৃদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে। এদেরকে সমাজের অপরাধমূলক কাজ থেকে দূরে রাখতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি আরো বলেন, মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি অনেক আগেই। চট্টগ্রাম শহরের কোথাও কোনো মাদক বিক্রেতা থাকতে পারবে না। এই ধরনের অপরাধ পরিলক্ষিত হলে সিটি করপোরেশনের হট লাইন নম্বর ১৬১০৪-এ অথবা সিটি মেয়রের মোবাইলে এসএমএস দেয়ার অনুরোধ জানান মেয়র। মেয়র বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে আপনাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। তবে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে হেয় করার জন্য কারো নাম দেবেন না। এসব তালিকা যাচাই-বাছাই করে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ-প্রশাসনের মাধ্যমে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হবে। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান মেয়র। তরুণদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, দ্রুত বড়লোক হওয়ার চিন্তা তোমাদেরকে ধ্বংস ডেকে আনবে। ধীরে ধীরে বড় হতে হয়। মিরসরাই-সীতাকুন্ড-ফেনীতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আশা করি বেকারত্ব কমে আসবে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে এই শহরের শিক্ষিত-অশিক্ষিত একজন মানুষও বেকার থাকবে না। খবর বিজ্ঞপ্তির