উপকূল থেকে জনপদে মৌসুমী বায়ুর বিস্তার

147

খরতাপের জ্যৈষ্ঠের প্রায় শেষে ক’দিন আগেই এবার বঙ্গোপসাগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূলে এসে হাজির হয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রীষ্মের আনুষ্ঠানিক বিদায়ের দিনে তা উপকূল থেকে জনপদে বিস্তারের খবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আজ পয়লা আষাঢ়ে পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চলই মৌসুমী বায়ুর দখলে। এর মধ্য দিয়ে গ্রীষ্ম পেরিয়ে মৌসুমি বায়ুর হাত ধরে দেশে কাগজে-কলমে বর্ষার প্রবেশের পর বাংলা বর্ষপঞ্জিকার হিসাব মেনে আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল বর্ষাকাল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট মৌসুমি বায়ু উত্তর-পূর্ব দিকে গিয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের টেকনাফের পাহাড়ি অঞ্চলে বাধা পায়। বাধা পেয়ে এটি পুবালি বাতাসে রূপান্তরিত হয়। এরপর উত্তর দিকে এগিয়ে যায়। যেদিন এই বায়ু বাংলাদেশের ওপর আবির্ভাব হয়, সেদিন থেকেই বর্ষাকাল শুরু হয়। বঙ্গোপসাগর থেকে আসা মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের টেকনাফ উপকূলে পৌঁছে জুনের প্রথম ভাগে। মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের জলরাশি থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প বয়ে নিয়ে আসে, যা থেকে মেঘমালার সৃষ্টি হয়। এই মেঘমালার কারণে বাংলাদেশে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার ওপর এই বৃষ্টিপাত নির্ভর করে থাকে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালে টানা এক থেকে তিন দিন, কখনও কখনও টানা পাঁচ দিন থেকে সাত দিনও বৃষ্টি হয়ে থাকে। এর ফলে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। তবে, গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রীষ্মের বিদায়ের দিনে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তর রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে। আবার একই অঞ্চলের বগুড়ায় রেকর্ড করা হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতও ।
অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুছ পূর্বদেশকে বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু টেকনাফ উপকূল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। আগামী কয়েকদিনে তা দেশের অবশিষ্টাংশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আমরা আশা করছি। তাই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবজনিত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।’
এদিকে, অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছ’টায় পরবর্তী ২৪ ঘন্টার জন্য প্রকাশিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে । টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, স›দ্বীপ, কুমারখালী, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও খুলনা অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে। আর সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে ।
ওয়েদার অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ বছর বর্ষায় যথেষ্ট বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং কোথাও কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি বৃষ্টিপাত হবে। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি বৃষ্টিপাত হবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলিতে। এর ফলে চট্টগ্রামসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো অতি ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে।