উপজেলা নির্বাচনে খালি মাঠে আওয়ামী লীগ

50

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন ধাপের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল আছে। প্রথম দুই ধাপে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও চূড়ান্ত হয়েছে।
এদিকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ নির্বাচন করলে বহিষ্কারের মতো কড়াকড়ি আরোপ করেছে বিএনপি। নানা কারণে চাপের মুখে আছে জামায়াত। সবমিলিয়ে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য।
তবে শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ না থাকায় মনোনয়ন লড়াইয়ের পর এবার বিদ্রোহী প্রার্থীর শঙ্কা বিরাজ করছে আওয়ামী লীগে। ইতিমধ্যে কয়েকটি উপজেলায় গ্রæপিং-কোন্দলের কারণে দল মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই অবস্থান নিচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। অনেকেই দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হলেও শেষ পর্যন্ত মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। আপাতত শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ না থাকায় নিজেদের নিয়ে নিজেরাই টেনশনে আছে আওয়ামী লীগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দুইজন মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা বলেন, ভোটের মাঠের পরিবেশের উপর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ভর করছে। সুষ্ঠু ভোট হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনেকেই নির্বাচন করবেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের উচিত যিনিই নির্বাচিত হবেন তাকে মেনে নেওয়া। অনেকের তৃণমূলে সাংগঠনিক জনপ্রিয়তা না থাকলেও নৌকা প্রতীকের সুবিধা নিয়ে জয়ী হতে প্রার্থী হয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে ১০ মার্চ চট্টগ্রামের কেনো উপজেলায় ভোট হবে না। দ্বিতীয় ধাপে উত্তর চট্টগ্রামের সাত উপজেলার ভোট হবে ১৮ মার্চ। ইতোমধ্যে এসব উপজেলার প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হয়েছে। উত্তরের সাত উপজেলার মধ্যে ফটিকছড়িতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী, হাটহাজারীতে উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এইচএম রাশেদুল ইসলাম ও মিরসরাইয়ে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জসীম উদ্দিনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই এবার প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করবেন। বাকি চারটির মধ্যে রাউজানে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল, রাঙ্গুনিয়ায় খলিলুর রহমান, স›দ্বীপে মাস্টার শাহজাহান ও সীতাকুন্ডে এইচএম আল মামুন। এ চারজন চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তৃতীয় ধাপে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয় উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৪ মার্চ। আগামী ২২ অথবা ২৩ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হতে পারে।
ইতিমধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলা থেকে একক প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। লোহাগাড়ায় এলডিপি নেতা জিয়াউল হক বাবুলের নাম পাঠানোর প্রতিবাদে দলীয় হাইকমান্ডকে অবহিত করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। একসময় বিএনপি-এলডিপির রাজনীতি করা বাবুল এখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নৌকায় চড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বাকি উপজেলাগুলোতেও প্রার্থী ঘোষণার জন্য অপেক্ষায় আছেন নেতাকর্মীরা। অনেকেই পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না পেলে কৌশলী ভূমিকা পালন করবেন বলেও জানা গেছে। অনেকে বঞ্চিত হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে থাকতে সবধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে সাফ জানানো হয়েছে, দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করলে সংগঠন থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম পূর্বদেশকে বলেন, উত্তর জেলায় প্রার্থীদের সবার যোগ্যতা আছে। ইতোমধ্যে আমরা তাদের পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে মাঠে থাকবেন না। এরপরেও কেউ প্রার্থী হলে তাদের বিষয়ে দলীয় হাইকমান্ড ব্যবস্থা নিবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘দলীয় প্রার্থীর বাইরে যাওয়ার কারো সুযোগ নেই। নেত্রী বুঝেশুনেই যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিবেন।’