উখিয়ায় পানের দাম কমে যাওয়ায় হতাশ চাষিরা

60

উখিয়ার হাট-বাজারে পানের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও গত ৬ মাস যাবত পানের চালান সরবরাহ করে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন বলে জানা গেছে। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে পান আসার কারণে এ মূল্যহৃাসের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় চাষিরা।
স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, উত্তরাঞ্চলের পাইকারি আড়তে পানের দর কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে স্থানীয় হাট-বাজারে। এতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত অর্থকরী ফসল পান বাজারজাত করে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এমন অভিযোগ করে স্থানীয় পান ব্যবসায়ী মনু মিয়া জানান, সাধারণত যে পান বিড়াপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা সে পান বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে।
গয়ালমারা গ্রামের ছব্বির আহমদ জানান, পাশ^বর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার দৈনন্দিন চাহিদার অন্যতম পণ্য হচ্ছে পান, কিন্তু উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে একটি সিন্ডিকেট কম দামে উত্তরবঙ্গের পান এনে সরবরাহ করার কারণে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পানের দাম কমে গেছে। তিনি আরো জানান, গত ৫ বছর ধরে পানের বরজ দিয়ে উৎপাদিত পান বাজারজাত করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠেছিলেন তিনি। চলতি বছরে গত ৬ মাসে পানের বাজার দর না থাকায় পানের বরজে বিনিয়োগকৃত অর্থ উঠিয়ে নেয়াতো দূরের কথা, বরজ থেকে পান নিয়ে বাজারজাতকরণের উপযোগী করতে শ্রমের যে মজুরি ব্যয় হয় পান বিক্রি করে তাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পান বিক্রি না করে পানের চারাসহ বিক্রি দিবেন বলেও জানান তিনি।
পূর্বডিগলিয়াপালং গ্রামের কৃষক ছৈয়দ নুর প্রকাশ নুরু মিয়া জানান, তার নিজস্ব কোনো জমি নেই। এজন্যে ৪০ শতক বর্গা জমিতে দুটি পানের বরজ করে সংসার চালাচ্ছেন। হঠাৎ করে পানের কমে যাওয়ার ফলে চলতি বছরে তার প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, চলমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভবিষ্যতে পান উৎপাদন থেকে বিরত থাকবেন। পানের বরজ যারাই করেছেন তারাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
কোটবাজারের পান ব্যবসায়ী সেলিম উদ্দিন জানান, কোটবাজার, সোনারপাড়া, উখিয়া, মরিচ্যা এ চার বাজার থেকে প্রতি সপ্তাহে কোটি টাকার পান চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে চালান হয়ে আসছে। মূল্যহৃাস পাওয়ায় এ ব্যবসায় জড়িত প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি পানের দর না উঠে তাহলে পানের চালান সরবরাহ করা থেকে তারা বিরত থাকার কথাও জানান। তবে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, বৃষ্টি নামলে পানের দর বাড়তে পারে। পাশাপাশি পানের বরজেও পান উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে চাষিরা ও ব্যবসায়ীরা আবারো লাভের মুখ দেখার আশা করছেন।
উখিয়া উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহজাহান জানান, এ উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৫০০ হেক্টর জমিতে পান উৎপাদন হয়। স্থানীয় প্রায় ৫ হাজার পরিবার পান উৎপাদন করে জীবন ধারণ করে আসছে। বাজারে পানের দাম উঠানামা করলেও কৃষকদের তেমন ক্ষতি হবে না। যেহেতু বছরের অধিকাংশ সময় হাট-বাজারে পানের দাম বৃদ্ধি থাকে। তাই মাঝে মধ্যে পানের দাম কমলেও কৃষকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।