ধর্ষণের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি

45

ধর্ষক ও যৌন নিপীড়কদের সর্বোচ্চ শাস্তি দ্রুততম সময়ে নিশ্চিত করার জন্য বিচারের সময় বেঁধে দিয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি এসেছে রাজধানীতে গণপদযাত্রার এক কর্মসূচি থেকে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গৌরব ৭১ গতকাল শুক্রবার ‘যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণবিরোধী’ এই গণপদযাত্রার আয়োজন করে। ধর্ষকের ফাঁসির দাবি নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পূর্নিমা ফাউন্ডেশন ও চেতনা পরিষদ। বেলা সাড়ে ১১ টায় শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে এই গণপদযাত্রা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতাধিক মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’ স্লোগান ধরেন।
গণপদযাত্রা শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘এ অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করতে হলে প্রচলিত আইনে এটি সম্ভব নয়। যার কারণে আমরা বলছি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে’।
বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার শেষ করার জন্য একটি সময় বেঁধে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটি ৩০ দিন হোক, ৬০ দিন হোক বা ৯০ দিন হোক। এর মধ্যে এই বিচারের প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এটিই আমাদের দাবি। আরেকটি দাবি হলো- এই নির্যাতনের শিকার হলো নারী। অথচ নারীকে পুলিশি তদন্তসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যে হয়রানির শিকার হতে হয়, তার জন্য আমরা মনে করি যে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার সকল ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হোক’। খবর বিডিনিউজের
বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে দোষী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। এর পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই অর্থ দন্ডের বিধান আছে।
এ আইনের মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সাত দিন থেকে এক মাস এবং মামলা নিষ্পত্তির জন্য একশত আশি দিন (ছয় মাস) সময় বেঁধে দেওয়া থাকলেও বাস্তবে ওই সময়ের মধ্যে রায় দেওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের এক একটি ঘটনা কিছু দিন পর পর সারা দেশকে নাড়া দিয়ে গেলেও এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির নজির কম।
ধর্ষণের বেশিরভাগ মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় ধামা চাপা পড়ে যায়। তাছাড়া ঠিকমত ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া, সামাজিক জড়তা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপসহ নানা কারণে বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ১৭ হাজার ২৮৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হলেও তার মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ৪৩০টি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। নিম্ন আদালতে এসব মামলায় ১৭ জনকে মৃত্যুদন্ড, ৮০ জনের যাবজ্জীবনসহ ৬৭৩ জনের সাজা হলেও বাকি মামলার আসামিরা বিচারের বাইরেই থেকে গেছে।
গণপদযাত্রা শেষে গৌরব একাত্তরের সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন ঘোষণা দেন, ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর জন্য দায়ী সবাইকে আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে আগামি সপ্তাহে শাহবাগ থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত গণপদযাত্রা করবেন তারা। তিনি বলেন, ‘আজকে আমার মনে হয় প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ধর্ষকদের নিরাপদ আশ্রয়। এইসব প্রতিষ্ঠানে আমাদের বোনেরা নিরাপদ নয়। তাই আমার মনে হয়, মা-বোনদের নিরাপদ রাষ্ট্র দিতে গেলে আমাদের রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই’।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষের যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় ফেনীর সোনাগাজীর আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। বুধবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ওই কিশোরী।
পূর্ণিমা ফাউন্ডেশনের সভাপতি পূর্ণিমা রানী শীল বলেন, ‘নুসরাতের মৃত্যুর জন্য দায়ী অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ তার সহযোগীদের আমরা আইনের কাঠগড়ায় দেখতে চাই। এবং তিন মাসের মধ্যে এই বিচারের রায় চাই’।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের জয়ের পর ধর্ষণের শিকার হন পূর্ণিমা। দশ বছর পর সেই মামলার রায়ে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয় আদালত।
পূর্ণিমা বলেন, ‘ফাঁসিটাই আমাদের কাম্য। আমরা ফাঁসি ছাড়া অন্য কিছু চাই না। নয়ত আমাদের হাতে তুলে দিন, আমরা পুড়িয়ে মারব, আমরা পুড়িয়ে মারার জন্যই রাস্তায় নেমেছি’।
অন্যদের মধ্যে চেতনা পরিষদের সভাপতি জাহিদ সোহেল এই কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন।