কক্সবাজার সৈকতে লোকসমাগমে নিষেধাজ্ঞা

21

করোনা ভাইরাস ঝুঁকি বিবেচনায় কক্সবাজার সৈকতে পর্যটক ও স্থানীয়দের সমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসকের এ ঘোষণার পর সৈকত থেকে পর্যটকদের তুলে দেওয়ার কাজ শুরু করেন টুরিস্ট পুলিশ। তারা মাইকিং করে পর্যটকদের সৈকত ছাড়ার যাওয়ার অনুরোধ জানান।
এদিকে কক্সবাজার জেলায় করোনারোধে বিমানবন্দরে স্থাপিত যাত্রীদের স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসক এ কার্যক্রম সরজমিন পরিদর্শন করেন। তিনি সব বিমান যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনার নির্দেশ দেন।
কক্সবাজারে ১১ লাখ রোহিঙ্গা ও তাদের নিয়ে কাজ করা বিদেশিদের ঘন ঘন যাতায়তের কারণে করোনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এর বাইরে রয়েছে বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা। এছাড়া সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বিদেশি নাগরিকদের নিয়মিত যাতায়তও করোনা ভাইরাসের জন্য অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে দেখছেন জেলাবাসী। এসব কারণে বিশেষ পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হয়েছে বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, পর্যটনস্পট এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো।
কক্সবাজারকে করোনামুক্ত রাখতে এনজিওদের সাথে সমন্বয় সভা, কক্সবাজারে অবস্থানরত জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংস্থানের প্রতিনিধিগণের সাথে মতবিনিময়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
এসব বৈঠকে করোনা নিয়ে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা তৈরি, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে করণীয়, সংস্থাগুলোয় কর্মরত বিদেশি কর্মকর্তাগণের করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে সতর্কতাসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়।
সম্ভাব্য করোনা প্রাদুর্ভাবে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইন ইউনিট। গঠন করা হয়েছে আইসোলেশন কমিটি, জরুরি রেসপন্স টিম এবং কন্ট্রোল রুম।
বিদেশীদের যাতায়তের বিষয়টি জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের দৃষ্টি গোছর করা হলে তিনি বলেন, প্রয়োজন ব্যতীত বিদেশিদের যাতায়াত না করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রূপ আইএসসিজি’র সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাদের পক্ষ থেকে বিদেশিদের নিজ দেশে যাওয়া আসা নিয়ন্ত্রণের আশ্বস্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান জানান, করোনা মোকাবিলায় সারাদেশের মতো কক্সবাজারেও নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তারই অংশ হিসেবে বিমান ও টেকনাফ স্থলবন্দরে জোরদার রয়েছে মেডিকেল টিম।
তিনি আরও জানান, আকাশ ও নৌ পথে আসা দেশি-বিদেশি সবাইকে করোনা ভাইরাস শনাক্তে থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়েছে। এতে দেশি-বিদেশি সকল যাত্রীকে থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষা করছেন মেডিকেল টিমের সদস্যরা। কেউ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে রামু ও চকরিয়ায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে একশ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট। খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এছাড়া বিশেষজ্ঞরা রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সবাইকে সর্বোচ্চ সচেতন থাকার পাশাপাশি জামায়েত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে কক্সবাজারে এ পর্যন্ত তিন ব্যক্তির কাছে করোনা ভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণ পাওয়ায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
সিভিল সার্জন মো. মাহাবুবুর রহমান জানান, প্রাথমিক হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা রোগীরা স্থানীয়। তাদের বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রাথমিক লক্ষণ পাওয়া যাওয়ায় আলাদাভাবে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সেই সাথে তাদের বিষয়ে সার্বক্ষণিক সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।