বন্যায় সাতকানিয়ায় শতাধিক বসতঘর শঙ্খগর্ভে বিলীন

75

সাম্প্রতিক বন্যায় সাতকানিয়ায় শতাধিক বসতঘর শঙ্খ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে। গৃহহারা হয়েছে হাজারো পরিবার। অনেক ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে।
বন্যার পানি কমার সাথে সাথে শঙ্খ নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙনরোধে প্রায় ৪শ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সমাপ্ত না হওয়ায় এবারেও ভাঙনের কবলে পড়লো শঙ্খ পাড়ের বাসিন্দারা। ভাঙনরোধ প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী জানান, পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিন দেখতে আজ মঙ্গলবার সাতকানিয়ায় আসছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাক্তার এনামুর রহমান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামিম ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া।
জানা যায়, চলতি মাসের ৮ তারিখ থেকে বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়ার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়া শুরু করে। পরবর্তীতে বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের বাজালিয়া, দস্তিদার হাট ও সত্যিপীরের মাজার সংলগ্ন এলাকায় বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সারা দেশের সাথে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ। টানা ৮ দিন বন্ধ ছিল এসড়কে যান চলাচল। অপরদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার হাসিমপুর ও সাতকানিয়ার কেরানীহাট এলাকায় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের যান চলাচল। সড়কের উভয় পাশে আটকা পড়ে হাজারো যানবাহন। পাহাড় থেকে নেমে আসা হাঙ্গরখালে সৃষ্ট স্রোতে লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে ছদাহা ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর শঙ্খ নদের বাঁধ উপছে আসা ঢলে ব্যাপক ক্ষতি হয় বাজালিয়া, কালিয়াইশ, ধর্মপুর, নলুয়া, আমিলাইষ ও চরতী এলাকা।
সরেজমিন পরির্দশনে দেখা যায়, ছদাহা ইউপি-দস্তিদার হাট সড়কটির বিশাল বিশাল অংশ বন্যার পানির স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে। দস্তিদার হাট থেকে ফকির হাট পর্যন্ত সড়কে কোন ধরনের যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। আবার ফকির হাট থেকে মিঠাদিঘী যাওয়ার পথে একটি কালভার্ট ভেঙ্গে সড়ক বিলীন হয়ে যাওয়ায় সেখাানেও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোসাদ হোসেন চৌধুরী নিজ উদ্যেগে ঐ স্থানে কাঠের কালভার্ট নির্মাণ করে দেওয়ায় রিকশা ও অটোরিকশা নিয়ে যাত্রীরা যাতায়াত করছে।
কালিয়াইশ ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা ফজল করিম সড়কটির বেশ কয়েকটি স্থান শঙ্খ নদের স্রোতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এ সড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সৃষ্ট গর্তসমূহ মাটি দিয়ে ভরাট করে দিয়ে কোন রকমে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। একই ভাবে আমিলাইশের বেশ কয়েকটি সড়কও ডলু নদীর পানির স্রোতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে।
ছদাহা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফি সওদাগর জানান, বন্যার শুরুতেই হাঙ্গরখালের ব্যাপক স্রোতে ইউনিয়নের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ছদাহা ইউপি-দস্তিদার হাট সড়কটির বেশ কয়েকটি স্থান বিলীন হয়ে যায়। ফলে এ সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়ে।
কালিয়াইশ ইউনিয়নের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন মিন্টু জানান, শঙ্খ নদের ¯্রােতে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ মুক্তিযোদ্ধা ফজল করিম সড়কটি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। পরে চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় স্থানীয় বাসিন্দারা সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সড়কটি কোনরকমে চলাচলের উপযোগী করেছে। সড়কটি জরুরী ভিত্তিতে মেরামত প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
আমিলাইষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম হানিফ জানান, এবারের বন্যায় আমিলাইষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তার মধ্যে শঙ্খনদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ৩নং ওয়ার্ডের সারওয়ার উদ্দিন চৌধুরী বাড়ির সোলতান আহমদ, রশিদ আহমদ, মন্সি আহমদ, মোহাম্মদ সোলাইমান, আব্দুর রহমান, আবু সৈয়দ, আবুল কাসেম, আবু হানিফ, মকবুল আহমদ, ফজল কবির, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আইয়ুব। এছাড়া শঙ্খের ভাঙনে ফরিদুল আলম, আনোয়ারা বেগম, মনোয়ারা বেগম, মোহাম্মদ ইউছুপ, মোহাম্মদ ইদ্রিস, মোহাম্মদ নাছির, মোহাম্মদ শফিক, মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ জসিম, মোহাম্মদ ফোরকান, মোহাম্মদ কায়ছার, রোকেয়া বেগম, মোহাম্মদ মুছা, মোহাম্মদ রশিদ, আব্দুশ শুক্কুর, জয়নাল আবেদীন, মহিউদ্দিন, সাহাব উদ্দিন, জামাল হোসেন, বাবুল মেম্বার, নুরুল ইসলাম, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ মোস্তাক, মোহাম্মদ হাসান সওদাগর, আব্ছার উদ্দিন, মইনুদ্দিন, মোছাম্মৎ হুমায়রা, সামশুল ইসলাম, ইয়াকুব হোসেন, ইমান শরীফ, আহমদ ছফা, মোহাম্মদ নুরুদ্দিন, মোহাম্মদ জমির হোসেন, সরওয়ার কামাল, মো. আনোয়ার, আবু হানিফ, আহমদ হোসাইন, নুর হোসেন আব্দুল জলিল, রেহেনা বেগম, মোহাম্মদ শহিদ, ফয়জুল কবির ও মোহাম্মদ হাবিবের বসতঘর শঙ্খের ঢলে বিলীন হয়ে গেছে।
বর্তমানে এসব পরিবারের লোকজন নিকট আত্মীয়-স্বজন বা রাস্তার পাশে পলিথিনের চাউনি দিয়ে অত্যান্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে। একই অবস্থা বিরাজ করছি চরতী ও নলুয়াতেও। সেখানেই শত শত ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল নবি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমপি মহোদয় ভাঙনরোধের জন্য পাথর ঢালাইয়ের ব্যবস্থা করলেও ঠিকাদার যথাসময়ে কাজ শেষ না করায় এ বছরও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। পাথরের বøক বসানোর কাজ শেষ হলে নদী ভাঙন থেকে বাঁচবে এ অঞ্চলের হাজারো বসতঘর।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, চরতী, আমিলাইশ ও নলুয়াতে নদী ভাঙন সমস্যা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহিত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যা আর থাকবেনা।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আব রেজাম মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, সাতকানিয়ায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনের জন্য আজ দুপুরে দুর্যোগ ও ত্রাণব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সাতাকানিয়ায় আসছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দ্রæত মেরামতের চেষ্টা করা হবে। আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন কাজ করেছি। শঙ্খ ও ডলুনদীর ভাঙনরোধের জন্য ৫৭০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। কাল (মঙ্গলবার) সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ২ জন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সাতকানিয়ায় আসছেন। তারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করবেন।