পেঁয়াজের দাম তালিকায় ৬০ বিক্রি হচ্ছিল ১০৫ টাকায়

33

নগরীর খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম মূল্যতালিকায় ৬০ টাকা লিখে রাখলেও তা ১০৫ টাকায় বিক্রি করেছেন আড়তদাররা। এমন অভিযোগে গতকাল রোববার চার আড়তদারকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন তিনি।
ম্যাজিস্ট্রেট জানান, প্রতিকেজি ৪২ টাকা আমদানিমূল্য হওয়া স্বত্তে¡ও ৯০ থেকে ১০০ টাকা কীভাবে বিক্রি করবে। তারা যে পেঁয়াজ পচে যাওয়ার কথা বলছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং অযৌক্তিক। ৫ শতাংশের বেশি পেঁয়াজ পচতে পারে না।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরাতো পেঁয়াজে অতিরিক্ত লাভ করছি না। ৯০-৯৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনে ১০৫ টাকায় বিক্রি করছি। বাজারতো আমাদের হাতে নেই, আমদানিকারকের উপরই দরদাম উঠানামা করে।
অভিযানে অতিরিক্ত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির অপরাধে বেঙ্গল ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা, মেসার্স সৌমিক ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা, মেসার্স হাজী অছি উদ্দিন সওদাগরকে ৪০ হাজার টাকা ও মেসার্স খাতুনগঞ্জ ট্রেডিংকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে আরেক অভিযানে মেসার্স হাজী অছি উদ্দিন সওদাগরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ম্যাজিস্ট্রেট। জরিমানা করা প্রতিটি আড়তদার মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন।
এছাড়া মেসার্স শাহাদাত এন্ড ব্রাদার্স, সততা বাণিজ্যালয় ও মেসার্স গ্রামীণ বাণিজ্যালয়সহ বেশ কিছু আড়ত ঘুরে দেখেন ম্যাজিস্ট্রেট। এসময় তাদেরকে যথাযথ মূল্যে (৬০-৬৫) টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে ৮ জন পেঁয়াজ আমদানিকারক রয়েছেন। তবে তারা গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারির পর আর পেঁয়াজ আমদানি করেননি। কক্সবাজারের আমদানিকারকরাই মিয়ানমারের পেঁয়াজগুলো আমদানি করছেন। এর মধ্যে ঢাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী রয়েছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিভিন্ন আড়ত ঘুরে মিয়ানমারের পেঁয়াজে ৯০-১১০ টাকায় বিক্রি করতে দেখতে পাই। যা সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক। কেননা পেঁয়াজের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, এর আগের অভিযান ও কক্সবাজারের বিভিন্ন সূত্রের খবরে আমরা দেখতে পেয়েছি মিয়ানমারের প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ৪২ টাকা।
তিনি বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। ভারতের পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে বলে তারা বাজারকে অস্থিতিশীল করে রাখছে। তারা এসব পেঁয়াজ পচা আসছে বলে যুক্তি দেখাচ্ছে। তবে আমরা মাত্র ৫ শতাংশ পেঁয়াজ পচা পাওয়ার খবর পেয়েছি। কিন্তু সেটাকে কাভার দিতে গিয়ে কখনই সে দাম ৯০ টাকা হতে পারে না।
তৌহিদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বেশকিছু আড়তে অভিযান চালিয়েছি। এর মধ্যে ৪টি আড়তকে ভোক্তা অধিকার আইনে জরিমানা করা হয়েছে। আর বাংলাদেশের বড় ৫টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করছে। সেগুলো এখন সমুদ্র পথে রয়েছে। সেগুলো আসলে বাজার মূল্য অনেক কমে আসবে। তবে যারা এখন মিয়ানমারের পেঁয়াজ চড়া দামে বিক্রি করছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
খাতুনগঞ্জ পিএম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. এমদাদুল হক রায়হান বলেন, আমরা চাই না পেঁয়াজের দাম বাড়–ক। পেঁয়াজের দাম বাড়লে বিক্রি কমে যায়। আর দাম কমলেই ব্যবসার ক্ষেত্রে ভালো এবং মান অনুসারে বিক্রিও ভাল হয়।
হামিদ উল্লাহ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ পূর্বদেশকে বলেন, মিয়ানমারের পেঁয়াজগুলো বর্ডারেই ৯০ টাকার বেশি কেনা পড়ছে। তাই ব্যবসায়ীরা এখানে কম দামে বিক্রি করতে পারছে না। আর সেজন্য তাদের সাথে বসে বিষয়গুলোর সমাধান করা দরকার। আর যারা ৬০ টাকা পেঁয়াজের দর লিখে রাখছেন তা ভয়ে। তারা বুঝতে পারেননি কি করবেন। বাজারতো আমাদের হাতে নেই, আমদানিকারকের উপরই দরদাম উঠানামা করে। আমরাতো পেঁয়াজে অতিরিক্ত লাভ করছি না। ৯০-৯৫ টাকার পেঁয়াজ ১০৫ টাকায় বিক্রি করছি।
প্রশাসনের এ অভিযানে পুলিশ, র‌্যাবসহ খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।