নগরে ‘মন ভরে দেওয়া’ কবুতরের হাট

414

কথায় আছে ‘শখের তোলা আশি টাকা’। বিচিত্র মানুষের কত রকমের শখ। কারো শখ বড়শি দিয়ে মাছ ধরা, কারো শখ বাগান করা, আবার অনেকে শখ করে বাসা-বাড়িতে পালন করে কবুতর। এক সময় গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে কবুতর পালন করত মানুষ। ‘বাকবাকুম, বাকবাকুম’ ডাকে ডাকে মুখর থাকত গৃহস্থের বাড়ি।
আগে শহরেও শৌখিন মানুষের ঘরে দেখা যেত কবুতরের খোপ। এখন ইট-পাথরের এই শহরে বাড়িতে কবুতরের দেখা না মিললেও নগরীর দেওয়ানহাটে ‘কবুতরের হাট’ মন ভরিয়ে দেবে নাগরিকদের। এখানে শুধু ‘জালালী রসধমব’ কবুতর নয় আছে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির হাজারও কবুতর। এসব কবুতরের নামও বেশ বাহারি-যেমন সোয়াচন্দন, ময়ূরপঙ্খী, কিং কবুতর, লালসবুজ, নীলগলা, কার্জি বাংলা, গিরিবাজ, বাজরিকা। জোড়া এক হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা দাম। হাটে সবচেয়ে দামি কবুতর জাগোবিন। দাম প্রায় ৮ হাজার টাকা।
সপ্তাহের প্রতিদিন কবুতরের হাট বসে দেওয়ানহাটে। কিন্তু সোমবার আর বৃহস্পতিবার হাটের জৌলুস বাড়ে। কারণ এই দুদিন হাটে হাজারের বেশি কবুতর উঠে। দেওয়ানহাট মোড়ের পশ্চিম পাশের কোনায় এই হাট ঘিরে ক্রেতা ও দর্শনার্থীর ভিড় থাকে। হাটে প্রতিদিনই কবুতর নিয়ে মালিকরা হাজির হন। বিক্রেতাদের বেশিরভাগই শখের কবুতর বিক্রি করতে আসেন। এখানে পেশাদার কবুতর ব্যবসায়ীর সংখ্যা অতি নগন্য। কেউ কেউ আসে ব্যতিক্রমী এই হাট দেখতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতারা বেশ দরদাম করেই কবুতর কেনাবেচা করছেন। অনেকে চলার পথে হঠাৎ এমন আয়োজন দেখে অবাক হচ্ছেন। অনেকে শখের বসে দুয়েক জোড়া কবুতর কিনে নিয়ে বাসায় যাচ্ছেন।
কাজির দেউড়ির বাসিন্দা শাকিল কবুতরের হাটে এসেছেন তার পোষা কবুতর ও একটি ময়নাপাখি বিক্রি করতে। ময়নাপাখি মানুষের কথার হুবহু পুনরাবৃত্তি করতে পারে। তাই বাজারে ময়নার কদর বেশি। তার শখ কবুতর উড়ানো। তাই তিনি গিরীবাজ প্রজাতির কবুতর পালন করেন। কয়েকজোড়া কবুতর বিক্রির পাশাপাশি আট হাজার টাকায় ময়নাটি বিক্রি করেন তিনি।
শাকিল বলেন, ‘আমি শখ করে কবুতর পুষি। আকাশে নতুন কবুতর উড়াতে বেশি ভালো লাগে। যেসব কবুতর কম উড়তে পারে সেগুলো বিক্রি করে দিই।’
সূর্য তখন ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। কবুতরের হাট তখন ক্রেতা-বিক্রেতায় ভরপুর। বাজারে হরেক প্রজাতির কবুতর উঠেছে। এক বিক্রেতা মাফেট নামের কবুতরের দাম হাঁকালেন ৩ হাজার টাকা, আওয়াল দুই থেকে আড়াই হাজার। সোয়াচন্দন তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল, হলুদ ও কালো সিরাজের দাম ৩ হাজারের বেশি। কিং কবুতর ৫ হাজার, ময়ূরপঙ্খী ২ হাজার, গিরিবাজ ২ হাজার টাকায় বিকিকিনি হচ্ছে। এছাড়াও বাজরিকাসহ আরো অনেক সাধারণ কবুতরের দাম পাঁচশ থেকে এক হাজারের মধ্যে রয়েছে।
বাজারে সবচেয়ে দামি কবুতর হলো জাগোবিন। বিক্রেতা যার দাম ধরেছে ৮ হাজার টাকা। এরপরেই থাকা আমেরিকান পেন্টেডের দাম উঠেছে ৬ হাজারের কাছাকাছি।
কবুতর পোষা শুধু শখের কাজ নয়, এতে মানুষের জীবপ্রেম বাড়ে। অবসর সময় কাটানোর একটি সুন্দর মাধ্যম হলো কবুতর পোষা। এমনই মন্তব্য করলেন সল্ট গোলা ক্রসিং থেকে কবুতর কিনতে আসা সোহেল। তিনি আরো বলেন, আমার বয়স যখন ১২ বছর তখন থেকে কবুতর পালন শুরু করি। বর্তমানে আমার বাসায় বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর আছে। চাকরি শেষে বাসায় ফিরে কবুতর নিয়ে ব্যস্ত থাকি। অনেকে বাণিজ্যিকভাবেও কবুতর পালন করে আসছেন বলেও জানান তিনি।