ফাইনালে আবাহনীর প্রতিপক্ষ তেরেঙ্গানু

24

দু’টি অসাধারণ ফ্রি কিক ও একটি পেনাল্টি কিক থেকে দর্শনীয় গোলে ব্রিটিশ মিডফিল্ডার লি টাকের দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে ভারতের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবকে হারিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ৩য় আসরের ফাইনালে উঠেছে মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু এফসি। আগামীকাল শিরোপা লড়াইয়ে তেরেঙ্গানু পরীক্ষা নেবে প্রথম আসরের (২০১৫) চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনীর।
আগের দিন পাঁচ গোলের রোমাঞ্চ ছড়ানো প্রথম সেমি-ফাইনালে ভারতের দল গোকুলাম কেরালা এফসিকে ৩-২ ব্যবধানে হারায় চট্টগ্রাম আবাহনী।
গতকাল সন্ধ্যায় বাঁচা-মরার সেমিতে ম্যাচের শুরু থেকে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে দু’দল। কিন্তু একের পর এক আক্রমণ শানালেও কেউ কারও রক্ষণ দেয়ালে ফাটল ধরাতে পারছিল না। ২১তম মিনিটে ব্রুনো সুজুকি সুযোগ নষ্ট করার পর গোলের মুখ খোলেন লি অ্যান্ড্রু টাক। ৩৯ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে এ মিডফিল্ডার যেভাবে মাটি কামড়ানো ফ্রি-কিকে গোল (১-০) আদায় করলেন, তাতে মনে হল এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে যেন স্বয়ং লিওনেল মেসি গোল করলেন মালয়েশিয়ান ক্লাবটির হয়ে!
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমতায় ফিরে মোহনবাগান। ৪৬ মিনিটে পেনাল্টি শট থেকে দলকে সমতায় ফেরান মিডফিল্ডার ফ্রান্সিসকো হাভিয়ের গঞ্জালেস মুনোজ। এ সময় তেরেঙ্গানু ডি বক্সে মোহনবাগান মিডফিল্ডার বৃত্ত প্রাঙ্করাজ ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান নেপালি রেফারি। স্পটকিকে গোল করেন ফ্রান্সিস্কো হাভিয়ের (১-১)।
১৩ মিনিট পরেই আবারও লি টাকের ভেল্কি। আবারও সেই ফ্রি-কিক থেকে করলেন গোল, সেটাও এবার ৩০ গজ দূর থেকে! মেসিকে মনে করিয়ে ডান পায়ে এমনই এক গতির সাথে সুইং মেশানো চোখ ধাঁধানো ফ্রি কিক নিলেন ব্রিটিশ মিডফিল্ডার, যাতে কিছুই করার ছিল না মোহনবাগান গোলরক্ষক দেবজিতের (২-১)।
আবারও লি টাকের গোলের জবাব গোল করেই দেন হাভিয়ের গঞ্জালেস মুনোজ। ৬১ মিনিটে সতীর্থের ফ্রি-কিক থেকে নেওয়া হেডে তেরেঙ্গানুর জালে বল (২-২) জড়িয়ে দেন এই মোহনবাগান মিডফিল্ডার।
ম্যাচের ৭৪ মিনিটে আবারও কপাল পোড়ে মোহনবাগানের। এবার সর্বনাশের নায়ক সফিক বিন ইসমাঈল। ছোটখাটো দেহের এ ফরোয়ার্ড বল পায়ে বাঁ-প্রান্ত দিয়ে এমন গতিতে ছুটেছেন যে, তাকে আটকাতে পারেনি মোহনবাগানের দুই খেলোয়াড়। ডি-বক্সের বাঁ-প্রান্ত দিয়ে শফিকের কোণাকুণি শট দেবজিতকে বোকা বানিয়ে তৃতীয়বারের মতো ঠাই নেয় জালে (৩-২)।
এরপর গোল শোধের জন্য মোহনবাগানের রক্ষণভাগও ওঠে আসে আক্রমণভাগে। সেই সুযোগে ৭৭ মিনিটে সতীর্থের লম্বা করে বাড়ানো বল নিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে মোহনবাগনের ডি-বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন ব্রুনো সুজুকি। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের সামনে তখন কেবল দেবজিৎ। কিন্তু শট নেওয়ার আগেই দেবজিৎ ফাউল করে বসেন ব্রুনোকে। স্পট কিক নেন লি টাক। ডান পায়ের শটে দেবজিৎকে আরেকবার বোকা বানাতে সময় নিলেন না তিনি। ডান পায়ে মাটি ঘেঁষা শট নিয়ে বল মোহনবাগানের জালে (৪-২) জড়িয়ে দিয়ে টানা দ্বিতীয় হ্যাট্রেিকর আনন্দে মেতে ওঠেন লি টাক।
বাকি সময় গোল শোধের জন্য মরিয়া হয়ে লড়াই করে মোহনবাগান। কিন্তু তেরেঙ্গানুর রক্ষণভাগের বাধা পার হতে পারেনি তারা। শেষ বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে উল্টো পঞ্চম গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা পায় দেবজিৎরা।
এ নিয়ে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক উপহার দেওয়া লি টাক ৬ গোল নিয়ে গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে আছেন। ৪টি করে গোল আছে তেরেঙ্গানুর ব্রুনো ও চট্টগ্রাম আবাহনীর চিনেডু ম্যাথিউয়ের।
ম্যাচসেরা লি টাকের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়া সংগঠক, সিজেকেএস সহসভাপতি আলহাজ সাহেদ আজগর চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল বশর ও হাসান মুরাদ বিপ্লব, পটিয়া পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, দক্ষিণ জেলা যুবলীগ সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান।