চলমান শুদ্ধি অভিযান লোক দেখানো : ফখরুল

34

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ন্যাম সম্মেলনে যোগদান ও তার অর্জন বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘জানি না, ন্যাম সম্মেলনে গিয়ে শেখ হাসিনা কী অর্জন করেছেন? সেখানে গিয়ে তিনি বক্তব্য রেখেছিলেন কিনা, তাও আমরা এখনও জানি না। আজকে তিনি বলেছেন, সাইড লাইনে তিনি অনেকগুলো বৈঠক করেছেন। জানি না, এই সাইড লাইনের বৈঠকের ফলে আমরা কী পেলাম?’
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে যুবদল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও যুবদলের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ন্যাম সম্মেলন থেকে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী প্রেস কনফারেন্স করেছেন। আমরা জানি যে, নন এলায়েন্ট মুভমেন্ট হচ্ছে ন্যাম। এখন আর নন এলায়েন্ট বলতে কিছু নাই। যারা ন্যামে গেছেন তারা সবাই এলাইয়েন্ট এবং সেই প্রেক্ষাপটও নেই। আজকে তিনি বলছেন, সাইড লাইনে তিনি অনেকগুলো বৈঠক করেছেন। জানি না, এই সাইড লাইনের বৈঠকের ফলে আমরা কী পেলাম? এখন পর্যন্ত আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারিনি, দুই বছর হয়ে গেল একজন রোহিঙ্গাও দেশে ফিরে যেতে পারেনি।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, সোজা আঙুলে ঘি ওঠে না। আমাদেরকে রাস্তায় নামতে হবে, আন্দোলন করতে হবে। সরকারকে বাধ্য করতে হবে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে।
ভারতের নাগরিকদের নিয়ে করা এনআরসি নিয়ে সরকার কিছু বলেছে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতের মন্ত্রী আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, এটা নাকি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা শুনে সরকার খুশি হয়ে বসে আছে। আমরা পরিষ্কার করে বলছি, ১৯৭১ সালের পর কোনও বাংলাদেশি ভারতে যায়নি, যাওয়ার প্রয়োজনও পড়েনি। আজ বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালকের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সোমবার বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের একজন চিকিৎসকও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেছেন, খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন। এমনও বলেছেন, এই মুহূর্তে তিনি বাসায় চলে যেতে পারেন অথবা যেখান থেকে এসেছেন, সেখানেও চলে যেতে পারেন। এই কথার উদ্দেশ্য কী? আবার বললেন জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানতে চাই, তার শরীরের অবস্থা কেমন।
খালেদা জিয়া যে অবস্থায় হাসপাতালে গিয়েছিলেন এখন সেই অবস্থায় নেই দাবি করে তিনি আরও বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) নিজে বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, কারও সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। তাকে খাইয়ে দিতে হয়। হুইল চেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। এরজন্য একদিন জবাব দিতে হবে।
মামলায় নয় রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে। তার চিকিৎসার বিষয়ে তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন, কোথায় চিকিৎসা করাবেন। আইনগতভাবে তিনি জামিনের যোগ্য কিন্তু দেওয়া হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে অপবিত্র করে ফেলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা দেশটাকে অসুস্থ করে ফেলেছে। আজকে সমাজের দিকে তাকিয়ে দেখেন, বাবা ছেলেকে, ছেলে বাবাকে হত্যা করছে। দুর্নীতিকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ কেমন হবে, তার কনসালটেন্সি ব্যয় হচ্ছে ৭০ ভাগ আর মূল কাজ হচ্ছে ৩০ ভাগ। তার মানে প্রকল্পের ৭৭ ভাগ টাকাই লুটের বন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছে।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার অবৈধ সরকার, রাতের অবৈধ সরকার। কয়েকদিন আগে রাশেদ খান মেনন সাহেব হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন। পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন যে, কোনও নির্বাচন হয়নি। আমাদেরকে কেউ ভোট দেয় নাই।
সরকার যেহেতু ভোটের সরকার নয়, সেজন্য তাদের ভয় নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তারা চুরি-ডাকাতি, লুটপাট যা আছে সব করে যাচ্ছে। তাদেরকে কিছু বলার কেউ নাই। এই অবস্থা চলতে পারে না, একটা জাতি চলতে পারে না। এভাবে কখনোই এই জাতি টিকে থাকতে পারবে না। যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলকে সুসংগঠিত করে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামতে হবে।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।