একই প্রকল্পে পৃথক নামে কোটি টাকা লোপাট!

23

রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে খাল খনন প্রকল্পে পুকুর চুরির মতো চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। জেলার ওই উপজেলা সদরের নিকটবর্তী মারিশ্যা ইউনিয়নের বারবিন্দু ঘাটে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এতে একই জায়গায় পৃথক নামে দুই দফায় দুই প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে। পৃথক দুই নামে দেখানো প্রকল্পের প্রত্যেকটিতে ১ কোটি টাকা করে ব্যয় বরাদ্দ দেখানো হলেও কাজ করা হয়েছে একটিই। এতে লোপাট হয়ে গেছে সরকারের ১ কোটি টাকা- যা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের যোগসাজশে। সরেজমিনে পরিদর্শন ও তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এই অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঘাইছড়ি উপজেলার ওই এলাকায় প্রথম দফায় ২০১৭-১৮ ‘বারবিন্দু ঘাটে নদী ভাঙন রোধ ও সড়ক নির্মাণ’ নামে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কাজ পায় অমেলেন্দু চাকমা নামে স্থানীয় এক ঠিকাদার। এতে কিছু কাজ করে ৫৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলণ করেন ঠিকাদার। তখন কাজের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় চাকমা। কিন্তু পরে যেটুকু কাজ হয়েছে, তার অনেকাংশ বন্যার পানিতে ভেস্তে গেছে। ফলে বাকি ৪৫ লাখ টাকার চূড়ান্ত বিলে স্বাক্ষর দেননি জেলা পরিষদের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ।
এ নিয়ে পরিষদের মধ্যে গন্ডগোলও বাঁধে। এর এক পর্যায়ে অন্যত্র বদলি হয়ে যান নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আবদুস সামাদ। তৎকালীন কাজে তদারককারী উপ-সহকারী প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় চাকমাও বান্দরবানের থানচিতে বদলি হয়ে গেছেন বলে জানা যায়। এসব কারণে ওই অর্থবছর শেষে কাজের চূড়ান্ত বিল উত্তোলণ করতে পারেননি ঠিকাদার। ফলে যেটুকু কাজ হয়েছিল, সেই টুকুতেই অসমাপ্ত রয়ে যায় প্রকল্পটি। আর কাজ নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জটিলতা এড়াতে পরবর্তী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওই একই প্রকল্পে ভিন্ন নাম ‘বারবিন্দু ঘাটে খাল খনন ও রাস্তা সংস্কার’ উল্লেখ করে আবার ১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কাজ দেয়া হয়েছে, অমেলেন্দু চাকমা নামে ওই একই ঠিকাদারকে। তবে এবার প্রকল্পে কাজের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন জেলা পরিষদের বর্তমান উপ-সহকারী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কান্তি চাকমাকে। কিন্তু ভিন্ন নামে হলেও আবার একই জায়গায় সাদামাটা কিছুটা কাজ করা হয়েছে ওই আগের প্রকল্পে। এরই মধ্যে প্রকল্পটির কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে বিলের সব টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, ওই প্রকল্পে অযথা ২ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হলেও দৃশ্যমান কাজ তেমন কিছুই হয়নি। প্রকল্পে দুই দফা কাজে সব মিলিয়ে বেশী জোর ২০-৩০ লাখ টাকার কাজ হয়েছে কিনা, তাও সন্দেহ রয়েছে। বাকি টাকা লোপাট হয়ে গেছে বলে মন্তব্য, স্থানীয়দের। তারা বলেন, সুষ্ঠু তদন্তে প্রকৃত বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কাজের তদারককারী উপ-সহকারী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কান্তি চাকমা বলেন, আগে কি হয়েছে- তা আমার জানা নেই। এবার প্রকল্পে সিডিউল মোতাবেক ঠিকভাবে কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। খনন করা খাল দিয়ে এখন নৌকা চলছে। কাজ এরই মধ্যে সমাপ্ত হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার অমেলেন্দু চাকমাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে গতকাল) বুধবার বিকালে জেলা পরিষদের সদ্য নির্বাহী প্রকৌশলী ক্য হলা খইকে মুঠোফোনে একাধিক বার রিং দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।