পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা

67

আমদানি বাড়ায় দাম কিছুটা কমলেও আবার বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, এজন্য ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে কারণ দেখাচ্ছেন খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা। কয়েকদিন বাদে গতকাল সোমবার নগরীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। একই অবস্থা ছিল ঢাকার বাজারেও।
রেয়াজউদ্দিন বাজার ও অলিগলির দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। অথচ একসপ্তাহ আগেও এ দর প্রতি কেজিতে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে।
খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর ও টেকনাফ স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। আড়তদারদের কাছে পেঁয়াজ এসেছে কম, এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার আগে মহাবিপদ সঙ্কেত জারির পর শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে কোনো জাহাজে পণ্য খালাস হয়নি। তবে রোববারই বন্দর আবার বন্দরে কাজ পুরোদমে শুরু হয়।
খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মার্কেট কাঁচামাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিচ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় হওয়ায় ডেলিভারি কম হয়েছে পেঁয়াজের। চট্টগ্রাম ও টেকনাফ বন্দরে আমদানি করা পেঁয়াজ খালাস হয়নি। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কম হয়েছে।’
গত সেপ্টেম্বরে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে; ৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজ কয়েক দিনেই পৌঁছে যায় ১০০ টাকায়। তখন সরকার মিয়ানমার থেকে আমদানি শুরু করে। এছাড়া টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি এবং আড়তগুলোতে অভিযানের পর দাম কিছুটা কমলেও পরে আবার দাম বাড়তে শুরু করে। এখন তুরস্ক ও মিশর থেকে আমদানি করে পেঁয়াজের বাজার সহনীয় করার চেষ্টা করছে সরকার। এই পেঁয়াজই আসছে জাহাজে। নতুন পেঁয়াজ আমদানির পর দাম ৮৫ টাকায় নেমে আসার আশা শোনালেও তা ঘটেনি। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের
আড়তদার ইদ্রিচ বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলাম পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮৫ টাকায় বিক্রি করব। তবে দরের ক্ষেত্রে কমিটমেন্টের সাথে কোনো মিল নেই। এর সুযোগ হয়তো খুচরা দোকানদাররা নিয়েছে।’
তবে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে সোমবার কত দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে, তা সরাসরি বলতে চাননি।
খাতুনগঞ্জের অন্য এক আড়তদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাইকারিতে ভাল মানের পেঁয়াজ ১১০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়েছিল সোমবার।
নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি করছিলেন ১২০ ও ১৩০ টাকায়। অন্যদিকে নগরীর চেরাগী পাহাড়ের লাকী স্টোরে বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি ১৪০ টাকায়। ঢাকার বাজারগুলোতেও বাড়তি ছিল পেঁয়াজের দাম।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান, গত দুই দিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩৫ টাকায় পৌঁছেছে।
চট্টগ্রামের খুচরা বিক্রেতাদের বক্তব্য, সোমবার খাতুনগঞ্জে গিয়ে তারা চাহিদা মাফিক পেঁয়াজ কিনতে পারেননি।
আড়তদার ইদ্রিচ বলেন, ঝড়ের কারণে জাহাজের পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় তাদের হাতে পেঁয়াজ কম ছিল।
গত দেড় মাসে বিদেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৬৫ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এসেছে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন।
কৃষিজাত পণ্যের ঋণপত্র খোলার পূর্বে আমদানির অনুমতি নিতে হয় চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্র থেকে। পণ্য আমদানির পর খালাসের আগেও তাদের কাছ থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হয়।
উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছে ৬৫ হাজার ৯৩০ টনের। এর বিপরীতে এসেছে চার হাজার ৮১৫ টন।
মোট ৩৯টি আমদানি অনুমতির বিপরীতে এসব পণ্য আসবে। এস আলম গ্রুপের সোনালী ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠান পাঁচটি ঋণপত্রের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করছে।
সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আসবে মিশর থেকে ৫৮ হাজার ১৮৮ টন। এছাড়া চীন থেকে চার হাজার ৫২২ টন, পাকিস্তান থেকে দুই হাজার দুইশ টন, তুরস্ক থেকে ৮২০ টন, উজবেকিস্তান থেকে আনা হচ্ছে ২০০ টন।
ইতোমধ্যে মিশর থেকে ২ হাজার ৪৪৬ টন, চীন থেকে ৮৪৭ টন, মিয়ানমার থেকে এক হাজার ২২৮ টন, আরব আমিরাত থেকে এসে পৌঁছেছে ১১২ টন।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৩৬ ঘণ্টা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রোববার দুপুর থেকে বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক হয়েছে। বিভিন্ন জাহাজে করে পণ্য আসছে এবং সেখানে বিভিন্ন কন্টেইনারে পেঁয়াজও রয়েছে।’
বুলবুল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দুই দিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পেঁয়াজ খালাস হয়নি। সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৭৫ টন পেঁয়াজ ছাড় হয়েছে। অনুমতি নেওয়া বাকি আমদানির চালান চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশে এসে পৌঁছাবে। ওইসব পণ্যের ছাড়পত্র দ্রুত দেয়া হচ্ছে।’
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ইদ্রিচ বলেন, ‘বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রবেশ করলে দাম দ্রæত অনেক কমে আসবে।’
মিশর, চীন, পাকিস্তান থেকে আসছে ৬৬ হাজার টন পেঁয়াজ : পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট কাটাতে মিশর, চীন, পাকিস্তান, তুর্কি ও উজকেকিস্তান থেকে ৬৫ হাজার ৯৬০ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) নিয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মিশর থেকে ৫৮ হাজার ১৮৮ টন, চীন থেকে ৪ হাজার ৫২২ টন, পাকিস্তান থেকে ২ হাজার ২০০ টন, তুর্কি থেকে ৮২০ টন, উজবেকিস্তান থেকে ২০০ টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।
গত ১২ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত এসব পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর কেন্দ্রিক উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান বুলবুল।
তিনি জানান, সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আনছে এস আলম গ্রæপ। মেসার্স সোনালি ট্রেডার্সের নামে মিশর থেকে ১১ হাজার টনের পাঁচটি আইপিতে ৫৫ হাজার টন মিশরি পেঁয়াজ আনবে গ্রæপটি। চীন থেকে ১ হাজার টন পেঁয়াজ আনছে চট্টগ্রামের মনির এন্টারপ্রাইজ এবং ৫০০ টন আনছে ওয়াসিফ ট্রেডিং। পাকিস্তান থেকে ৬০০ টন আনছে চট্টগ্রামের সেতারা ট্রেডিং এবং সাতক্ষীরার নূর এন্টারপ্রাইজ আনছে ৫০০ টন। মিশর থেকে চট্টগ্রামের সাউদার্ন ট্রেডিং আনছে ৬০০ টন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে ৪ হাজার ৮১৫ টন পেঁয়াজ দেশের বাজারে ঢুকেছে বলে জানান উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের এ কর্মকর্তা। এর মধ্যে মিশরের ১ হাজার ৪৪৬ টন, চীনের ৮৪৭ টন, মিয়ানমারের ১ হাজার ২২৮ টন, তুর্কির ১৮২ টন, ইউএই’র ১১২ টন পেঁয়াজ রয়েছে। খবর বাংলানিউজের
এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দামে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল। তবে পেঁয়াজের সরবরাহ ঘাটতি কমাতে মিশরসহ বিভিন্ন দেশের বড় বড় পেঁয়াজগুলো ভূমিকার রাখছে বেশ। ২০ কেজির বস্তা এসব পেঁয়াজের। ৪-৫টি পেঁয়াজেই এক কেজি। দামও ভারতীয় পেঁয়াজের তুলনায় অনেক কম।
তবে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কিছুটা সময় বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত রবিবার (১০ নভেম্বর) থেকে পুরোদমে অপারেশনাল কার্যক্রম চলছে। পেঁয়াজের কনটেইনারগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাজারে পেঁয়াজ পৌঁছাতে পারে।