নগরীতে বাড়ছে খুন

88

নগরীতে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত এক সপ্তাহে চারটি হত্যাকাÐের ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে তিন মাসে ২০টিরও বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ১০টি।
জানা যায়, গত শনিবার রাত ১০টার দিকে বাকলিয়া থানার বজ্রঘোনা এলাকার মদিনা মসজিদের পাশের একটি বাসায় গুলিতে খুন হয়েছেন এক নারী। তার নাম বুবলী আক্তার (২৮)। ভাইয়ের দিকে বন্দুক তাক করা সন্ত্রাসীকে আটকাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান এ নারী।
জানা যায়, বুবলী কয়েক দিন আগে বাবার বাড়ি বজ্রঘোনার এই বাসায় বেড়াতে আসেন। শাহ আলম নামে এলাকার এক সন্ত্রাসীর সঙ্গে হাছান নামে তাদের এক আত্মীয়ের বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে শাহ আলম রাতে হাছানকে খুঁজতে বুবলীদের বাসায় আসে। তাকে না পেয়ে সে বুবলীর ভাই রুবেলের দিকে বন্দুক তাক করে। এ সময় বুবলী তাকে আটকাতে গেলে গুলি ছুড়ে শাহ আলম।
এর আগে গত শুক্রবার একদিনেই দু’টি হত্যাকাÐের ঘটনা ঘটে। এদিন সন্ধ্যায় ইফতারের আগে আগে উত্তর কাট্টলীর বড় কালীবাড়ি এলাকায় মাদকাসক্তের দায়ের কোপে নিহত হয়েছেন এক বৃদ্ধা। নিহত নারীর নাম সন্ধ্যা রানী (৬০)। সন্ধ্যায় সত্যজিত নামে এক মাদকাসক্ত হঠাৎ দা নিয়ে নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে আসে এবং রাস্তায় লোকজনকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। এসময় এ বৃদ্ধা মারা যান। একইদিন মুরাদপুর পিলখানা এলাকায় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে বখাটের ছুরিকাঘাতে এক পান দোকানির মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মোস্তাক আহমেদ (৪৫)।
জানা যায়, এলাকায় আড্ডা দেওয়া নিয়ে এদিন সন্ধ্যায় রাব্বী নামে এক তরুণসহ স্থানীয় কয়েকজন বখাটের সঙ্গে মোস্তাকের ছেলে নাঈমের ( ১৮) কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে রাত ৯টার দিকে রাব্বী দলবল নিয়ে আবার পিলখানা এলাকায় আসে এবং নাঈমকে মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে মোস্তাক ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে রাব্বীর সঙ্গে থাকা শাহাদাত নামের এক যুবক মোস্তাকের বুকে ছুরি মারে। এতে তিনি মারা যান।
বুধবার রাতে হালিশহর রামপুরা নয়াবাজার এলাকার একটি বাসা থেকে ধ্রুব মজুমদার (২৮) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জানা যায়, ওই ভবনে বেশকিছু ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া থাকেন। সেখানে ৮ নম্বর রুমে ধ্রæব তার এক ভাগ্নেকে নিয়ে থাকতেন। তাকে কেউ খুন করতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।
সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, হত্যাকাÐে জড়িত আসামিদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, এসব হত্যাকাÐ বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বদ্ধ পরিকর।
এর আগে গত ৭ এপ্রিল বক্সিরহাট এলাকায় খুন হন স্বর্ণ দোকানের এক কর্মচারী। তার নাম পুষ্পল চন্দ্র (৩০)। ক্রিকেটে জুয়া নিয়ে সহকর্মীদের সাথে বিরোধের জের ধরে খুন হন তিনি। এর আগের দিন রাতে বাকলিয়ায় এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এলাকার কথিত ‘বড় ভাই’ হিসেবে কিশোরদের মধ্যে প্রেম সংক্রান্ত বিরোধ মেটাতে গিয়ে আরেক ‘বড় ভাই’য়ের গুলিতে ওই যুবক খুন হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার নাম লোকমান হোসেন (৩০)। একইদিন বিকালে খুলশী থানাধীন রেলওয়ে জাদুঘরের পাশ থেকে জানে আলম (৪৩) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে ভাগিনার হাতে তিনি খুন হন।
জানা যায়, গত তিন মাসে খুন হয়েছেন ২০ জন। এরমধ্যে অজ্ঞাতনামা লাশ মিলেছে ১০টি। যাদের পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ সময়ে বায়েজিদে স্বামীর হাতে খুন হন স্ত্রী। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ খুনের ঘটনা ঘটে। হালিশহর থেকে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পতেঙ্গায় এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। অক্সিজেন এলাকায় খুন হন এক যুবক।
জানা যায়, অধিকাংশ হত্যা মামলার আসামি ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। অজ্ঞাত সাত খুনের ব্যাপারে পুরোটাই অন্ধকারে পুলিশ। নিহতদের পরিচয়ও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।