আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) চট্টগ্রাম প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির ও নন্দনকানন রাধামাধব মন্দিরের পৃথক উদ্যোগে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব উল্টো রথযাত্রারা মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সনাতন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার ভক্ত উল্টো রথযাত্রায় অংশ নেন।
উল্টো রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে নগরীর হাজারী লেইনস্থ কে.সি.দে রোড, নন্দনকানন, আন্দরকিল্লা, চেরাগী পাহাড়, জামালখাঁন মোড়, কাজীর দেউড়ী, চট্টেশ্বরী, গোলপাহাড় মোড় ও প্রবর্তক মোড়ে বিপুল মানুষের সমাগম ঘটে।
সনাতন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার ভক্ত নর-নারী ঢাক-ঢোল, শংঙ্খ, মৃদঙ্গের তালে বিভিন্ন রকমের পৌরাণিক সাজে সজ্জিত হয়ে ও হরিনাম সংকীর্তন সহযোগে রথের দড়ি টেনে আনন্দে মাতোয়ারা হন। এছাড়াও গতকাল বিকাল ৩ টায় নগরীর শহীদ মিনারের সামনে প্রবর্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মঙ্গলাচরণ ও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী। উল্টো রথযাত্রায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষেরা আজ স্বাধীনভাবে ধর্মীয় উৎসবসমূহ পালন করছে। তার প্রমাণ হল এই রথযাত্রার মহোৎসব। যেখানে হাজার হাজার ভক্তপ্রাণ মানুষ রাস্তায় নেমে অত্যন্ত আনন্দের সহিত শ্রী জগন্নাথের রথের দড়ি টানছে। বর্তমান সরকারের সহযোগিতায় তারা নির্বিঘেœ এই উৎসব পালন করছে। বর্ণ বৈষম্যে আজ সারা বিশ্ব যখন বিভ্রান্ত, বিশ্বের নানা স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে তখন রথযাত্রা উৎসব বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় সারাবিশ্বে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখছে। ইস্কনের অনুসরণে হাজার হাজার মানুষ ধর্মীয় শিক্ষা ধারা পালন করছে। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তারা ব্যাপক ভ‚মিকা রাখছে। বর্তমান কালে ইস্কনের উদ্যোগে প্রায় প্রতিটি শহরে রথযাত্রা উদযাপিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, পটিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান তিমির বরণ চৌধুরী, চট্টেশ্বরী মন্দিরে প্রধান পূজারী বিজয় চক্রবর্তী, প্রবর্তক সংঘ সদস্য ইন্দুনন্দন দত্ত, চন্দন ধর, সুবোধ কুমার দত্ত, ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব বিশ^াস, শ্রীধাম বৃন্দাবন থেকে আগত শ্রীপাদ মুক্তিদাতা চৈতন্য দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক শ্রীমান চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, শ্রীমান দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী, শ্রীমান স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, শ্রীমান রূপেশ্বর গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রত্যেক মানুষের উচিত নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে জীবনকে গড়ে তোলা। যার ফলে নিজেদের মধ্যে তথা জাতিতে জাতিতে হানাহানি থাকবে না। নিজেদের মধ্যে ঐক্যের বিকল্প নেই। এই রথযাত্রাই হল সেই মহান ঐক্যের অন্যতম উদাহরণ।
মহা আশির্বাদক হিসেবে ভারতের শ্রীধাম মায়াপুর হতে আগত শ্রীপাদ তারক কৃষ্ণ নাম দাস ব্রহ্মচারী, সহ-পরিচালক, মায়াপুর ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন ভারত, ইস্কন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের উদ্যোগে তিনটি আকর্ষণীয় রথে জগন্নাথ, বলদেব, সুভদ্রা মহারাণী আরোহনের মাধ্যমে শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রা শুভ উদ্ভোধন করেন এন.জি.এস সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রীয্ক্তু অসিত কুমার সাহা। সন্ধ্যায় প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে হাজার হাজার ভক্তের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।