ফের সক্রিয় দখলদাররা

65

চাক্তাই বেড়া মার্কেট এলাকায় সরকারি জমিতে গড়ে উঠা বস্তি পুড়ে যাওয়ার পর ফের দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দখলদাররা। ভাড়াটিয়া বস্তিবাসিরা সরে যেতে চাইলেও তাদের বাধা দিয়ে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। একদল মাস্তান সেখানে অবস্থান করছে। এদিকে অগ্নিকান্ডের আগে বেশ কয়েকজন মুখোশধারীকে সেখানে দেখা গিয়েছিল বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
গত শনিবার দিবাগত রাতে এক রহস্যজনক আগুনে পুড়ে যায় বস্তির প্রায় দুইশ ঘর। আগুনে পুড়ে মারা যান নয় জন। সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান বসবাসকারী সবাই। কারো কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, অসহায় পরিবারগুলোর লোকজন ভীত সন্ত্রস্ত্র অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। কারণ তারা সরে অন্য কোথাও চলে যেতে চাইলেও পারছেন না। দখলদার গ্রুপ তাদের ওই বস্তি ছেড়ে যেতে দিচ্ছে না। প্রত্যেককে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। সরে গেলে পরিণতি খারাপ হবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। দখলদারদের ধারণা, ভাড়াটিয়ারা চলে গেলে সরকার জমি দখল করে নেবে। এ জমি তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।
দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সেখানেই অবস্থান করছে। নিজ নিজ ঘর চিহ্নিত করে পাশেই বসে আছেন তারা। পরিবারের সদস্যদের নিয়েই অবস্থান করছেন সেখানে। কোন কোন পরিবার ত্রিপল বিছিয়ে বসে আছে যাতে দখলহারা না হয়। আবার কেউ কেই নতুন করে ঘর তৈরি করার চেষ্টা করছেন। বাঁশ-টিন দিয়ে ঘেরা দিচ্ছে যাতে তাদের দখলে থাকে। তারা এসব করছে দখলদারদের নির্দেশেই। হুমকি দিয়ে করা হচ্ছে বলে কয়েকজন অভিযোগ করলেও নাম প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন।
জানা যায়, পুরো বস্তি এলাকাটি সরকারি জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে ভরাট করে রাজাখালী
খালের তীরে বেড়া মার্কেট এলাকায় এই বস্তি গড়ে ওঠে। শত কোটি টাকার জমি দখলে নিয়ে কয়েকশ বস্তিঘর তৈরি করা হয়েছে। প্লট বিক্রি ছাড়াও মাসে কয়েক লাখ টাকা ভাড়া আদায় করে দখলদাররা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর তীরে সরকারি জমি দখল করে গড়ে উঠে শত শত বস্তিঘর। শাহ আমানত সেতুর পূর্ব পাশে বাস্তুহারা বস্তির এক সময় নিয়ন্ত্রক ছিলেন জসিম ওরফে রোহিঙ্গা জসিম। জসিম বস্তিঘর দখল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাকে তাড়িয়ে অপর একটি গ্রুপ বস্তি দখল করে নেয়।
জানা যায়, বেড়া মার্কেট এলাকার বস্তি নিয়ন্ত্রণ করত আকতার ওরফে কসাই আকতার। তিনি ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি। সরকারি খাসজমি দখল করে নির্মিত বস্তির নিয়ন্ত্রণ আকতার হোসেনের হাতেই। এক সময় বিশাল অংশ আকতারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বছর খানেক আগে একাংশ ৫/৬ জনের কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রতি প্লট এক থেকে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করে তিনি। সরকারি জমি বিক্রি করে তিনি হাতিয়ে নেয় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে বাসা খালি করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নোটিশও দেয়া হয়েছিল। নোটিশ পেয়ে সরে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আকতার ও তার গ্রুপ তাদের সরতে দেয়নি। তারা সরে গেলে উচ্ছেদের ভয় ছিল তাদের মধ্যে।
অগ্নিকান্ডের পরও তারা অন্যত্র চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু দখলদাররা তাদের এলাকা ছাড়তে দিচ্ছে না। তাদের ঘর দখল করে রাখার নির্দেশ দিয়েছে দখলদাররা। সে কারণে নিজ নিজ ঘর দখল করে রেখেছে তারা। ঘর ছেড়ে কেউ উঠছে না।
জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, সরকারি জমি দখলকারি যেই হোক তাকে দখল ছাড়তে হবে। নিয়ম অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান চলবে। কোন ধরনের ছাড় কেউ পাবে না। সরকারি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে সে অনুযায়ী উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, বেড়া মার্কেট এলাকার বস্তিগুলোতে নিয়মিত মাদক ব্যবসা চলে আসছে। বসছে জুয়ার আসর। প্রতি রাতে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা বিকিকিনি হত সেখানে। বিভিন্ন সময় এর বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছে এলাকাবাসী।
এদিকে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাসহুদুল কবিরের নেতৃত্বে চলছে তদন্ত কার্যক্রম। এটি কোন নাশকতা কর্মকান্ড কিনা তাও খতিয়ে দেখছেন তিনি। মাসহুদুল কবির বলেন, তদন্ত কার্যক্রম চলছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, নাশকতার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে আসলে তাও দেখা হবে।
অপর একটি সূত্রে জানা যায়, অগ্নিকান্ডের আগে বস্তি এলাকায় মুখোশপড়া কয়েকজন যুবককে দেখতে পেয়েছিলেন বস্তির লোকজন। তারা ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা তাতেও সন্দেহ করছে বস্তির লোকেরা।