বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানায় আলাদা লাইনে এলএনজি

77

এবার গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানায় এলএনজি সরবরাহের জন্য আলাদা লাইন বসাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (কেজিডিসিএল)। ইতোমধ্যে আনোয়ারা সিজিএস থেকে শিকলবাহা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পৃথক পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট, ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট ও ২২৫ মেগাওয়াট রিসাইকেল পাওয়ার প্লান্টে চাহিদা মোতাবেক গ্যাস সরবরাহ করে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি) ও বহুজাতিক সার কারখানা কাফকোতেও (কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লি.) গ্যাস সরবরাহ করা হয়। দীর্ঘদিন থেকে গ্যাস সংকটের কারণে শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট, ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট ও সিইউএফএল-এ উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়। এলএনজি আমদানির পর থেকে এ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও দুই সার কারখানায় এলএনজি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য পৃথক পাইপলাইন বসানোর উদ্যোগ নেয় কেজিডিসিএল।
তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট, ২২৫ ও ১৫০ মেগাওয়াট দুটির জন্য ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট, সিইউএফএল- এ ৫২ মিলিয়ন ঘনফুট এবং কাফকোর জন্য ৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, শিল্প গ্রাহকদের বিপুল পরিমানে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে বর্তমান নেটওয়ার্কের সক্ষমতা ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করার জন্য কর্ণফুলী গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। তন্মধ্যে মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত আসা এলএনজি পাইপলাইনের আনোয়ারা সিজিএস (সিটি গেট স্টেশন) থেকে শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত আলাদা পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৫ কিলোমিটার ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। এসব পাইপ দিয়ে ৩৫০ থেকে ১০৫০ পিএসআই চাপের গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
কর্ণফুলী গ্যাসের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ৬ লাখ দুই হাজার ৮৩ গ্রাহক রয়েছে কেজিডিসিএল’র। তন্মধ্যে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৩টি আবাসিক গ্রাহক এব্ং শিল্প গ্রাহক রয়েছে ১ হাজার ৫৫টি। সারাদেশে বর্তমানে ৪৫০-৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে পেট্রোবাংলা কর্ণফুলী গ্যাসকে দৈনিক ৩০০-৩৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রামে ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। তবে বর্তমানে ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থায় ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে সক্ষম।
এদিকে মহেশখালী থেকে আসা এলএনজি পাইপলাইন থেকে আনোয়ারা সিজিএস দিয়ে সর্বোচ্চ ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কেজিডিসিএলকে দিতে পারে জিটিসিএল। বর্তমানে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি পাওয়া গ্যাসের অবশিষ্ট আনোয়ারা-ফৌজদারহাট লাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ দেওয়া হয়।
কর্ণফুলী গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ট আপগ্রেডেশন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আ ন ম সালেহ পূর্বদেশকে বলেন, ‘এলএনজি আসার পর আমাদের আর গ্যাসের সংকট নেই। আমাদের সঞ্চালন ব্যবস্থায় সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। পুরোনো ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থায় ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে সক্ষম। নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আমরা ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘নগরীর শিল্প ও আবাসিক গ্রাহকদের লাইনে গ্যাসের চাপ বাড়ানোর জন্য আপগ্রেডেশন প্রকল্পে শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও আনোয়ারা সিইউএফএল এবং কাফকোর জন্য আলাদা পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই পাইপলাইনটি নির্মাণের পর পৃথকভাবে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে পুরোনো সরবরাহ লাইনের চাপ বেড়ে যাবে।’