প্রশিক্ষণও মূলস্রোতে ফেরাতে পারছে না হিজড়াদের

50

তাদের রয়েছে হস্তশিল্প, বুটিক, সেলাই ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। ৫০ দিন ধরে সাবলম্বী হওয়ার এসব প্রশিক্ষণ দিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। এছাড়া প্রশিক্ষণ শেষে মিলেছে নগদ টাকা ও সনদপত্র। তারপরও হিজড়ারা সামাজিক জীবনে মূলস্রোতে ফিরতে পারছে না। কেননা সাধারণ মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্য বা সেবা নিতে আগ্রহী না। ফলে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক অনুদানেও মূলস্রোতে ফেরাতে পারছে না হিজড়াদের।
হিজড়াদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে পূর্বদেশকে এসব কথা বলেছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ৫০ জনকে হিজড়াকে ৫০ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেককে নগদ ২৫ হাজার টাকা ও সনদপত্র দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকালে সিটি করপোরেশনের কনফারেন্স হলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে হিজড়া প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, হিজড়ারা প্রশিক্ষণ শেষে যদি একটি বিউটি পার্লার করে, তাহলে সেখানে কোনো গ্রাহক আসছে না। অন্যদিকে সেলাইয়ের দোকান দিলেও কেউ কাপড় সেলাই করতে আসে না। মানুষের মাঝে তাদের নিয়ে একটা অনীহা রয়েছে। মানুষ ধরেই নিয়েছে হিজড়ারা তোলাবাজি করে চলবে। তারাও যে মানুষ সেটা আগে আমাদের ‘মাইন্ড সেট’ করতে হবে। তাদের সুস্থ সামাজিক জীবন নিশ্চিত করতে সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন, সরকার হিজড়া সম্প্রদায়কে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে হিজড়া সম্প্রদায়ের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই স্বীকৃতির উদ্দেশ্যে হচ্ছে হিজড়া সম্প্রদায়কে স্বাভাবিক জীবন ধারায় সম্পৃক্তকরণ। দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে গতি আনায়ন করা। অর্থনীতির চলমান গতির জন্য সকল জনগোষ্ঠির সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। কোনো সম্প্রদায়কে বাদ দিয়ে কাংঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। হিজড়া সম্প্রদায়ও মানুষ। এই লক্ষ্যে বর্তমান সরকার তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে আনার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। হিজড়া ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা দিয়ে ভিক্ষাবৃক্তি থেকে সরিয়ে আনা হচ্ছে হিজড়াদের। এমনকি তাদের সন্তানদের জন্য সরকার চালু করেছে উপবৃত্তি। সরকারের এ উদ্যোগ আগামী দশ বছর চালু থাকলে দেশে কোনো হিজড়া বেকার কিংবা ভিক্ষাবৃত্তিতে থাকবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিটি মেয়র হিজড়া সম্প্রদায়ের ৯ জনকে চসিকে চাকরি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, হিজড়াদের সাথে আমরা কম বেশী সবাই পরিচিত। কিছু মানুষ হিজড়াদের সাথে মজা করতে পছন্দ করে, কেউ আবার এড়িয়ে চলে। নারীদের ক্ষেত্রে তারা হিজড়াদের রীতিমত ভয় পায়, বিশেষ করে তাদের অশোভন আচরণের কারণে।
অনুষ্ঠানে চসিক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ওয়াহিদুল আলম, সমাজ সেবা কর্মকর্তা আবুল কাশেম, আরমান বাবু, হাফেজ আমান উল্লাহসহ হিজড়া প্রশিক্ষণার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।