উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি

51

সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তোলার পর এই সরকারের সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি, তা থেকে সরে এসেছে তারা।
গতকাল শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আটটি উপজেলায় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর ৮টি উপজেলায় যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে আমরা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খবর বিডিনিউজের
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলেছিল বিএনপি। এরপর তারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বয়কট করে। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির যে নেতারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের বহিষ্কারও করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি তাদের বিষয়ে নরম হয় বিএনপি নেতৃত্ব।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কারাবন্দি অবস্থায় বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয়। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এই বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ রবিবার সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন হবে বলে জানানো হয়েছে।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ আওয়ামী লীগ সরকার এখন ব্যয় নির্বাহে অর্থের উৎসের সন্ধানে মরিয়া হয়ে উঠেছে, যা জনগণের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। শনিবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইনানশিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজে লাগাতে একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী মহাসড়কগুলোকে টোলের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। টোল থেকে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা দিয়েই সারা বছর সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ থেকে এটাই প্রমাণিত হয়েছে, আসলে সরকার অর্থনৈতিক দিক থেকেও দেউলিয়া হয়ে গেছে। স্বশাসিত সংস্থার তহবিলে সরকারের হাত দেওয়ার বিরূপ প্রভাব তুলে ধরেন অর্থনীতির ছাত্র ফখরুল।
তিনি বলেন, এতে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাংকগুলো, যেসব ব্যাংকে ওই সব প্রতিষ্ঠানের টাকাসমূহ জমা আছে। যখনই টাকাগুলো নিয়ে যাবে, তখন তারল্য সঙ্কট দেখা দেবে ব্যাংকগুলোতে। এছাড়া যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ওইসব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, তাদের যেসব বেতন-ভাতা, পেনশন-গ্রাচুয়িটি, এসব অর্থ তারা সঠিকভাবে পরিশোধ করতে পারবে বলে আমরা মনে করি না, এজন্য সমস্যা তৈরি হবে।
মহাসড়কে টোল আদায়ের বিরোধিতা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা মনে করি যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও সেই অবস্থায় দাঁড়ায়নি যে রাস্তার উপরে টোল আদায় করতে হবে। আমরা মনে করি, এটা জনগণের উপর একটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের আসামের নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর তালিকা থেকে বাদ পড়াদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর যে কথা বিজেপির নেতারা বলে আসছেন, সে বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।
তিনি বলেন, আসামের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে সেখানকার মন্ত্রীবর্গ, বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের যেসব বক্তব্য ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় বেরিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে যে, ১৯ লাখ যারা বাদ পড়েছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশ বাংলাদেশি নাগরিক। আমরা এহেন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, সরকার এ ব্যাপারে নীরব থাকছে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন, তখন আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে নিশ্চিত করেছে যে এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যখন বাদ পড়াদের বাংলাদেশের নাগরিক বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে, তখন কিন্তু সেটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকছেন না। আমরা এই বিষয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমরা বাংলাদেশের সরকারের কাছে এই ব্যাপারে পরিষ্কার ব্যাখ্যা চাই, ব্যাখ্যা দাবি করছি। জাতিকে অন্ধকারে না রেখে সরকারের জানানো উচিৎ আসলে ব্যাপারটা কী?
স্থায়ী কমিটি বৈঠকে মির্জা ফখরুল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।