নিমিষেই নষ্ট করে দিতে পারে আপনার মূল্যবান ডাটা

60

প্রতিদিনের মতো কম্পিউটারে কাজ করছেন। হঠাৎ দেখলেন আপনার কম্পিউটারের মনিটরে একটি মেসেজ বক্স বা একটি লাল রঙের সতর্কবার্তা দেখাচ্ছে যেখানে লিখা আছে আপনার কম্পিউটারের ফাইলগুলো এনক্রিপটেড বা লক করা হয়েছে যদি ফেরৎ পেতে চান তাহলে বিটকয়েনের মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট করতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে আপনি ধরে নেবেন আপনি র‌্যানসামওয়্যার আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
বর্তমানে যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাদের অন্যতম ম্যালওয়্যার আতঙ্ক র‌্যানসামওয়্যার। এটিতে আক্রান্ত হলে আপনার হার্ডডিস্কের মূল্যবান সমস্ত ডকুমেন্টের মায়া ত্যাগ করতে হবে কারণ এটি ফাইলকে এমনভাবে এনক্রিপ্ট করে ফেলে যার থেকে মুক্তি পাওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসম্ভব। অনেক সময় আবার টাইম লিমিট দেয়া হয় যে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পেমেন্ট না করলে আপনার ফাইলগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলা হবে কিন্তু টাকা দিলেও যে আপনার ফাইলগুলো আনলক করার কোড আপনাকে দেয়া হবে তারও কিন্তু শতভাগ নিশ্চয়তা নেই। র‌্যানসামওয়্যারের ব্যাপারটি অনেকটা আপনার ঘরে অন্য আরেকজন তালা লাগিয়ে দেয়ার মতো। এখন ঘরে ঢুকতে চাবির জন্য ওই ব্যক্তির সাহায্য নিতে হবে। এটি বিভিন্নভাবে আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে। যেমন, ইমেইলের এটাচমেন্টের মাধ্যমে অথবা কোনো সফটওয়্যারের ভিতরে। আপনি কোনোভাবে যদি ফাইলটিতে ডাবল কিøক করেন তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার হার্ডডিস্কের ফাইলগুলো এনক্রিপ্ট হওয়া শুরু করবে। ফাইলের নামের ফরম্যাট পরিবর্তন হয়ে র‌্যানসামওয়্যারের এক্সটেনশন যুক্ত হবে যা খোলার চেষ্টা করলে খুলবে না আর খুললেও এনক্রিপ্টেড ফরম্যোটে দেখাবে। এটি একই নেটওয়ার্কের অন্য কম্পিউটারকে আক্রমণ করতে পারে অর্থাৎ ওয়ার্মের মতো নিজ থেকেই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত অন্য আরেকটি কম্পিউটারে বিস্তার লাভ করতে পারে।
আমার ফ্রী ওয়ার্কশপে দেখিয়েছিলাম এটির ভয়াবহতা কতখানি। যারা এসেছিলেন আশা করি তারা এটি সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়েছেন। যদিও আমরা বর্তমানে এই র‌্যানসামওয়্যার নিয়ে আলোচনা করছি এর সৃষ্টি কিন্তু অনেক আগে থেকেই। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে জোসেফ পোপ নামের একজন ব্যক্তি ‘এইডস’ নামে একটি র‌্যানসামওয়্যার ট্রোজান তৈরি করেন। এটি ‘পিসি সাইবর্গ’ নামেও পরিচিত। এটিই সর্বপ্রথম র‌্যানসামওয়্যার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ র‌্যানসামওয়্যার পেলোড রান হওয়ার পর হার্ডড্রাইভের সকল ফাইল এনক্রিপ্ট করে ফেলত এবং কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখাত যে সিস্টেমের কোনো নির্দিষ্ট একটি সফটওয়্যারের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই সিস্টেম আনলক করতে হলে ‘পিসি সাইবর্গ কর্পোরেশন’কে ১৮৯ মার্কিন ডলার দিতে হবে। এ ঘটনার জন্য তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হলে দেখা যায় তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। কিন্তু তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে এই ম্যালওয়্যার থেকে তিনি যে অর্থ পেয়েছেন তা এইডসের গবেষণা কাজে দান করে দেবেন।
পরবর্তীতে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে অ্যাডাল এল. ইয়ং এবং মোটি ইযুং ক্রিপ্টোভাইরাল এক্সটরশন নামে আরো উন্নত ভিন্ন এনক্রিপশনের ম্যালওয়্যার তৈরি করেন। বর্তমানে সাইবার ক্রিমিনালরা ভিন্ন ভিন্ন এনক্রিপশন ব্যবহার করে এ ধরনের ম্যালওয়্যারকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে তৈরি করছে। ২০১৭ সালের ১২ মে সারাবিশ্বে যে র‌্যানসামওয়্যারটি ব্যাপক ক্ষতি করেছিল তার নাম ‘ওয়ানাক্রাই’। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশের ২ লাখ ৩০ হাজার কম্পিউটার অচল করে দিয়েছিল এটি। এই আক্রমণের পরই সাইবার জগতে র‌্যানসামওয়্যার নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং সিকিউরিটি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে সবাই।
বর্তমানে অনেক ধরনের র‌্যানসামওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। অনেক সাইবার ক্রিমিনাল তাদের নিজস্ব এনক্রিপশন ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন নামের র‌্যানসামওয়্যার তৈরি করছে। যঃঃঢ়ং://িি.িহড়সড়ৎবৎধহংড়স.ড়ৎম/ এই সাইটটিতে র‌্যানসামওয়্যার নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয় এবং র‌্যানসামওয়্যার দূর করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে টুল দেয়া আছে অথবা ইউটিউবের যঃঃঢ়ং://িি.িুড়ঁঃঁনব.পড়স/পযধহহবষ/টঈন৬১ৎঐযণুগকঁঃনগখপ৫ৎ৬-িি এই চ্যানেলটির সাহায্য নিতে পারেন। তবে যেগুলো শক্তিশালী র‌্যানসামওয়্যার সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া কিন্তু সহজ নয়। র‌্যানসামওয়্যার থেকে বাঁচতে একটাই পদ্ধতি সেটা হচ্ছে সতর্কতা। বর্তমানে কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইল ডিভাইসও র‌্যানসমওয়্যার ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত্র হচ্ছে। র‌্যানসামওয়্যার থেকে বাঁচতে যেসব সতর্কতা মানতে হবে: ই-মেইল এটাচমেন্ট খোলার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনে আপনার ফাইলটি যঃঃঢ়ং://িি.িারৎঁংঃড়ঃধষ.পড়স/মঁর/যড়সব/ঁঢ়ষড়ধফ-এ আপলোড করে যাচাই করে নিতে পারেন। ইন্টারনেট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করার আগে চেক করে নিতে হবে। সবসময় একটি ভালো মানের এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। ম্যালওয়ার বাইট নামের একটি সফটওয়্যার আছে সেটি দিয়ে স্ক্যান করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: আপনার সব ডাটার একটি ব্যাকআপ কপি রাখুন। প্রয়োজনে ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করতে পারেন। সাইবার বিশেষজ্ঞদের ধারণা যেকোনো সময় ‘ওয়ানাক্রাই’ থেকে আরো শক্তিশালী সাইবার হামলা হতে পারে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করুন সাইবার জগতে নিরাপদ থাকুন।