বাঁশখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা আনন্দের রঙিন ফুল

117

প্রবেশেই বিচলিত চোখ। পাকা ভবনের পাশে পাখা লাগানো টিনশেড ঘেরা ক্লাস রুম। এক কক্ষে গাদাগাদি করেই বসেন ১১ জন শিক্ষক। কক্ষ সংকট অনুমেয়। দুই কদম বাড়াতেই সিঁড়ির কোণে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থিরচিত্রে সাজানো মুক্তিযোদ্ধা কর্নার। পাশের কক্ষটি চমকপদ। রঙে রঙিন চারপাশ। রংতুলিতে ফুটে উঠেছে শিক্ষার তাৎপর্য। যেখানে আঁকা স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার। দেয়ালিকায় শোভা বাড়িয়েছে গ্রামীণ দৃশ্যপটে আলোকিত শিক্ষার পরিবেশ। এটি বাঁশখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সুমি সিকদার নামে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা বললেন, ‘আমাদের স্কুল আনন্দের এক রঙিন ফুল।’
নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে ৬৮১ জন শিক্ষার্থীর এই বিদ্যালয়। আশার কথা নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে সকল সংকট কেটে যাবে।-এমনটাই প্রত্যাশা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।
উপজেলার একমাত্র ডিজিটালাইজড বিদ্যালয়টির অর্জনের ঝুলিতেও আছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। সিটি এলাকা বাদ দিলে এই স্কুলটি জেলা পর্যায়ে সেরা প্রাথমিক বিদ্যাপিঠ। শাপলা কাবে এক বছরে ১৫ জন শিক্ষার্থী অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন। যে কারণে কাব পর্যায়ে বিদ্যালয়টির অবস্থান সারাদেশে দ্বিতীয়। আগামী ১৫ অক্টোবর এ বিদ্যালয়ের উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ তুলে দেয়া হবে। উপজেলা পর্যায়ে তো গেল কয়েক বছর ধরেই শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণ্ণ রেখেছে বিদ্যালয়টি।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। প্রাক-প্রাথমিকে স্কুলটির কক্ষ মনোমুগ্ধকর। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যালয়টিতেই আছে একমাত্র ডিজিটাল বোর্ড। যেটি ব্যবহার করে হাতের ইশারায় আনন্দঘন পরিবেশে বাচ্চারা পড়ালেখা করতে পারবে। এটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। বুক কর্নার ও মুক্তিযোদ্ধা কর্ণার বিদ্যালয়টির মান-মর্যাদা আরো বাড়িয়েছে। বিদ্যালয়ের আরো জায়গা থাকলে আরো সুন্দর পরিবেশ পেতো।’
বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, মূল ভবনের পাশেই একটি টিনশেড বেড়ায় আড়াআড়িভাবে রাখা বেঞ্চ। সেখানেই গাদাগাদি করে পাঠদান করা হয়। মূল ভবনের সিঁড়ির কাছেই মুক্তিযোদ্ধা কর্ণারটির অবস্থান। পাশেই আছে প্রাক-প্রাথমিক কক্ষ। যেখানে বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দেয়ালে অংকিত আছে বিভিন্ন শিক্ষামূলক আলপনা। দ্বিতীয় তলায় আছে বুক কর্নার। বঙ্গমাতার নামে করা হয়েছে ডিজিটাল কক্ষটির নামকরণ। সেখানেই বসানো হয়েছে বাঁশখালীর প্রথম ইলেকট্রিক বোর্ড। যেখানে আঁকাআঁকি করেই ডিজিটাল ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এ বিদ্যালয়ের আছে স্কাউটের আদলে হলদে পাখির দল। শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে আছে খুদে চিকিৎসক। এ শিক্ষার্থীরাই ডাক্তার বেশে প্রতিমাসে নিজেরাই নিজেদের ওজন মাপেন।
বাঁশখালী উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আবু সুফিয়ান পূর্বদেশকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা আছে সকল প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কক্ষটি শিক্ষা উপকরণের ছবি এঁকে সুসজ্জিত করার। এদিক থেকে মডেল স্কুল এগিয়ে আছে। তারা একটি কক্ষের চারটি কর্নার সেভাবেই সাজিয়েছে। যেগুলো দেখে শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণে আগ্রহী হবে। কক্ষ সংকট থাকার পরেও বিদ্যালয়টি নানা ক্যাটাগরীতে শীর্ষে থাকছে।’
জানা যায়, ২০১২-১৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের ৩৫ জন শিক্ষার্থী শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। এরমধ্যে ২০১৯ সালেই পেয়েছে ১৫ জন। এছাড়াও সমাপনী পরীক্ষাতেও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঈর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করেছেন। ২০১৫ সালে ৪৫ জন, ২০১৬ সালে ৬৪ জন, ২০১৭ সালে ৬৯ জন, ২০১৮ সালে ৬৩ জন ও ২০১৯ সালে ৪৬ জন শিক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘সারাদেশে শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ডে আমরা দ্বিতীয়, জেলায় প্রথম আমাদের বিদ্যালয়। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলেও উপজেলায় শ্রেষ্ঠত্ব দখল করে আছে বিদ্যালয়টি। এই করোনাকালেও আমরা সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল ক্লাস নিচ্ছি। উপজেলার কোনও হাইস্কুল, কলেজ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল বোর্ড নেই। আমরাই একমাত্র ডিজিটাল বোর্ডে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছি।’
সদ্য বদলি হওয়া সহকারী শিক্ষিকা ফারজানা চৌধুরী বলেন, ‘শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নিয়ে বেড়ে উঠাটা পরিবেশের উপর নির্ভর করে। পরিবেশ পেলেই পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। আনন্দঘন পরিবেশে সুন্দর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাঠদানে স্কুলটি ব্যতিক্রম।’
সহকারী শিক্ষক হারাধন দাশ বলেন, ‘শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকদের আন্তরিকতায় স্কুলটির এমন পরিবেশ। স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’