নতুন অভিযাত্রায় করবী দাশ

38

পঞ্চকবির গানে দক্ষতার জন্য বিশেষ খ্যাতি পাওয়া শিল্পী করবী দাশের এগিয়ে যাওয়ার গল্প বেশ রোমাঞ্চকর। ২০১৭ সালে স্থানীয় একটি পত্রিকায় তার উপর ‘ভাঙলো শীতঘুম : সঙ্গীতে আবার সরব করবী দাশ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের দু’বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সরব করবী বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ওপার বাংলায়ও তার গানের দ্যুতি ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন-র জাতীয় শিশু-কিশোর অনুষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতায় রবীন্দ্রসঙ্গীত ও ছড়া গানে স্বর্ণপদক পাওয়ার পর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। ’৯২ সালে রেড ক্রিসেন্ট’ সোসাইটির ৯ম জাতীয় যুব রেড ক্রিসেন্ট প্রতিযোগিতায় রবীন্দ্র ও নজরুল সঙ্গীতে স্বর্ণপদক, ’৯৩ সালে আর্য সমিতির সঙ্গীতাচার্য ‘সুরেন্দ্রলাল স্মৃতি স্বর্ণ পদক’ তার ঝুলিকে ভারি করেছে।
এরপর ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে বেতার এবং ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। বর্তমানে তিনি ‘এ’ গ্রেডের শিল্পী। সুরের আগুন সবখানে ছড়িয়ে দেওয়ার মন্ত্রে উজ্জীবিত করবী মাঝে টেলিভিশন ও মঞ্চে অনুপস্থিত থাকার পর ’১৭ সালে আবার সরব হয়ে একের পর এক অনুষ্ঠান করে চলেছেন।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ‘শিল্পী সুহৃদ সংঘ’ করবী দাশের একক সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করে টিআইসি-তে। উপচে পড়া দর্শকদের ভালোবাসায় সিক্ত হন শিল্পী। এরপর বৈশাখী টিভি’র ‘গোল্ডেন সঙ’ এবং মাছরাঙা টিভি’র বিখ্যাত ‘রাঙা সকাল’ অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করে প্রভূত প্রশংসা কুড়ান। ওপার বাংলা থেকেও তার ডাক পড়ে। শুরু আগরতলার ভুবেনশ^রী টেলিভিশনে একক সঙ্গীত পরিবেশন দিয়ে। তারপর, দুই বাংলার প্রখ্যাত তারা টিভি’র দর্শক-নন্দিত অনুষ্ঠান ‘প্রথম আলো’, গেøাব টিভিতে ‘সাঁকো’ অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেন। পেয়েছেন অসংখ্য শ্রোতার অকুণ্ঠ ভালোবাসা। তবে, শিল্পীর জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে কলকাতার আকাশবাণীতে সঙ্গীত পরিবেশন। বাংলাদেশের তথা আমাদের ’৭১ এর মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম সহযোদ্ধা আকাশবাণীর ‘মৈত্রী’ অনুষ্ঠানে গেয়ে দু’দেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক বন্ধনকে জোরালো করার পাশাপাশি দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়েছেন।
উপস্থাপনায় করবীর সমান দক্ষতা থাকলেও (২০০৪ সালে কলকাতার তারা টিভি’র ঈদের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা) সম্প্রতি তার অভিনয়ের দক্ষতাও প্রমাণিত। বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ছোটদের নাটকে নির্দেশনা প্রদান ও নিজে অভিনয় করলেও একেবারে থিয়েটার মঞ্চে উপস্থিত হবেন একথা ভাবেন নি। ’১৮ এর নভেম্বর কালপুরুষ নাট্য-সম্প্রদায় পরিবেশন করে বাদল সরকার রচিত ও নাট্যাভিনেত্রী শুভ্রা বিশ্বাস নির্দেশেও নাটক ‘যদি আর একবার’। উক্ত নাটকে করবী দাশ গুরুত্বপূর্ণ ‘বনলতা’ চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের স্বাক্ষর রাখছেন। মূলত নাট্যকার, অভিনেতা শান্তনু বিশ্বাসের অনুপ্রেরণা তাকে মঞ্চে অবতীর্ণ হতে সাহায্য করেছে।
করবী ছোটবেলা থেকেই গান করতেন। মা কৃষ্ণা দাশের কাছে ছড়াগানে হাতেখড়ি। এরপর আলাউদ্দিন ললিত কলা একাডেমিতে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেন নির্মলেন্দু চৌধুরী, পরেশ চন্দ্র কুরী, শান্তিময় চক্রবর্তী, দেবব্রত ভট্টাচার্যের কাছে।
এরপর ওস্তাদ মিহির নন্দী, অনুপম বড়ুয়ার কাছেও তালিম নেন। সঙ্গীতপ্রাণা শীলা মোমেনের তত্ত্বাবধানে পঞ্চকবি তথা রবীন্দ্র, নজরুল, ডিএল রায়, রজনীকান্ত ও অতুল প্রসাদের গানের চর্চা করেছেন দীর্ঘদিন। অন্যদিকে, দেশসেরা মিউজিক কম্পোজার বাসুদেব ঘোষের কথা ও সুরে তার দুটি গান সম্প্রতি ইউটিউবে প্রচারিত হচ্ছে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আবুল মোমেন, প্রকৌশলী স্বামী প্রকাশ ঘোষের অনুপ্রেরণা তাকে বহুদূর এগিয়ে দিয়েছে। করবী দাশ একজন সত্যিকার নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী। তার সঙ্গীত জগতের চলার পথ আগামী দিনে মৌলিক গান নিয়ে আরও মসৃণ হবে এই প্রত্যাশা করি।