তথ্য প্রযুক্তির কারণে বইপড়া কমছে এ কথা ঠিক নয়

67

গত এক দশক ধরেই চারদিকে একটি কথা উঠছে-তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির কারণে মানুষের পড়ার অভ্যাসে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সে কথার পেছনের যুক্তি হলো হাতে হাতে স্মার্টফোন চলে আসায় মানুষ এখন ইচ্ছে করলেই মুহূর্তের খবর মুহূর্তেই হাতের মুঠোই পেয়ে যাচ্ছে, বইপত্রও ঢুকে পড়েছে অনলাইনে। এ অবস্থায় মানুষ ছাপা বই পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে, বিশেষ করে ‘অনলাইনের যুগে’ তরুণ প্রজন্ম এতই ‘অস্থির প্রকৃতির’ হয়ে পড়েছেন যে, তারা সময় নিয়ে কিছু পড়ার মতো ধৈর্য্য ধারণ করছেন না! এ অবস্থায় ছাপা বই কিংবা তারুণ্যের পড়া ‘কমে যাওয়া’ নিয়ে দুটিরই ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিন্তাবিদরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু এ কথার মোটেও ভিত্তি নেই, এ অভিযোগ তথ্যভিত্তিক নয় বলেই মনে করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, ত্রিশাল কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, বর্তমান প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর মোহীত উল আলম।
ইংরেজির সাহিত্যের শিক্ষক মোহীত উল আলম বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সদর্পে বিচরণ করেন, ইতোমধ্যে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪৫টি। এই বিদগ্ধ লেখকের মতে, ‘তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির কারণে মানুষের বইপড়ার প্রবণতা কমে যাচ্ছে কিংবা তরুণ প্রজন্ম বই পড়া কমিয়ে দিচ্ছে এ কথাটি তথ্যভিত্তিক নয়, অনুমাননির্ভর। আমি মনে করি, তথ্য প্রযুক্তির উন্নতির কারণে বরং প্রকাশনা জগৎ অনেক বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে। প্রযুক্তির উন্নতির কারণেই এত দ্রুততার সাথে অনেক বই প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে। আগে যেখানে বই প্রকাশের জন্য মাসের পর মাস সময় লেগে যেতো, এখন সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বই প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলায় বলাকা প্রকাশনের স্টলে বসে একান্ত আলাপচারিতায় সাহিত্যিক মোহীত উল আলম তথ্য প্রযুক্তির কারণে তরুণ প্রজন্ম ‘বইমুখী হচ্ছে’ বলে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম যদি সত্যি সত্যিই বইপড়া কমিয়ে দিত, তাহলে বইমেলায় এত তরুণের আনাগোনা দেখা যেত না, এত তরুণ বই লিখত না। এবার তো খবর নিয়ে জানতে পেরেছি নতুন যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের অধিকাংশই তরুণ। সুতরাং, তথ্য প্রযুক্তির কারণে বইপড়া কমছে সে অভিযোগ সঠিক নয়।’
আলাপচারিতায় মোহীত উল আলম নিজের লেখালেখির শুরু নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ৮ম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই লেখালেখি শুরু করেছি। বিভিন্ন কাগজে ছোটদের পাতায় ছাপা হতো। এসএসসি পাস করার পর দৈনিক আজাদীতে আমার প্রথম একটি গল্প ছাপা হয়-‘ফুল পাখিদের মেয়ে’ নামে। তারপর থেকেই লেখালেখিটা চালিয়ে এসেছি। এ পর্যন্ত আমার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪৫। এর মধ্যে ৯টি উপন্যাস, ছয়টি কাব্যগ্রন্থ, ৪টি গল্পের বই, শেক্সপিয়রের নাটক অনুবাদ করেছি ১০টি, মুক্তিযুদ্ধের ওপর দুটি সংকলন।
সাহিত্যিক মোহীত উল আলম তার নাম লিখেন ঈ-কার দিয়ে। নামটির কোনো বিশেষ মহাত্ম্য আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবও দেন তিনি। তিনি বলেন, নামটি আমার বাবার দেওয়া। মোহীত শব্দটি আসলে আরবি। এর অর্থ-আনন্দ। আরবি উচ্চারণে একটি টান লাগে সে কারণে ঈ-কার দিয়ে লেখা, ই-কার দিলে নামের সঠিক অর্থ হয় না।
এ প্রজন্মের তরুণ যারা লেখালেখি করতে চান তাদের উদ্দেশে আপনার বক্তব্য কি? এমন প্রশ্নে সাহিত্যিক মোহীত উল আলম বলেন, ‘সফলতার শর্টকার্ট কোনো সূত্র নেই। যে কোনো কাজে সফল হতে হলে লেগে থাকতে হবে। কাজ চালিয়ে যেতে হবে। পৃথিবীতে যত মানুষ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তাদের জীবনী পড়লে দেখবেন তারা জীবনের নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করেছেন, কষ্ট করেছেন। সত্যিকার অর্থেই সফলতার মূলমন্ত্র হলো সেটাই-কঠোর পরিশ্রম আর মেধাকে কাজে লাগানো।’ তিনি বলেন, প্রত্যেক বাবা-মা চান তার সন্তান যেন জ্ঞানে-গরিমায় তাকে ছাড়িয়ে যান। প্রত্যেক সন্তানের তাই উচিত হচ্ছে বাবা-মাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। সন্তান যখন বাবা-মাকে ছাড়িয়ে যান তখনই বাবা-মা নিজেকে সার্থক মনে করেন।