দুদকের জালে ফেঁসে যাচ্ছেন অনুপ বিশ্বাস

168

ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও যেমন নামডাক তেমনি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবেও। মাদক ব্যবসায় লাইসেন্স থাকলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বাংলা মদ বিক্রি করেন। মদ পানের অনুমতি নাই এমন সব ব্যক্তিরাই তার প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক। আর এ ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ-বৈভবের মালিক হয়ে বনে গেছেন সমাজপতি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে সমাজের উন্নয়নের কথাও ভাবছেন। তিনি ফিরিঙ্গিবাজারের প্রখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী অনুপ বিশ্বাস। যার প্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েকবার অভিযান চালালেও নাগাল ছুঁতে পারেনি র‌্যাব। এবার তার সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে তাকে নোটিশ করে সম্পদ বিবরণী দাখিলেরও নির্দেশনা দিয়েছে দুদক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনুপ বিশ্বাসের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তাকেও সম্পদ বিবরণী জমা দিতে বলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে আমরা তা খতিয়ে দেখছি। কিছুটা সত্যতাও মিলেছে।’
দুদক সূত্র জানায়, করোনার আগেই অনুপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানকালে অবৈধ সম্পদের হদিস মিলে। দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে আয়কর নথি ও ব্যাংক জমার তথ্য চেয়ে অনুপ বিশ্বাসকে দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে চিঠিও দেয়া হয়। পরে অনুপ বিশ্বাসের কাছ থেকে কিছু তথ্য নেয় দুদক। তবে এখনো কোন ধরনের কাগজপত্র দাখিল করেননি তিনি। তার দাবি, দ্বিতীয় দফা দুদক থেকে তার সাথে কোনরূপ যোগাযোগ করা হয়নি।
অভিযুক্ত অনুপ বিশ্বাস পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমার কাছ থেকে তথ্য চেয়েছিল দুদক। আমি সব রেডি রেখেছি। সব ক্লিয়ারও আছে। তারা আমাকে পরে জানাবে বলছে। আগে ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট কপি, দুই ছেলের দার্জেলিং লেখাপড়ার কাগজপত্রগুলো জমা নিয়েছিল। বাকিগুলো পরে ডেকে চাইবে বলেছে। আমার কোন অবৈধ সম্পদ নেই। দুদক তল্লাশি করুক। এতে আমার আপত্তি নেই। আয়করের বেলায় আমি ও আমার স্ত্রীর হিসাব সবসময় ক্লিয়ার রাখি।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় স্থাবর সম্পদ হিসেবে তার নিজের নামে তিনটি ৫তলা ভবন ও স্ত্রীর নামে দুটি ৫তলা ভবন রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন অনুপ বিশ্বাস। তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৩০ লাখ ২৭ হাজার ৮৮৪ টাকা। তন্মধ্যে বাড়ি, দোকান, এপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫৩ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় দেখিয়েছেন ২০ লাখ ৯৪ হাজার ৩৩১ টাকা। এর বাইরেও বেশ কিছু অবৈধ সম্পদ থাকার বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে দুদক।
সূত্রগুলো জানায়, এতসব সম্পদ অর্জনের পিছনে চাবিকাঠি হিসেবে ব্যবহার করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদিত ‘ফিসারিঘাট কান্ট্রি স্পিরিট শপ’ নামে লাইসেন্স। একটি কক্ষ ও নির্দিষ্ট সীমানায় এই লাইসেন্সের বিপরীতে ব্যবসা করার নিয়ম থাকলেও তিনি তার অপব্যবহার করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানে যাওয়া গ্রাহকদের মধ্যে লাইসেন্সধারী মাদকসেবীদের চেয়ে লাইসেন্সবিহীন মাদকসেবীই বেশি। এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন কিছু অভিযোগ পেয়ে বিভিন্ন সময় র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটকও করেন। কয়েক হাজার লিটার চোলাই মদও জব্দ করেন। তবে প্রত্যেক বারই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান অনুপ বিশ্বাস। ২০১৫ সালের চসিক নির্বাচনে ‘অনুপ বিশ্বাস এন্ড ব্রাদার্স’ এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট ব্যবসার উল্লেখ করলেও এবার একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা দেখিয়েছেন মৎস্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ আছে, নিজেকে কখনো ক্রীড়া সংগঠক, নাট্যকার পরিচয় দিয়ে বেড়ান অনুপ বিশ্বাস। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসনের মানুষের সাথে সখ্যতা বাড়ান। পরে তাদের সাথে যোগসাজশ করে চোলাই মদ বিক্রি করেন নিয়মিত। নানা ব্যবসার ধরন দেখালেও মাদক বেচাতেই ‘ছক্কা’ মেরেছেন অনুপ বিশ্বাস।
তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চোলাই মদ বিক্রি হয় না জানিয়ে অনুপ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি সরকারকে রাজস্ব দিই। আমাকে জেলে ঢুকিয়ে রাখলে সরকারকে দশলাখ টাকা প্রতিমাসে রাজস্ব কে দিবে। সপ্তাহে তিনদিন হিসেবে প্রতিমাসে ১২দিনে রাজস্ব দিতে হয় দশ লক্ষ টাকা। আমি নির্বাচন না করলে কেউ আমার দোষ খুঁজতো না। আমার সব তদন্ত করলে আমি কতটুকু পরিষ্কার আছি সেটি নিজেও নিশ্চিত হতে পারবো। দুদক আমার কোন সমস্যা পেলে যে শাস্তি দিবে মাথা পেতে নিব।’