কাপ্তাই হ্রদে ৩ মাস মাছ ধরা বন্ধ হচ্ছে

3

রাঙামাটি প্রতিনিধি

আগামি ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কাপ্তাই লেকে মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান।
এশিয়া মহাদেশের কৃত্রিম মিঠা পানির হ্রদের আয়তন ৭২৫ বর্গকিলোমিটারের কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করা, অবমুক্ত করা মাছের পোনা সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর এসময়ে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়। তবে এবার ওই সময়ে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাসের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) সূত্রে জানা যায়, হ্রদে ১০৫ এমএসএল (মিন সী লেভেল) পানি থাকলেই অবমুক্ত করা পোনা বেড়ে উঠতে ও মা মাছগুলো প্রাকৃতিক প্রজননের পর্যাপ্ত সুযোগ পায়। জেলে ও ব্যবসায়ীদের আশা, এবারও দীর্ঘ সময় হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ ধরা পড়বে তাদের জালে। আর অধিক রাজস্ব আদায়ের প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনও (বিএফডিসি)।
রাঙামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়–য়া বলেন, সবার মতামতের উপর ভিত্তি করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জেলেরা সেটা অবশ্যই মেনে নিতে বাধ্য হবে। প্রশাসন বলছে- ২৫ এপ্রিল ২০২৫ থেকে ২৪ জুলাই ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে- এই সিদ্ধান্তের সাথে আমরা একমত। যেহেতু মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাবে সে লক্ষ্যে জেলেদের প্রতি সুনজর রাখতে প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহŸান জানান উদয়ন বড়–য়া।
ঊধ্বর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার বলেন, লেকে বর্তমানে যে পরিমান পানি আছে, সে অনুসারে লেকের মাছ ধরা বন্ধ করার উপযুক্ত সময় এটি। মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য এই সময়ে মাছ আহরণ না করা উপযুক্ত সময়। এসময় যেন কেউ জাগ (জাল বেরি) দিয়ে মাছ আহরণ করতে না পারে সে দিকে সকলের দৃষ্টি রাখতে হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভ‚ঁইয়া বলেন, লেকের পানি কমতে শুরু করছে; তাই আর কালক্ষেপণ না করে আগামি ২৫ এপ্রিল থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত লেকে মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হলে ভালো হয়। আর মাছ আহরণ বন্ধকালিন সময়ে যেন বাজারের মধ্যে মাছ ব্যবসায়িরা বড় বড় মাছ ফ্রিজ আপ করে না রাখেন। ২৫ এপ্রিলের মধ্যে যেন সকল মাছ বিক্রি করে দেন। তিনি এসময়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এখনই মাছ আহরণ বন্ধ করা না হলে আগামিতে লেকে মাছ পাওয়া যাবে না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, উল্লেখিত দিন-তারিখ থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। উল্লেখিত দিন-তারিখের পর থেকে কাপ্তাই হ্রদের মাছ আহরণ, বিপনন, বাজারজাতকরণ ও চোরাই পথে মাছ নিয়ে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এনিয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। কেউ যেন চোরাই পথে লেকের মাছ আহরণ করে বিক্রি করতে না পারে সে দিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জোবায়দা আক্তার, উপজেলা মৎস্য মো. আব্দুল কাদীর, রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক এম.কামাল উদ্দিন, বৃহত্তর বনরুপা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি আবু সৈয়দ, মহালছড়ি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল খায়ের, কাপ্তাই হ্রদ বৃহত্তর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শুক্কুর, রাঙামাটি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরেশ মজুমদারসহ বিজিবি, সেনাবাহিনী প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।