নানা কৌশলে ইয়াবা পাচারে সক্রিয় রোহিঙ্গারা

61

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কড়াকড়ির আরোপের মধ্যেও রাখাইন থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ইয়াবা পাচারে সক্রিয় রয়েছে। দুই দেশের সীমান্ত সংলগ্ন ক্যাম্প গড়ে উঠায় রোহিঙ্গা শিবিরে মাদকের আগ্রাসন আগের তুলনায় বেড়েছে।
স্থানীয় সিন্ডিকেটের সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক কতিপয় ইয়াবা ও মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্যাম্পের সহজ-সরল রোহিঙ্গা তরুণী ও পুরুষদের এ কাজে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, গত দশমাসে কৌশলে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে ৫০ জনের বেশি রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। সর্বশেষ গত ২০ মে টেকনাফ-২ বিজিবির সদস্যরা টেকনাফের হ্নীলা আলীখালী রোহিঙ্গা শিবিরের নূর হাওয়া (৩৫), জরিনা খাতুন (৩৫) ও সেতারা (৩০) নামে তিন রোহিঙ্গা নারীর পেটের ভেতর থেকে তিন হাজার ১৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এভাবে গত দুই মাসে ইয়াবাসহ র‌্যাব সাতজনকে, পুলিশ ১৩ জনকে, বিজিবি ১৫ জনকে এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগ ৮ জন আটক করে। এছাড়াও গত এক বছরে ইয়াবা বহন, সেবন ও কেনা-বেচার অভিযোগে ১০০টি মামলায় দেড় শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই অভিনব উপায়ে ইয়াবা বহন করছিল।
কক্সবাজারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সহকারী পরিচালক সোমেন মন্ডল বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা দিন দিন কৌশল পাল্টিয়ে ইয়াবা পাচার অব্যাহত রেখেছে। আর এসব অভিনব পদ্ধতিতে ইয়াবা বহনে বেশির ভাগ রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। গত এক বছরে কক্সবাজার জেলায় ইয়াবাসহ ৪০ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের কাছ থেকে এক লাখ ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুর জানান, রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ইয়াবা গডফাদাররা এ কাজ করাচ্ছে। যার কারণে অনেক রোহিঙ্গা ইয়াবাসহ আটক হয়ে বর্তমানে জেলে রয়েছে। এ জন্য তিনি ক্যাম্পভিত্তিক গড়ে উঠা ইয়াবা পাচারকারীদের দায়ী করেছেন।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের জানান, ইয়াবা ও মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। যার ফলে গত ছয় মাসে মাদক বহনকালে ৩০ জনের বেশি রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, কতিপয় ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের মাদক ব্যবসায় জড়িত করছে। দেশীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এসব ক্যাম্পে বসবাস করা পুরনো রোহিঙ্গারাও এর সঙ্গে জড়িত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
র‌্যাব-১৫-এর টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, গত ছয় মাসে মাদকসহ ৫১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছি। তাদের কাছ থেকে চার লাখের বেশি ইয়াবা উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় মাদক আইনে থানায় ৩৫টি মামলা রুজু করা হয়েছে। র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে অনেক ইয়াবা পাচারকারীও রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। যে কারণে শিবিরগুলোয় আমাদের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। তবে ইতোমধ্যে ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অভিযান পরিচালনার পর থেকে ইয়াবা ব্যবসা অনেকটা কমে গেছে। কিন্তু স¤প্রতি রোহিঙ্গারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের মাদক থেকে দূরে রাখতে ক্যাম্পে ক্যাম্পে মাদকবিরোধী সভা পরিচালনা করছে পুলিশ। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মাদক ব্যবসা, সেবন ও চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধ রোধে সচেতন করা হচ্ছে এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রোহিঙ্গাদের তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতার অনুরোধও জানানো হচ্ছে।