বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিলেন ৪ চবি শিক্ষার্থী

12

চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাঁতার কেটে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিলেন বর্তমান তিন শিক্ষার্থী এবং সাবেক এক শিক্ষার্থী। তারা হলেন ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সালাহ উদ্দিন, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শফিউল হাসান, পালি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল চাকমা এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আজাদ। গতকাল সোমবার টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার সাঁতার কেটে তারা বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেন।
জানা গেছে, ‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার’ ও ‘এক্সট্রিম বাংলা’ আয়োজিত ‘ফরচুন বাংলা চ্যানেল-২০২১’-এর ১৬তম আসরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ৭৯ জন সাঁতারু অংশ নেন। সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে চবির সালাহ উদ্দীনের ৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট, উজ্জ্বলের ৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিট, আজাদের ৫ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট ও শফিউলের ৫ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট লাগে। এর আগে দুই দফা বাছাই পর্বে অংশগ্রহণ করে তারা বাংলা চ্যানেল সাঁতার কেটে পাড়ি দেওয়ার জন্য মনোনীত হন।
সাঁতার দলের সাথে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মিঠুন বলেন, সোমবার সকালে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন বর্তমান ও একজন সাবেক শিক্ষার্থী সফলভাবে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছে। আমরা এখানকার রেকর্ড ঘেঁটে দেখেছি এর আগে কোনো চবিয়ান বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেননি।
উল্লেখ্য, মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ১০ বছরের লারিসাসহ ৭৯ সাঁতারু। এদের মধ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম রাসেল সবার আগে সাঁতার শেষ করেছেন। লারিসার সঙ্গে সাঁতারে অংশ নিয়েছেন তার বাবা সৈয়দ আক্তারুজ্জামান ও বড় ভাই সৈয়দ আরবিন আয়ান। তবে মাঝপথে তারা ব্যর্থ হলে উদ্ধারকারীরা তাদের তুলে নেন।
এবারের ৭৯ জন সাঁতারু-এর মধ্যে একজন ফ্রান্সের নাগরিক ও একজন নারী রয়েছেন। সাঁতরে ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে পাড়ি জমান তারা। এ সময় দ্বীপের বাসিন্দারা তাদেরকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান।
আয়োজক ও দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, বেলা পৌনে ১১টায় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে বাংলা চ্যানেলে সাঁতার শুরু করেন ৭৯ সাঁতারু। এর আগে সবাই দেশের পতাকা দেখিয়ে উল্লাস করেন। বিকেল ২ টা ৩০ মিনিটে (৪ ঘণ্টা ৯ মি.) বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দ্বীপে প্রথম পৌঁছেন সাইফুল ইসলাম রাসেল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এটা পাড়ি দিয়ে তিনি ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন। সবচেয়ে কম সময়ে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার গৌরবও অর্জন করেন তিনি।
এর আগে গত বছর সাইফুল ইসলাম রাসেল ৩ ঘণ্টা ২১ মিনিটে পাড়ি দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। এবারে ৩ ঘণ্টা ১৬ মিনিটে পাড়ি দিয়ে তৃতীয় হয়েছেন সালাউদ্দিন। এরপর সূর্য ডুবির সঙ্গে সঙ্গেই ধাপে ধাপে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৭৪ জন সাঁতারু দ্বীপে পৌঁছান। বাকিরাও বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দ্বীপে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তবে মাঝপথে সাঁতারে ব্যর্থ হলে বেশ কয়েকজন সাঁতারুদের উদ্ধারকারীরা তুলে নেন। এবার ১৮ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার রেকর্ড গড়বেন ষড়জ অ্যাডভেঞ্চারের নির্বাহী কর্মকর্তা লিপটন সরকার। তিনি সাঁতার শুরুর আগে বলেছেন, চ্যানেল সাঁতারের আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে আয়োজন করা হয়েছে। সাঁতারুরা ফ্রি হ্যান্ড সুইমিং করবেন। নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক সাঁতারুর সঙ্গে একটি করে উদ্ধারকারী ছিলেন।
লিপটন সরকার বলেন, এ সাঁতার আন্তর্জাতিক রীতি মেনে পরিচালনা করা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এবারও একজন বিদেশি সাঁতারু অংশ নিচ্ছেন। বাংলা চ্যানেল সাঁতারকে আন্তর্জাতিক করতে পেরেছেন। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় দ্বিগুণসংখ্যক সাঁতারু অংশ নিয়েছেন।