চকরিয়ায় প্রতারক চক্র থেকে ড্রেজার উদ্ধার

31

মাসিক চুক্তিতে লোড ড্রেজার মেশিন ভাড়ায় এনে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগে প্রতারক চক্রের দুই সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন আলী আহামদ নামে এক ড্রেজার মালিক। গত ১১ ফেব্রূয়ারি রাতে চকরিয়া থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন তিনি।
মামলায় আসামি করা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণ পতেঙ্গা বিজয় নগর এলাকার হাজী ফয়েজ আহমদের ছেলে ও মেসার্স সাক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জিয়াউর রহমান (৪৫) এবং বাকলিয়া থানার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড চাক্তাই এলাকার মৃত শেখ আহামদের ছেলে আব্দুস ছোবাহানকে (৪৫)। তাদের বিরুদ্ধে মাসিক চুক্তিতে লোড ড্রেজার মেশিন ভাড়ায় এনে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। এদিকে মামলা দায়েরের দুইদিন পর গত বৃহস্পতিবার রাতে চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুল হাসানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মহেশখালী চ্যানেল এলাকা থেকে ওই লোড ড্রেজারটি উদ্ধার করে। পরে সেটি বদরখালী পুলিশ ফাঁড়ির জিম্মায় রাখা হয়।
জানা যায়, মামলার বাদি মুন্সিগঞ্জ জেলা গজারিয়া উপজেলার গ্রামচর বালাকী গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে আলী আহামদ থানায় দায়ের করা এজাহারে দাবি করেন, তার মালিকানাধীন প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যমানের এম বি সুমন এন্ড জহিরুল নামে একটি লোড ড্রেজার রয়েছে। এ ড্রেজারটি ভাড়া দিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। মামলার বাদি আরো দাবি করেন, মেসার্স সাক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জিয়াউর রহমান ও কর্মচারী আব্দুস ছোবাহান মহেশখালী এলাকায় বালির কাজ করার জন্য মাসিক তিন লাখ টাকা ভাড়া চুক্তিতে অগ্রিম চার লাখ টাকা আমানত হিসেবে দিয়ে আমার ড্রেজারটি ভাড়া নেন। চকরিয়া পৌর সদরের ওশান সিটি মার্কেটের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে চারজনের উপস্থিতিতে এ চুক্তিনামাটি সম্পাদন করা হয়। এ চুক্তির পর থেকে মেসার্স সাক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জিয়াউর রহমান ও কর্মচারী আব্দুস ছোবাহান দীর্ঘ ৭ মাস ধরে ড্রেজারের ভাড়া না দিয়ে ২১ লাখ টাকা বকেয়া রাখেন। উক্ত টাকা পরিশোধের বারবার তাগাদা দেয়া হলেও ভাড়াটিয়া মো. জিয়াউর রহমান নানা অজুহাত দেখিয়ে কাল ক্ষেপণ করতে থাকেন।
মামলার বাদী আলী আহামদ থানায় দায়ের করা এজাহারে আরো দাবি করেন, পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য আমার ড্রেজারের ভাড়াটিয়া জিয়াউর রহমানকে সর্বশেষ গত ৭ ফেব্রæয়ারি ২০২০ইং তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করা হয়। কিন্তু তার কোন জবাব পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মেসার্স সাক এন্টারপ্রাইজের মালিক জিয়াউর রহমান তার ফার্মের কর্মচারী আব্দুস ছোবাহানের প্ররোচনায় ড্রেজারটি আত্মসাত করে গোপনে বিক্রির জন্য রাতের আড়ালে সেটি মহেশখালী চ্যানেলের গোপনস্থানে নিয়ে রাখে। বিষয়টির ব্যাপারে চকরিয়া ও মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী মহলের সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়ে আমার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন ড্রেজারটি উদ্ধার ও তার বকেয়া ভাড়া আদায়ের জন্য থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
ভোক্তভোগী আলী আহামদ বলেন, মেসার্স সাক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জিয়াউর রহমান ও তার কর্মচারী আব্দুস ছোবাহান একজন প্রতারক। তারা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে চুক্তি করে মাসিক ভিত্তিতে ড্রেজার মেশিন ভাড়া নিয়ে প্রতারণা করে আসছে।
ড্রেজার উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুল হাসান বলেন, মাসিক চুক্তিতে লোড ড্রেজার মেশিন ভাড়ায় এনে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ চেষ্ঠার অভিযোগ এনে প্রতারক চক্রের দুই সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন আলী আহামদ নামে এক ড্রেজার মালিক। পরবর্তীতে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান আমাকে ওই মামলার তদন্তভার প্রদান করেন।
এসআই মো. কামরুল হাসান আরো বলেন, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার রাতে মহেশখালী চ্যানেল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মহেশখালী উপজেলার উত্তর নলবিলা চালিয়াতলী এলাকার মৃত বদিউল আলমের ছেলে আব্দুল হাকিম ও আফজালিয়া পাড়া এলাকার মৃত শামির জালাল কালুর ছেলে আখতারুজ্জমান প্রকাশ বাবু মেম্বারের কবল থেকে লোড ড্রেজারটি উদ্ধার করা হয়। পরে সেটি বদরখালী পুলিশ ফাঁড়ির জিম্মায় রাখা হয়। বিষয়টির ব্যাপারে বিজ্ঞ আদালতের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।