ইয়াবা ব্যবসায়ী-বিতর্কিত ব্যক্তিরা ঢুকছে আ.লীগে

67

অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হলেও কক্সবাজারে তা পালন করা হচ্ছেনা। সম্প্রতি মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলে অনুপ্রবেশকারী এবং তালিকাভুক্ত নদী দখলকারী মো. আবদুল খালেককে দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। যা নিয়ে কক্সবাজার আওয়ামী লীগে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এই বিতর্ক শেষ না হতেই আবারও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী। গত শুক্রবার টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী হাম জালালকে সভাপতি ঘোষণা করা হলে বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়। হাম জালালের বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে অন্তত ৯টি মামলা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় শীর্ষে থাকা জালাল টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ছোট হাবিবপাড়ার হাজী খলিলুর রহমানের ছেলে।
এ বছরের জানুয়ারিতে টেকনাফে ৩ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলো হাম জালাল। এর আগে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে ইয়াবা নেয়ার সময় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলো জালাল। তার পুরো পরিবার এই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত বলে জানা গেছে। কিছুদিন আগে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারের সময় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে তার ছোট ভাই ইয়াবা ব্যবসায়ী বাহাদুর নিহত হয়েছেন।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানিয়েছেন, হাম জালাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা রয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি ৩ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফ থানায় গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন হাম জালাল। তার পুরো পরিবার এই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। কিছুদিন আগে জামিনে এসে হাম জালাল আবারও ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। হাম জালালকে আটক করার চেষ্টা করছে টেকনাফ থানা পুলিশ। একজন চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে পারা খুবই দুঃখজনক বলেও জানান ওসি প্রদীপ।
সূত্র জানায়, দলে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত বিএনপির সাবেক এ নেতাকে মনোনয়ন দিল আওয়ামী লীগ। যার বিরুদ্ধে নদী দখলের অভিযোগে মামলাও রয়েছে। যদিও নদী দখলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নির্দেশনা রয়েছে হাইকোর্টের এক রায়ে। আবদুল খালেক ২০০৮ সাল পর্যন্ত নিজ এলাকায় বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০০৫ সালে গঠিত কক্সবাজার জেলা বিএনপির কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন তিনি। তারও আগে সভাপতি ড. আবদুল মোতালেব এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম এমকমের নেতৃত্বাধীন মহেশখালী থানা বিএনপির কমিটিতে ২৮ নম্বর সদস্য ছিলেন খালেক। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভোল পাল্টে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বনে যান তিনি। এখন স্থানীয় আওয়ামী লীগে প্রভাবশালীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন অনুপ্রবেশকারী এই আবদুল খালেক। অন্যদিকে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বনে যান শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও। এলাকার পাশাপাশি কক্সবাজারেও গড়ে তুলেছেন নিজস্ব ক্ষমতার বলয়। নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।