তেলের বাজারেও নায়ক পুতিন!

43

দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমাতে এর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সৌদি যুবরাজকে চাপ দিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্ত এক ঘোষণাতেই ট্রাম্পের সে আশায় পানি ঢেলে তেলের বাজারেও নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংস্থা ওপেক-এর আনুষ্ঠানিক কোনও সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করেই সম্প্রতি সংস্থাটির তেল উত্তোলন কমানোর ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
পুতিনের ওই ঘোষণা অবশ্য ওপেকের কিছু সদস্য দেশকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। কেননা তখনও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার টেবিলে পর্যন্ত বসেনি তেল উৎপাদক দেশগুলোর সংস্থাটি। সদস্য না হয়েও ওপেক-এর নীতিনির্ধারণী বিষয়ে পুতিনের এমন ঘোষণা শঙ্কিত করে তোলে সদস্য দেশগুলোকে। কেননা, এক সময় তেলের বাজারে যে দেশটিকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হতো তারাই এখন ঠিক করে দিচ্ছে তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংস্থার নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত কী হবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, তেলের দাম নির্ধারণে ভারসাম্য রক্ষার মতো বিষয়ে ওপেক-কে সহায়তা দিতে পারে মস্কো। কেননা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরব এবং দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেতা এমবিএস-কে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ভেনেজুয়েলা ও ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের বাজার স্বাভাবিক রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। ট্রাম্পের দাবি, উৎপাদন ২৫ শতাংশ বাড়ানোর মাধ্যমে যেন তেলের দাম আরও কমানো হয়। বিষয়টি নিয়ে ওপেক-এর নেতৃস্থানীয় দেশ সৌদি আরবকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। আগামী বছর দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে নামবেন ট্রাম্প। কম দামে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল কিনতে সক্ষম হলে বিষয়টি নিজের কৃতিত্ব হিসেবে নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যবহার করতে চান তিনি। অর্থাৎ, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কেমন হবে; তা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও অন্যতম নিয়ামকে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প যতই চেষ্টা করুন না কেন দাবার গুটি ফেলে যেন বৈশ্বিক তেলের বাজারের মূল ব্যক্তিকে পরিণত হয়েছেন পুতিন।
উৎপাদন কমানোর পুতিনের ঘোষণায় খুশি নয় মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ইরান। দেশটির তেলমন্ত্রী বিজান জানগানেহ ওই ঘোষণার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ওপেকের মৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে। তেল উৎপাদন ইস্যুতে সৌদি আরবের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতায়ও আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। পরে অবশ্য ওই সমালোচনা থেকে সরে গিয়ে তিনি বলেন, ওপেক প্রতিনিধিদের সম্মেলন তেহরানের জন্যও ইতিবাচক ছিল। এই সম্মেলনে আমাদের প্রত্যাশা অর্জিত হয়েছে।
ওপেক-এর সদস্য দেশগুলোর ওই সম্মেলনে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা ছিল মূলত পুতিনের ঘোষণারই প্রতিধ্বনি। বিশ্ববাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত তেলের সরবরাহ কামানোর সিদ্ধান্তে উপনীত হয় ওপেক। ১ জুলাই ভিয়েনায় ওপেকভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন সংস্থাটির মহাসচিব। তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের সরবরাহ সীমিত রাখার মেয়াদ ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়ানোর একমত হয়েছে সদস্য দেশগুলো। এর আগে রাশিয়ার জ্বালানি মন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক বলেন, তার দেশ তেলের উৎপাদন না বাড়ানোর পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক তেলের বাজার থেকে ভেনেজুয়েলা ও ইরানকে দূরে রাখতে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জরুরি বটে। তবে দেশ দুটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকার ফলে যে সংকট তৈরি হবে তাতে করে দাম বাড়লে লাভবান হবে উৎপাদক দেশগুলোই। এটা ওপেক এবং রাশিয়া উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। ওপেকের সদস্য না হলেও রাশিয়াও তেল উৎপাদনকারী দেশ।
ওপেকের সাম্প্রতিক এই সম্মেলনে সংস্থাটির ওপর রাশিয়ার কর্তৃত্ব স্পষ্ট। তাহলে কী পুতিনই ওপেকের নতুন বস? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সংস্থার সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ বলেন, ‘আমার মনে হয়, রাশিয়ার প্রভাবকে স্বাগত জানানো উচিত।’