পটিয়ায় মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেট সক্রিয়

138

আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চোরের কবল থেকে বাদ যায়নি সাংবাদিক এবং পুলিশও। চোরাই মোটরসাইকেল পটিয়া শাখা রোড দিয়ে চলে যাচ্ছে বোয়ালখালীর বাপ্পী সিন্ডিকেটের কাছে। একাধিক সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পটিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে ইতোমধ্যে দ্ইু চোরকে আটক করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাপ্পী সিন্ডিকেটের কাছে পৌঁছানো গেলে অধিকাংশ চুরির বিষয়ে তথ্য মিলবে।
জানা গেছে, মোটরসাইকেল চোরদের নিরাপদ ঘাঁটি হয়েছে পটিয়া উপজেলা। দীর্ঘদিন ধরে বাপ্পী সিন্ডিকেটের সদস্যরা পটিয়া থেকে গাড়ি চুরি করে বোয়ালখালী বাপ্পী সিন্ডিকেটের কাছে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সাথে হাতবদল করে স্বল্পমূল্যে বিক্রী করা হয়।
সূত্র জানায়, চোরের খপ্পরে পড়েছেন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট ওসমান গণি, সাংবাদিক আবেদ আমিরীসহ
পটিয়া পৌর সদর, আমজুরহাট, শান্তিরহাট, কমলমুন্সিরহাট, স্টেশন রোড, ক্লাব রোড, আদালত রোড, ওয়াপদা রোড, বাসস্টেশন এলাকা থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির বেশ কিছু মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। বাপ্পী সিন্ডিকেটের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছেন পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। অভিযোগ ওঠেছে, চুরির পর ক্ষতিগ্রস্থরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তা মামলা কিংবা জিডি হিসেবেও গ্রহণ করছেন না। মোটরসাইকেল চোরদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তেমন তৎপরতা না থাকায় দিন দিন চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে।
বোয়ালখালী উপজেলার বেঙ্গুরা খিতাপচর এলাকায় রয়েছে বাপ্পী সিন্ডিকেটের বিশাল গোপন আস্তানা। পটিয়া এলাকায় চুরি হলে এসব গাড়ি প্রথমে বোয়ালখালী নিয়ে তা বিক্রী করে থাকে। সামনের ঈদকে টার্গেট করে মোটরসাইকেল চোরদের তৎপরতা বেড়েছে। সর্বশেষ চুরির ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার রাতে। পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের বিনিনিহারা এলাকা থেকে বিএনপি নেতা মঈনুল আলম ছোটনের (চট্টমেট্রো হ-১৫-১৮৪৪) মোটরসাইকেলটি চুরি করে নিয়ে যায়। এর আগে গত শুক্রবার রাতে পটিয়া থানা সন্নিকটের আদালতের রোড এলাকার জাকির টাওয়ার এলাকা থেকে পশু চিকিৎসক নুরুল আবছারের (চট্টমেট্রো হ-১৩-৯১৭২) মোটরসাইকেল এবং গত বুধবার রাতে পটিয়া ট্রাফিকের সার্জেন্ট ওসমান গণির মোটরসাইকেলটি চুরি হয়। গত বছর চুরি হয় সাংবাদিক আবেদ আমিরীর মোটর সাইকেল। এভাবে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে।
পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্র জানায়, পটিয়া ছাড়াও পাশ্ববর্তী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলায় মোটরসাইকেল চোরের সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
পটিয়ার খরনা ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের আজিজুল হক, পটিয়া পৌরসভা যুবলীগের সহসভাপতি মফিজ উদ্দিন, পটিয়া পৌর সদরের খাজা কমিউনিটি সেন্টার এলাকার আবদুর রউফ, মুন্সেফ বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন, পটিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান তামিম, পৌর সদরের কাগজী পাড়া এলাকার বিএনপি নেতা ফজলুল কাদের জুলু, পশু চিকিৎসক নুরুল আবছার, ক্লাব রোডের আলী স্টোরের মালিক নুরুল আমিনের গাড়িসহ আরো বেশ কিছু গাড়ি ইতোমধ্যে চুরি হয়েছে।
এদিকে, কিছুদিন আগে ওষুধ কোম্পানির এসিআই লিমিটেড এর রিপেজেন্টটেটিভ মোহাম্মদ পারভেজের মোটরসাইকেল চুরি হয়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। পরে তিনি পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। থানায় চুরির মামলা না হওয়ার ফলে ভুক্তভোগীরা পটিয়া শহরকে মোটরসাইকেল চোরদের জন্য নিরাপদ ঘাঁটি মনে করছেন।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন ফারুকী বলেন, হঠাৎ করে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা বেড়েছে ঠিক। ইতোমধ্যে গরু চোর চক্রের দুইজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। সিন্ডিকেট প্রধানসহ এ চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হবে।