খোলা আকাশ, ফুটপাতে মানুষ থাকতে পারবে না

62

বাংলাদেশে একজনও গৃহহীন থাকবে না জানিয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান বলেছেন, খোলা আকাশ, রাস্তা, ফুটপাতে মানুষ থাকতে পারবে না। সবখানেই এখন দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পকে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রকল্প তিনি ধরে রেখেছেন। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি দিনদিন আরো বেশি সম্প্রসারিত হচ্ছে। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের যে মৌলিক চাহিদা সেখানের একটি এ প্রকল্প। সরকার সাংবিধানিক দায়িত্ব হিসেবেই বাসস্থানের ব্যবস্থা করছে। আমরা অনুন্নত দেশ থেকে এখন উন্নয়নশীল দেশে আছি। এ দেশে একজনও গৃহহীন থাকতে পারবে না। সবাইকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
গতকাল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প বাস্তবায়নকল্পে চট্টগ্রাম জেলার মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচটি জেলার ১৭০১২টি পরিবার পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে ৯৪২০টি পরিবার পুনর্বাসিত হয়েছে। ৫২০৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান আছে। আরো ২৩৮৭টি পরিবার প্রস্তাবিত আছে। আটটি বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম অনেক বড় বিভাগ। আমাদের এখানে চরাঞ্চলও আছে। চট্টগ্রামে প্রকল্প গ্রহণে অন্য বিভাগের চেয়ে সুযোগ বেশি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস হয়। স্বাভাবিকভাবেই এসবে আমাদের দুর্ভোগ হতে পারে। এমন দুর্যোগের সময় সবার পাশে দাঁড়ায় সরকার। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরহারা মানুষদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। শুধু পুনর্বাসন না তাদেরকে আয়বর্ধক প্রকল্পে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। যেখানে একটি বাড়ি করা হচ্ছে সেখানে খামার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকার পাশে হাটবাজার, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো আছে কিনা দেখতে হবে। ঘর বানাতে কোথাও কোনো দুর্নীতি হয়েছে কিনা, যাদের ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তারা এখনো আছে কিনা নাকি ছেড়ে চলে গেছে তা দেখতে হবে। আমাদের টার্গেট পূরণ করতে হবে। প্রায় সময় প্রধানমন্ত্রী এ ঘর বানাতে কোন কোন এলাকায় দুর্নীতি হচ্ছে তা জানার চেষ্টা করেন। যে কারণে প্রতিটি কাজেই স্বচ্ছতা থাকতে হবে।
কর্মশালার সমন্বয়কের বক্তব্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রকল্পের কাজে কিছুটা গতি আনার চেষ্টা করছি। মাঠ পর্যায় থেকে প্রস্তাবনা পাঠালে আমি তা দেখি। আশা কারবো প্রকল্প প্রস্তাব এখন ফাইলবন্দি থাকবে না। অন্তত ফাইল নড়াচড়া হবে। চাহিদামাফিক বরাদ্দ দিতে না পারলেও অল্প হলেও বরাদ্দ দিব। ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীদের ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ বেশ সিরিয়াস বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামে আমরা যথাসময়ে টার্গেট সম্পন্ন করবো। কাক্সিক্ষত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবো। অনেক আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখেছি যাদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তারা ঘরে তালা মেরে চলে গেছে। কোনো কোনো ইউএনও ও এসিল্যান্ডের কাছে তাদের বিষয়ে তথ্যও নাই। অবশ্যই যেন সেখানে বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি তাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার মানুষের মৌলিক সব অধিকার পূরণে কাজ করছে। শুধুমাত্র জনগণকে বুঝাতে হবে।
তিনি বলেন, পাহাড় ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের উৎকন্ঠায় থাকতে হয়। চট্টগ্রামে মৃত্যু ঠেকানো যায় না। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে প্রচুর মানুষ বসবাস করছে। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে এসে নি¤œবৃত্তরা পাহাড়ে বসবাস করছে। প্রধানমন্ত্রী আমার গ্রাম, আমার শহর করার ঘোষণা দিয়েছেন। শহরের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রামে দেয়ার কথা বলেছেন। গ্রামের যোগাযোগ ও কৃষি ব্যবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। অথচ সবাই শহরমুখী। এভাবে শহরমুখী হলে দেশ এগুবে না। গ্রামকেই শহরে পরিণত করতে হবে। পাহাড়ে যারা বসবাস করছে আমরা তাদের পুনর্বাসন করবো। তবে সবাইকে নিজ নিজ জেলায় ফিরে যেতে হবে। সেখানেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে সবজি, মৎস্য ও পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা হবে।
কর্মশালায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. দেলোয়ার হোসেন, সশস্ত্র বাহিনী প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন মেহেদী, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ, জেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, জেলা সমবায় কর্মকর্তা, সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলার সমবায় কর্মকর্তা ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।