ঈদের ছুটিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

35

ঈদের ছুটি ও কোরবানী পশুর হাটকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। ঈদকে টার্গেট করে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মাসিক সভা ও ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে আয়োজিত জেলা আইন- শৃঙ্খলা কমিটির বিশেষ সভায় এসব সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে হাইওয়ে সড়কসহ কোন সড়কের উপর পশুর বাজার বসাতে দেয়া হবে না। সড়কে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও যানজট সৃষ্টি করা যাবে না। অনুমোদিত পশুর বাজারে ইজারাদারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জাল টাকা সনাক্তকরণ মেশিন ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। অপরাধ ঠেকাতে বাজারগুলোতে পুলিশের বিশেষ নজরদারী রয়েছে। পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা ও ইজারাদারের মধ্যে যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বাসা-বাড়িতে তালা দিয়ে অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাবে। সে সময় যাতে কোন ধরনের চুরি-ডাকাতি সংঘঠিত না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে কোন মূল্যে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি আতংকিত না হয়ে এডিস মশার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নুরেআলম মিনা বলেন, ঈদ-ঊল আযহায় চট্টগ্রামে আইন-শৃংখলার পরিস্থিতি স্বাভাবিকসহ মানুষকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এক শ্রেণির লোক ঈদ, পূজা ও কিছু কিছু অনুষ্ঠানে মদ পান করে মাতলামি করে থাকেন। মাদক ব্যবসায়ীদের একটি শক্তিশালী গ্রুপ বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা পাহাড় হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার চোলাই মদ চট্টগ্রাম হয়ে বিভিন্ন স্থানে পাচার করে থাকে। পুলিশের অভিযানে কিছু কিছু মদ ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হলেও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে রাঘব-বোয়ালরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে চোলাই মদসহ পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্যদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশ অভিযানে যাওয়ার খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে আসলে চোলাই মদ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য রোধ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে কোরবানি পশুর বাজার বসাতে দেয়া হবে না। গবাদি পশুর হাট ও পশু পরিবহনকালে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান ও মলম পার্টি রোধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে। অসুস্থ পশু ক্রয়-বিক্রয় রোধ, পশুর চামড়া পাচার রোধসহ গবাদি পশুর হাটে জালনোট সনাক্তকরণ মেশিন স্থাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মহাসড়কে সিসি বা আইপি ক্যমেরা স্থাপন করা গেলে দুর্ঘটনার চিত্র তাৎক্ষণিক ধরা পড়বে। চট্টগ্রাম জেলায় এবার ২২৮টি গবাদি পশুর হাট, ৩০৮৮টি ঈদ জামাত, ১৪টি পর্যটন কেন্দ্রের নিরাপত্তা এবং চামড়া পাচার রোধকল্পে জেলা পুলিশের প্রায় ৩ হাজার অফিসার-ফোর্সের সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশের বিশেষ টিম মোটর সাইকেল নিয়ে এলাকায় টহল জোরদার করবে। ঈদে জনগণের নিরাপত্তায় পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকবে। ঈদকে ঘিরে কোথাও কোন ধরনের নাশকতা বা নাশকতার পরিকল্পনার খবর পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানাতে হবে। সকলের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে আশাকরি ঈদে এবারও আইন-শৃংখলা স্বাভাবিক থাকবে। জেলার বড়-ছোট ৩০৮৮টি ঈদ জামাতের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহের প্রবেশপথে আর্চওয়ে গেট স্থাপন ও হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশিসহ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ ও জঙ্গি গোষ্ঠীর নাশকতা রোধকল্পে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সে সকল স্থানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গত জুলাই মাসের খাতওয়ারী অপরাধ চিত্র, সভার সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সাইফুল ইসলাম। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নুরেআলম মিনা, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াজেদ চৌধুরী, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. মোজাফফর আহম্মদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. সাহাবউদ্দিন, চিটাগাং চেম্বারের পরিচালক সৈয়দ জামাল আহমদ, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার চৌধুরী (চন্দনাইশ), মো. নুরুল আলম (বোয়ালখালী), হোসাইন মো. আবু তৈয়ব (ফটিকছড়ি), ফারুক আহমদ (কর্ণফুলী), উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোমেনা আক্তার (বাঁশখালী), মোহাম্মদ রুহুল আমীন (হাটহাজারী), শেখ জোবায়ের আহমদ (আনোয়ারা), মোহাম্মদ মোবারক হোসেন (সাতকানিয়া), মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান (রাঙ্গুনিয়া), সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমদ, হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক মো. আবু আবদুল্লাহ, সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ, হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম, সীতাকুন্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শম্পা রানী সাহা, রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম চৌধুরী, র‌্যাবের এএসপি কাজী মো. তারেক আজিজ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, পৌর মেয়র সেলিমুল হক চৌধুরী (বাঁশখালী), ইসমাইল হোসেন (ফটিকছড়ি) ও আবুল কালাম আবু (বোয়ালখালী) প্রমুখ। সভায় সরকারের বিভিন্নস্তরে কর্মরত কর্মকর্তাসহ আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।