পাহাড়ে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ ত্রাণ পাচ্ছেন না

30

চাকমা চার্কেল চিফ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় অভিযোগ করে বলেছেন, রাঙামাটিসহ পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকার কর্মহীন ও অসহায় মানুষ করোনাকালে সরকারি ত্রাণপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দুর্গম এলাকার অসংখ্য গ্রামের মানুষ আজ পর্যন্ত একেবারেই কোনো রকম সরকারি ত্রাণ সহায়তা পাননি।
তিনি বলেন, অনেক পাহাড়ি এলাকা আছে- যেগুলো ভৌগলিক কারণে দুর্গম এবং সীমান্তবর্তী, সেসব এলাকার কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে আজ পর্যন্ত সরকারি ত্রাণের একটি দানাও মিলেনি। আর যারা পেয়েছেন, সেগুলো পরিমাণে কম। ১০ কেজি চালের স্থলে পেয়েছে ৪-৬ কেজি। ত্রাণের বাকি চাল আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ চাকমা রাজার।
একই সঙ্গে করোনা শনাক্ত, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রাঙামাটিতে মেশিনসহ পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন, চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙামাটি শহরে তার রাজবাড়ির কার্যালয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব অভিযোগ ও দাবি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, পাহাড়ে করোনা শনাক্ত ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে অন্তত রাঙামাটি সদরে হলেও অবিলম্বে একটি পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন জরুরি। এখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠিয়ে পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে অনেক বিলম্ব ঘটছে। রিপোর্ট পেতে পেতে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে। কারও উপসর্গ দেখা দিলে চট্টগ্রাম গিয়ে নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। ফলে পিছিয়ে পড়া পার্বত্য অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আক্রান্তদের চিকিৎসা ও রোগী শনাক্ত নিশ্চিত করতে রাঙামাটিতে জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত আইসিইউসহ করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনের দাবি জানান চাকমা রাজা।
এ সময় উপস্থিত রাঙামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ানও একই দাবি জানান।
রাজা দেবাশীষ বলেন, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী সাজেকভ্যালি, বরকল উপজেলার ঠেগাভ্যালি, জুরাছড়ি উপজেলার ত্রিসীমান্তবর্তী এবং বিলাইছড়ি উপজেলার রাইখিয়ং ভ্যালির বহু পাহাড়ি গ্রামের মানুষ আজ পর্যন্ত কোনো রকম সরকারি ত্রাণ পায়নি। ওইসব এলাকার মানুষ সবাই জুমচাষী ও শ্রমজীবী। প্রায় আড়াই মাস ধরে তাদের কোনো আয়-উপার্জন নেই। তাদের বিপুল আর্থিক উপার্জন ক্ষতি হয়েছে। এসব দায়িত্ব তো সরকারকেই নিতে হবে। সাজেকের সীমান্তবর্তী বেটলিং পাড়ার মোট ৩৬ পরিবার এক মুঠো ত্রাণও পায়নি। সাজেকের লোকজন টাস্কফোর্সে তালিকাভূক্ত থাকলেও একবিন্দু সহায়তা পায়নি। আর এবার করোনাকালে অনেক এলাকার মানুষ যারা সরকারি ত্রাণের চাল পেয়েছে মাত্র ৪-৬ কেজি। অথচ সরকারি ত্রাণের চাল ১০ কেজি হওয়ার কথা। বাকি চাল কেউ আত্মসাৎ করছে। এ ব্যাপারে আমি সতর্ক করে দিচ্ছি। এরপরও ব্যবস্থা নেয়া না হলে এফআইআর করা হবে। জুড়াছড়ির দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারে করে নিয়ে ত্রাণ দিয়েছে শুনে আমার খুব ভালো লেগেছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোতে হেলিকপ্টারে করে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহব্বান জানান চাকমা রাজা।
তিনি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই উল্লেখ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ওইসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কের টাওয়ার স্থাপনের দাবিও জানান।
এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, ত্রাণের তেমন কোনো ঘাটতি ছিল না। দুর্গম এলাকায় বহু ত্রাণ দিয়েছি সেনাবাহিনীর মাধ্যমে। রাঙামাটি জেলায় ত্রাণ পায় নাই এমন লোক খুব কম। যদি কেউ ত্রাণ না পেয়ে থাকে, তাহলে তাদেরকে পরবর্তীতে দেয়া হবে। আর যারা এমন অভিযোগ তুলছেন, চাইলে তারাও তো ত্রাণ দিতে পারেন।