করোনা ভাইরাসের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতারণা করছে সরকার : ফখরুল

31

দেশে নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে সরকারের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার অভিযোগ, সংক্রমণের তথ্য নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে যে আক্রান্ত, অসুস্থ, সুস্থ এবং মৃত্যুর ডেটাগুলো দেয়া হচ্ছে আমার তো মনে হয় বাংলাদেশের কোনো মানুষ তা বিশ্বাস করে না। এটা বিজ্ঞানের কথা- সংক্রমণ যখন বাড়ছে, উপরের দিকে যাচ্ছে, তখন মৃত্যু ২/৩/৪ এ এসে পৌঁছাচ্ছে।
অথচ সেদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক বলেছেন, আমার এখানে ৩১ জন মারা গেছেন, কয়েকজনের ডায়গোনেসিস হয়েছে করোনা পজেটিভ, বাকীদেরটা আমরা এখন পর্যন্ত টেস্ট করিনি।
ফখরুল বলেন, ‘এটাকে কী সরকার বলবেন আপনারা? যাদের এতোটুকু দায়িত্ববোধ নেই, যারা চরম দুর্দিনেও জনগণকে সঠিক তথ্য দিচ্ছে না, জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, জনগণকে প্রতারণা করছে। এটা ক্রিমিনাল অফেন্স ছাড়া কী বলব আমরা?’
নতুন করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে গত শনিবার পর্যন্ত ১৭৭ জনের সুস্থ হয়ে ওঠার তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু একদিন বাদেই সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ১ হাজারের বেশি বলে জানানো হলে বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা দেখা দেয়। খবর বিডিনিউজের
সুস্থ রোগীর সংখ্যা হঠাৎ এত বেড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যায় ওইদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেছিলেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ছাড়ের ক্ষেত্রে ‘নীতিমালা পরিবর্তন করায়’ এটি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে নতুন আক্রান্ত আর সুস্থতার পরিসংখ্যান জানানো হলেও নতুন কতজনের মৃত্যু হয়েছে তার কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। মৃত্যুর তথ্য পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানোর কথা বলা হয় বুলেটিনে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে প্রশ্ন হচ্ছে জীবনের, আর এরা খুলে দিয়েছেন শপিং মল। কেনো? ঈদের বাজার করতে হবে আর অর্থনীতিকে চালু রাখতে হবে। এতদিন কী করলেন? এই যে মধ্য আয়ের দেশে চলে গেলেন, অর্থনীতি আপনার রোল মডেল বিশ্বের মধ্যে। কেন বর্তমান অবস্থাকে ধারণ করার মতো শক্তি এই ইকোনমির তৈরি হয়নি? কারণ আপনারা পুরোটাই মিথ্যা কথা বলেছেন, মানুষকে প্রতারণা করেছেন, ভুল বুঝিয়েছেন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব অত্যন্ত সুবেশী এবং টিপটপ জেন্টেলম্যান। তিনি সুযোগ পেলেই বিএনপিকে আক্রমণ করেন এবং সুন্দর সুলোলিত ভাষায় সেই আক্রমণগুলো করেন। আমি একটা কথা বলতে চাই, আপনি যে কথাগুলো বলেন, সেটা কি পরে আবার শোনেন? শোনা উচিত এজন্য যে, তাহলে নিজেই বুঝবেন জনগণ আপনার কথা বিশ্বাস করছে না, তাহলে নিজেই বুঝবেন যে, এই কথাগুলো সঠিক নয়।’
তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দিয়ে সরকার ক্ষমাহীন অপরাধ করছে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে প্রতিটি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এই যে গার্মেন্টসগুলোকে উনারা খুলে দিলেন, গার্মেন্টস খুলে দিয়ে কী করলেন? বাইরের এলাকাগুলো থেকে সব চলে আসলো, যারা সংক্রমিত হয়ে চলে গিয়েছিল আবার সংক্রমিত হয়ে ফেরত আসলো। আজকের পত্রিকায় নিউজ আছে, কুমিল্লায় সংক্রমিত হয়ে গেছেন তিনদিন আগে, তাকে তার বাসায় ঢুকতে দেয়নি সন্তান-স্ত্রী। তার বোনের বাসা গেছেন, সেখানেই মারা গেছেন। এই যে ভয়াবহ পরিণতির দিকে তারা গোটা জাতিকে ঠেলে দিচ্ছেন- এটা আসলে ক্ষমাহীন অপরাধ।’
মহামারীর মধ্যে গণমাধ্যমের ভ‚মিকার প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেখুন, গণমাধ্যমের যারা সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ পরিবেশ করছেন তাদের কি অবস্থা! বিভিন্ন জায়গায় ছাঁটাই হয়েছে এই দুঃসময়ে, অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন-টেতন বন্ধ হয়ে আছে তিন মাস যাবত। সেখানে কিন্তু সরকারের কোনো প্রণোদনা নেই। এই যে সরকার ৯৫ হাজার কোটি টাকার একটা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যেটাকে আমরা বলেছি যে পুরোটাই শুভঙ্করের ফাঁকি, সেই প্রণোদনাতে সাংবাদিকদের কথা কিছুই বলা নেই।’
‘আমি এই সভা থেকে আহব্বান জানাব, সংবাদ মাধ্যমের যারা মালিক আছেন তারা দয়া করে সংবাদকর্মীদের বেতন পরিশোধ করবেন, কাউকে চাকুরিচ্যুত করবেন না এই দুর্দিনে এবং তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল হবেন। সরকারের প্রতি পরিষ্কার আহব্বান, অবিলম্বে সকল গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের মুক্তি দিন।’
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যবস্থাপনায় সাংবাদিকদের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপকরণ (পিপিই) বিতরণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সহসভাপতি রাশেদুল হক বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও আতিকুর রহমান রুমন উপস্থিত ছিলেন।