দেখতে কেমন ছিল বিশ্বের প্রথম ওয়েব পেজ

103

ইন্টারনেটে ঢুকলেই আপনার প্রয়োজন হয় যে তিনটি অক্ষর সেগুলো হচ্ছে থ্রি ডব্লিউ অর্থাৎ ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ…। গতকাল ১২ মার্চ ছিল ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের ত্রিশ বছরপূর্তী। তিন দশক আগে সেটিতে কোনো রং ছিল না, ছবি ছিল না, ছিল না ভিডিও। এমনকি কোনো একটা গ্রাফিক্স-ও ছিল না সেই পেজে। ওই পেজে যা ছিল তার সবই মূলত ছিল টেক্সট। সেই জায়গা থেকে শুরু করে আজ ওয়েব এগিয়েছে বহুদূর। কিন্তু প্রথমবার যখন চালু হলো, এই ওয়েব পেজটা দেখতে আসলে কেমন ছিল?
ওয়াল্ড ওয়াইড ওয়েব-এর জন্ম হয়েছিল ১৯৮৯ সালের ১২ মার্চ ইউরোপিয়ান ওরগানাইজেশান ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে। এটির প্রধান কার্যালয় ছিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে।
তখন সিইআরএন ছিল অসংখ্য বিজ্ঞানীর একটি কমিউনিটি। তাই শতাধিক দেশের প্রায় ১০ হাজার বিজ্ঞানীর এক বিরাট পরিমÐলের মধ্যে যেকোনো উপায়ে একটি কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার ছিল।
প্রথম ওয়েব পেজের ¯্রষ্টা ছিলেন টিম বার্নারর্স-লি। তিনি মূলত ছিলেন একজন ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার ও ফিজিসিস্ট। সে সময় সহজে ও নিরাপদে ডাটা আদান-প্রদানের জন্য ইনফরমেশান ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এর জন্য লি প্রস্তাব করেছিলেন। সেই প্রস্তাবটিকে বার্নার্স লি’র উর্ধতন কর্মকর্তা অস্পষ্ট, তবে ইন্টারেস্টিং বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বর্ধিত ও সমৃদ্ধ হতে-হতে সেই ওয়েবই এখন একটি বিরাট প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
৩০ বছর আগে বার্নার্স-লি নিজের কম্পিউটারে তার নিজের আবিষ্কার নেক্সট কম্পিউটার বিষয়ে কাজ করছিলেন। নিজের সেই কাজকে হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল (এইচটিটিপি) হিসেবে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। অতি সামান্য এক আইডিয়া থেকে তিনি শুরু করেছিলেন, ইনফরমেশান মেনেজমেন্ট: এ প্রপোজাল।
১৯৮৯ সালের এক বছর পর, ১৯৯০ এর ডিসেম্বরের ২০ তারিখে সিইআরএন এটিকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ কাজে ব্যবহার শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে অগাস্ট মাসে সেটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য।
১৯৯৩ সালের ৩০ এপ্রিলে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব সফটওয়্যারকে সিইআরএন পাবলিক ডোমেইনে রেখে দেয় এবং সেটিকে সহজে বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি ওপেন লাইসেন্স নিয়ে কাজ শুরু করার ব্যাবস্থা রাখা হয়।
সেই সময়ে উইন্ডোজ বা গুগল ক্রম ছিল না। এমনকি ব্যক্তিগত কম্পিউটারও খুঁজে পাওয়া বিরল ব্যাপারই ছিল। আর এই ইন্ডাস্ট্রি বা প্রযুক্তির বাণিজ্যিক পসারের দিকটা ছিল বেশ জটিল আর কম আকর্ষণীয়।
ইন্টারনেট তখন ছিল ইমেল চালাচালির বিষয়মাত্র। তখন ইন্টারনেট সার্ফ করার লাইনটা কানেক্ট হতো এনালগ টেলিফোন লাইন মারফত। ফলে লাইন পাওয়া ছিল বিরাট ধৈর্যের পরীক্ষা। বর্তমান জামানায় আমরা ব্যবহার করছি থ্রিজি ও ফোরজি। কিন্তু এরপরও সংযোগে আধা সেকেন্ড দেরী হলে আমরা অস্থির হয়ে ওঠি। প্রযুক্তির দুনিয়াটা ভীষণ দ্রুতলয়ে পাল্টেছে। এতো দ্রুত এর পরিবর্তন ঘটেছে যে, আমরা ভুলেই গেছি অতীতে তা কত ধীরলয়ের ছিল।
১৯৮৯ সালে সেই ওরিজিনাল পেজটাতে কোনো অ্যাড্রেস বার ছিল না। কোন ছবি বা কোন প্রকারের কোনো শব্দ-ও ছিল না। কিন্তু সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত তা অনেক বদলে গেছে: হাইপারটেক্সট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ বা এইচটিএমএল-এর দ্রুত বিস্তার ঘটেছে।
হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল বা এইচটিটিপি-এর এতো বদল ঘটেছে যে এর প্রথম সংস্করণের সাথে বর্তমানের সংস্করণের কোনো মিলই খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
সার্চ এঞ্জিন আর ওয়েব ব্রাউজারগুলোও ক্রমাগত পরিমার্জন ও আধুনিকায়নের ভেতর দিয়ে গেছে। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে বর্নার্স-লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কনসোর্টিয়াম বা ডাব্লিউথ্রিসি সৃষ্ট করেন। এটিই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব-এর প্রধান আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান।

পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ভারতীয়
সিনেমা, ক্ষতি কার?
বিবিসি বাংলা
কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থা তৈরি হবার ফলে পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক জগতে অন্তত একটা ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ সেদেশে ভারতীয় সিনেমা ও টিভি চ্যানেলগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। এটা হয়তো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে খুবই সহজ, কিন্তু একটা সন্দেহও দেখা দিয়েছে যে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ ভুল জায়গায় আঘাত হেনেছে কিনা। কারণটা হলো, ১৯৪৭ সাল থেকে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে যতই শত্রুতা-বৈরিতা থাকুক, পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে বলিউড-প্রীতি কিন্তু চিরকালই অটুট রয়ে গেছে।
কিন্তু ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গী হামলার জবাবে ভারত যখন পাকিস্তানের ভেতরে বিমান হামলা চালালো এবং পাকিস্তান তার জবাবে ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করলো- তখন পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ একটা বাড়তি পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে সেদেশে বলিউড ছবি প্রদর্শন বন্ধ করে দিল, যেমনটা আগেও অনেকবার হয়েছে। তবে মনে রাখা দরকার- প্রথম নিষেধাজ্ঞা কিন্তু আরোপিত হয় ভারতেই।
কাশ্মীর আক্রমণের পর সর্বভারতীয় সিনে ওয়ার্কার্স সমিতি পাকিস্তানি অভিনেতা-কলাকুশলীদের বলিউডে কাজ করার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তার জবাবেই পাকিস্তানের পাল্টা ব্যবস্থা। এর আগে ২০১৬ সালেও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ঘটনাবলীর সময় পাকিস্তানের ফাওয়াদ খানের বলিউড ছবিতে অভিনয় নিষিদ্ধ করা হয়।
পাকিস্তানের চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি বলেছে, তারা বলিউড ছবি মুক্তি দেয়া নিষিদ্ধ করছে। মার্চ মাসে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত আরেক কাঠি এগিয়ে এক রুলিং দিলেন যে পাকিস্তানের কোন টিভি চ্যানেলে কোন ভারতীয় কনটেন্ট সম্প্রচার করা যাবে না। এর আওতায় পড়েছে ভারতীয় ফিল্ম, বিজ্ঞাপন এবং টিভি সিরিয়াল।
বলা বাহুল্য, এই পদক্ষেপ অনেকের সমর্থনও পেয়েছে – যারা মনে করেন, যে দেশ পাকিস্তানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে, কী করে তাদের সিনেমা-নাটক পাকিস্তানে মুক্তি পেতে পারে? কিন্তু এর একটা বিপরীত পক্ষও আছে। পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে একটা বড় অংশ আছে – যারা মনে করে ভারতীয় সিনেমা-নাটকে তারা যে বিনোদন পান, তা এই নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করার যে দেশাত্মবোধ- তার চেয়ে কম নয়।
যেমন ফিল্মের পোকা আলি শিওয়ারি। ভারতের সিনেমা তাকে এতই অনুপ্রাণিত করেছে যে তিনি এখন চলচ্চিত্র অধ্যয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি বড়ই হয়েছি শাহরুখ খান, সালমান খান, আর আমির খানের ছবি দেখে।
সাংবাদিক রাফাই মাহমুদ বওলন, পাকিস্তানে সিনেমা হল আছে প্রায় ১২০টি এবং প্রতিটি ছবি মোটামুটি দু’সপ্তাহ ধরে প্রদর্শিত হয়। সুতরাং একটা হলকে ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে বছরে অন্তত ২৬টা ছবি দেখাতে হয়। কিন্তু পাকিস্তানের নিজস্ব যে চলচ্চিত্র শিল্প তাতে বছরে মাত্র ১২ থেকে ১৫টি ছবি তৈরি হয়।
আরেকজন সাংবাদিক হাসান জায়দী বলছেন, বাস্তবতা হচ্ছে এই যে পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পের ৭০ ভাগ রাজস্বই আসে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনের মাধ্যমে। ভারতীয় ছবির ওপর নিষেধাজ্ঞা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, কারণ এখানকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বলিউডকে ছাড়া টিকে থাকতে পারবে না।
এর আগেও পাকিস্তানে বলিউডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সবচেয়ে দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা ছিল ১৯৬৫ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ৪০ বছর স্থায়ী। কিন্তু তা পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে ধস নামায়, শত শত সিনেমা হল পরিণত হয় শপিং মল বা বিয়ের অনুষ্ঠানস্থলে। এ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর পাকিস্তানে চলচ্চিত্র শিল্প উঠে দাঁড়াতে শুরু করে।
পাকিস্তানি চলচ্চিত্র প্রযোজক নাদিম মান্ডভিওয়ালা বলছেন, তিনি আশা করেন এ নিষেধাজ্ঞা হবে সাময়িক এবং শুভবুদ্ধিরই জয় হবে।