চুক্তির শর্ত অমান্য করে সোল্ডার কাটছে ওয়াসা

145

দক্ষিণ চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলায় ওয়াসার পানি সরবরাহে ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের আওতায় পটিয়ায় রিজার্ভার ও পানি বন্টন হবে। ওয়াসার গৃহীত ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় গত দেড় মাস আগে। এর আগে পানির সঞ্চালন লাইন স্থাপনে সড়ক বিভাগের সাথে শর্ত সাপেক্ষে চুক্তি হয় ওয়াসার। তাতে শর্ত ছিল সড়কের একেবারে শেষ সীমানায় পানির সঞ্চালন লাইন স্থাপন করতে হবে। এছাড়া এইচ ডি ডি পদ্ধতিতে এসব পাইপ সঞ্চালনের শর্ত থাকলেও একেবারে রাস্তার পাশেই সোল্ডার কেটে বসানো হচ্ছে এসব পাইপ। চুক্তি না মেনে কাজ করায় পটিয়া ও বোয়ালখালী থানায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয় ওয়াসা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এর আগে চুক্তি মেনে কাজ করার আহবান জানায় সড়ক বিভাগ। কিন্তু তাতে সাড়া মিলছে না ঠিকাদার ও ওয়াসার। আসন্ন বর্ষায় মহাসড়ক দেবে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সড়ক বিভাগ। এ নিয়ে সরকারের দুই সংস্থার মাঝে বিরোধ দেয়া দিয়েছে।
জানা গেছে, ওয়াসার পাইপ লাইন স্থাপনে সড়ক বিভাগ বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করে। চুক্তির মথ্যে কয়েকটি হলো ভূমি ব্যবহার অনুমতি সম্পূর্ণ অস্থায়ী। দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে প্রস্তাবিত মহাসড়ক সমূহের রাইট অব ওয়ে (রো) এর শেষ প্রান্ত বরাবর সওজ কর্তৃক অনুমোদিত ডিজাইন ও নক্সা মোতাবেক চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃক ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন প্রয়োজন অনুযায়ী (২০০-৯০০মিলিমিটার ব্যাস ) এইচ ডি ডি পদ্ধতিতে স্থাপন করতে হবে। চুক্তির সাত নম্বার শর্তে বলা হয় মহাসড়কের পাকা অংশে সোল্ডার কেটে কোন অবস্থাতেই পানির পাইপ স্থাপন করা যাবে না। সর্বনিম্ন ২.৬০ মিটারের কম মাটি খনন করা যাবে না। কাজ শুরুর পর সড়ক বিভাগের কোন শর্তই মানছে না ওয়াসা।
সরেজমিন দেখা যায়, ওয়াসা সড়ক বিভাগের সাথে করা অধিকাংশ চুক্তি মানছে না। সড়কের শেষ সীমানায় পাইপ বসানোর বদলে মহাসড়কের সোল্ডার কেটে ফেলছে। প্রায় ৭ ফুটের নিচে খনন না করার শর্ত থাকলেও তারা পাইপ বসাচ্ছে ৪-৫ ফুট মাটির নিচে। ওপেনকাট পদ্ধতি বন্ধ এবং সহাসড়কের শেষ সীমানায় পাইপ স্থাপনের জন্য বলার পরও ওয়াসা তাতে কর্ণপাত করছেন না। ফলে ভবিষ্যতের এ সড়ক ৬ লেনের হলে এসব পাইপ মহাসড়কের মাঝখানে চলে আসবে। তাতে করে সিটি কর্পোরেশনের মতই বার বার মহাসড়ক কাটাছেড়া করতে হবে।
সড়ক বিভাগ জানায়, ওয়াসা চুক্তির শর্ত ভেঙে ‘ওপেনকাট’ পদ্ধতিতে স্কেভটর দিয়ে মহাসড়কের সোল্ডার কাটছে। এছাড়া সড়কের অধিগ্রহণকৃত জায়গার শেষ সীমানা দিয়ে পাইপ লাইন চালানোর কথা থাকলেও তা না করে রাস্তার সোল্ডার কেটে পাইপ লাইন চালানোর কাজ অব্যাহত রেখেছে ওয়াসা।
দোহাজারী সড়ক বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, ওয়াসা বারংবার চুক্তির শর্ত ভেঙে মহাসড়কের সোল্ডার কেটে রাস্তার পাশ ঘেঁষে পাইপ লাইন সঞ্চালনের চালানোর কাজ অব্যাহত রেখেছে। ওয়াসা শর্ত ভেঙে অবৈধভাবে কাজ করছে। বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ধ্বসে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের লাঠিসোটা না থাকায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুটি থানায় অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। রাস্তা বড় করার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কাজটি সম্পন্ন গেলে এসব পাইপ নতুন করে বিপত্তির করাণ হতে পারে। ওয়াসার তত্ত¡াবধায় প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) কে শর্ত ভঙ করলে চুক্তি বাতিলের কথা বলা হয়। তবুও তারা অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে পটিয়া ও বোয়ালখালী থানাতেও লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এতেও তারা কর্ণপাত করছে না বলে তিনি জানান। দুটি প্রতিষ্ঠানই সরকারি হওয়ায় পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
তিনি বলেন, এতে ঠিকাদারের কোন সমস্যা দেখছেন তিনি। যেহেতু কাজটি ওয়াসা বাস্তবায়ন করছেন, সেহেতু চুক্তি মেনে কাজ করানোর দায়িত্বও তাদের। তাই কাজে প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারের বদলে ওয়াসার গাফেলতি দেখছেন বলে জানান।
ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মাহবুবুল আলম জানান, সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের চুক্তির বিষয়বস্তু বুঝতে ভূল হচ্ছে। রাস্তার সোল্ডার কাটা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, সড়কের একেবারে এক পাশে পাইপ বসানো সম্ভব নয়। কারণ সেখানে খাল আর নর্দমা।
তিনি বলেন, এইচ ডিডি পদ্ধতিতে এসব পাইপ বসানো সম্ভব নয়। ওই পদ্ধতিতে যেসব পাইপ বসানো সম্ভব আমরা সেসব পাইপ বসানোর এইচডিডি পদ্ধতিতে বসানোর কাজও শুরু করেছি। আমার মনে হয় না এ কাজে বর্ষা মৌসুম কিংবা যেকোন সময়ে সড়কের কোন ক্ষতি হবে।
উল্লেখ্য, ওয়াসার সাথে নতুন প্রকল্পের পাইন লাইন চালানো নিয়ে সওজের ৭টি সড়কের চুক্তি হয়। এর মধ্যে বর্তমানে ৪টি সড়কে ওয়াসার পাইপ লাইন লাইন বসানোর কাজ চলছে। সড়কগুলো হলো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও কক্সবাজার জাতীয় সমাসড়ক (এন ওয়ান) ১৩.৫০ কিলোমিটার। কালুরঘাট-মনসার টেক জাতীয় সহাসড়ক (এন-১০৭) ৩.৫০ কিলোমিটার। শিকলবাহা-আনোয়ারা সড়ক (জেড ১০১৮) ৬.৬০ কিলোমিটার। পটিয়া-বোয়ালখারী-কানুনগোপাড়া জেলা মহাসড়ক (জেড ১০৯০) ২. ৫০ কিলোমিটার। এগুলো ছাড়াও মইজ্জ্যার টেক-বোয়ালখালী-কানুনগোপাড়া উদরবন্যা জেলা মহাসড়ক (জেড ১০৬৫) ২ কিলোমিটার (কানুনগোপাড়া-বুড়ো মসজিদ)। পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী টইটং আঞ্চলিক মহাসড়ক (আর ১৭০) ৩ কিলোমিটার। উদরবন্যা জেলা মহাসড়ক ( জেড ১০৬৫) পাঁচুরিয়া-মইজ্জ্যার টেক ৬.৯০ কিলোমিটার সড়ক ।