প্রাণ ফিরে পাচ্ছে পরিবেশ-প্রকৃতি

93

সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙছে মানুষের। ভোরের বাতাসে মিলছে শুদ্ধতার অনুভূতি। রাস্তায় নেই কোনও কর্কশ হর্ন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাজধানীবাসী যখন ঘরে, ঠিক তখনই ঢাকার প্রকৃতি আর পরিবেশে ঘটেছে পরিবর্তন। নেই তেমন ধুলোবালি। রাস্তাতেও নেই ধোঁয়া।
সকালে ঘুম ভেঙেই পাখির কিচিরমিচির শেষ কবে শুনেছেন, এমন প্রশ্নে বাসাবোর বাসিন্দা আফিফা মমতাজ জানান, আজ প্রথমবারের মতো বেশ কয়েকটি কাঠঠোকরা দেখেছেন তিনি। আর শুনেছেন পাখির কিচিরমিচির। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের জন্য ঘরে বন্দি থেকে যখন সবকিছু খারাপ লাগতে শুরু করে, তখন প্রকৃতি থেকেই আনন্দ খুঁজে নিতে হয়।
দুপুরে বাজার করতে বের হন শান্তিনগরের বাসিন্দা শাহিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়েই কর্কশ শব্দে কান ঝালাপালা করে অফিস যাওয়া আর বাসায় ফেরাই ছিল রুটিন। বাসায় বাজার লাগবে, তাই আজ বের হয়ে বাজারে যাবার পথে শান্তিনগর মোড়ে এসে অবাক হয়ে যাই। ঢাকার রাস্তায় কর্কশ শব্দ নেই, ব্যাপারটা বিস্ময়কর। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
গতকাল শনিবার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) ইনডেক্সে ১০ নম্বরে নেমে এসেছে ঢাকা। গত ছয় মাস ধরেই দিনের বেশিরভাগ সময় প্রথম স্থান দখল করে ছিল ঢাকা। সূচক ৩৯১ পর্যন্ত উঠেছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩০০-এর ওপরে গেলে তাকে দুর্যোগ অবস্থা বলে। কিন্তু শনিবার সেই সূচক নেমে হয়েছে ১২১।
বায়ুদূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম। তিনি জানান, এখনও আমরা স্বাস্থ্যকর অবস্থায় আসিনি। রাস্তায় মানুষ কমে যাওয়ার কারণে অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। কিন্তু আমাদের দেশের বাতাস স্বাস্থ্যকর হতে হলে সূচক হতে হবে ৫০-এর নিচে।
তিনি বলেন, গত ছয় মাসে বহুবার আমাদের সূচক ৪০০/৫০০ পর্যন্ত উঠেছে। সে হিসাবে আমরা এখন ভালো আছি। তিনি বলেন, এটি তো সাময়িক। আমরা তো বের হবো। এই ঘটনা দিয়ে একটি জিনিস স্পষ্ট, আমরা আমাদের নিজেদেরই ক্ষতি করে চলেছি প্রতিনিয়ত। তাই আবার যখন আমরা কাজে বের হবো, তখন যেন বিষয়টি মাথায় রাখি। আর সরকারের কাছে আবেদন থাকবে, আরও কঠোর হাতে এই দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এদিকে কক্সবাজার সমুদ্রে মানুষ নামা বন্ধের সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে দেখা যাচ্ছে ডলফিনের আনাগোনা। একইসঙ্গে নানা রকমের মাছেরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে। দেশের এই প্রাকৃতিক পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. আব্দুল মতিন বলেন, আমরা ঘর থেকে বের হচ্ছি না বলেই এই প্রাণ-প্রকৃতির দেখা পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকায় এখন শব্দদূষণ নেই, বায়ুদূষণ নেই, নেই পরিবেশদূষণ। কক্সবাজারে ডলফিনের আনন্দ দেখতে পাচ্ছি আমরা, চীনের বহু শহরে শত শত বানর এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ঘটনা থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট হয় যে মানুষের চাপে প্রকৃতি হারিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এই অবস্থা তো সারাজীবন থাকবে না। আমাদের বের হতেই হবে। কাজে যেতেই হবে। ফলে আজকের পরিস্থিতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া দরকার। আমাদের প্রকৃতি আমাদেরই বাঁচাতে হবে। তিনি বলেন, একটি টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার চাইলেই ঢাকার বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পরিবেশদূষণ কমিয়ে আনতে পারে। তার সঙ্গে চাই ব্যক্তিগত সচেতনতা।