‘জামায়াতের নীরবতা রহস্যজনক’

51

সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী সোমবার। আজ শনিবার রাত ১২টার পর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার সময়সীমা শেষ হচ্ছে। গত নির্বাচনে কারাগারে আটক থাকাবস্থায় চেয়ারম্যান পদে জসিম উদ্দিনসহ জামায়াত সমর্থিতরা বিজয়ী হলেও এবারের নির্বাচনে নিরব জামায়াত। আওয়ামী লীগ-বিএনপি মাঠে থাকলেও দেখা যায়নি জামায়াতের কাউকেই। জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সাতকানিয়া উপজেলার এই নির্বাচনে তাদের প্রার্থী না থাকায় একটি অংশ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে আপোষ হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে জামায়াত এখনো ২০ দলীয় জোটের শরীক হওয়ায় এই ধরণের গুঞ্জন সঠিক নয় বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
জামায়াতের জেলা পর্যায়ের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকেই জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এতে আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত কিংবা বিএনপিকে ছেড়ে দেওয়ার কিছু নেই।
প্রচারণায় আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ চললেও নানান কারণে কৌশলী বিএনপি। গতকাল শুক্রবার উপজেলার আমিলাইষ ও চরতী ইউনিয়নে গণসংযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মোতালেব। এর আগে সকালে নিজ প্রতিষ্ঠিত চিববাড়ি এম এ মোতালেব কলেজে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় অংশ নেন তিনি। সভায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সুফিয়ান, জেলা পিপি অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে সাতকানিয়া পৌরসভার সোনাকানিয়া এলাকায় গণসংযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন স্থানে আমাদের প্রচারণায় বাধার সৃষ্টি করলেও নির্বাচনের
দিন যদি পরিবেশ ভালো থাকে তাহলে জনগণ ধানের শীষের পক্ষেই রায় দিবেন।
এদিকে আব্দুল মোনায়েম মুন্না নামের এক প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সামান্যসংখ্যক ব্যানার-পোস্টার ছাড়া তাকে কোথাও দেখা যায়নি। গত নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী কারাবন্দী জসিম উদ্দিন মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। সেই হিসেবে মার্কার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আব্দুল মোনায়েম মুন্না মোটর সাইকের প্রতীকে ভোট প্রাপ্তি আশা করছেন বলে জানা গেছে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী এম এ মোতালেব, বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী আবদুল গফ্ফার চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোনায়েম মুন্না চৌধুরী (মোটরসাইকেল)। মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন তারান্নুম আয়েশা (প্রজাপতি) ও আনজুমান আরা বেগম (কলসি)। এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন মোহাম্মদ শাহজাহান (তালা), সালাহ উদ্দিন হাসান চৌধুরী (বই), মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন (চশমা), বশির উদ্দিন আহমদ (ধানের শীষ), আছিফুর রহমান সিকদার (মাইক) ও ওমর ফারুক লিটন (নলকূপ)। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮০ ভোট। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৬ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪ জন। ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় মোট ১২৫টি কেন্দ্রে ৭০১টি বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথমবারের মতো এখানে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দ্বারা অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মেশিনে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া ভোটের আগেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রদর্শন ও ভোট কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শেখ ফরিদ জানান, ইভিএম পদ্বতি হচ্ছে ভোটদানে একটি অত্যন্ত সহজ ও বিশ্বস্থ পদ্বতি। কেননা ইভিএমের ভোটে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। নিজের ভোট নিজেকেই দিতে হবে। এ পদ্ধতির ফলে জাল ভোটের সম্ভাবনা ও জোর করে সীল দেওয়ার ঘটনা কেউ ঘটাতে পারবে না।
অন্যদিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। প্রচারণা যেভাবেই হোক সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই সাতকানিয়ার জনগণ নির্বাচিত করবেন- এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মহলের।