আল মাহমুদ এর গল্পের নারীরা

144

মাহমুদ ২
‘ভেজা কাফন’র নূরী— যে কি না কঠিন রোগে আক্রান্ত, দারুণ সুন্দরী। গ্রামের মেয়ে, গল্পের নায়ককে অবাক করে দিয়ে বলে— ‘আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি। ভেবেছিলাম আমার যখন অমত নেই তখন চিঠি লিখে আর কী হবে। একদিন আপনার বাড়ি গিয়ে আপনার মা আর ভাইবোনদের সামনেই আমার মতামতটা জানিয়ে আসব।’ হোক না ঢাবির শিক্ষার্থী, ‘ছোট মফস্বল শহরটির’ মেয়ে নূরীর মুখে ‘বিয়ে বসব’র মতো দৃঢ় উচ্চারণের ভেতর দিয়ে মাহমুদ নারী-পৃথিবীর দুর্বল-সিদ্ধান্তহীন দেয়ালকে যেন উপড়ে দেন সযতনে। গল্প রচনার সময়ের বঙ্গীয় নারী আর তাদের পিতৃমনোভাবের সাথে গল্পকারের এই দ্রোহকে মেলাতে গেলে যে কারোই লোম খাড়া হবার দশা! লোকজ শব্দের বৈপ্লবিক ব্যবহার নয় শুধু, নারী-দৃষ্টিভঙ্গির প্রচলিত নিচতাকে মাড়িয়ে তিনি গল্পে নারী চরিত্রকে করে তোলেন সাহসী, সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো ব্যক্তিসত্ত্বার অধিকারী। ‘নিশি বিড়ালীর আর্তস্বর’ গল্পের হোমাকে ভুলি কী করে? বিড়ালছানাকে ড্রেনে ফেলে দেয়ার অপরাধে হোমা’র ‘খুনী, জানদার একটা বাচ্চাকে ড্রেনে ডুবিয়ে মারলি? আমি তোকে পুলিশে…’ আর্তস্বরে বোঝা যায় না গোটা ব্যাপারটা। হোমা যখন ‘লোকটার জামার কলার ধরে’ জুতো খুলতে উদ্ধত হয় তখন পাঠকের বোধে চরম ধাক্কা লাগে। নারী জাতির সবল প্রতিনিধি হয়ে হোমা’র এই আচরণ আকস্মিক বলে হেলা করার সুযোগ নেই। হোমা’র বর সোহেল দূরে কোথাও গাড়ি নিয়ে গেলে ড্রাইভিং সম্পর্কে হোমা’র সচেতন প্রয়াসকে গল্পকার সূত্রমুখ করে তোলে ধরেন যেনবা। এই গল্পের হোমাকে দিয়ে আল মাহমুদ নারী-বিশ্বের আপাতসরল সত্ত্বার অর্ন্তগত প্রতিবাদী-তেজি মনোভাব তুলে ধরেন বাস্তবের আয়নায়। হোমা’র এই অগ্নিমূর্তি পুরুষশাসিত তো বটেই সমাজস্থিত অনাচারের বিরুদ্ধেও তীব্র ব্যক্তিক প্রতিবাদ। কতগুলো পুরুষমুখের সমুখে গল্পের নায়িকার এই প্রতিক্রিয়া নিশ্চিতভাবেই গল্পকারের সচেতন প্রয়াস- যা নারীর নারীত্ব বজায় রেখে মানুষ হবার দিকে ধাবিত করে। হোমা’র প্রতিবাদী চিত্তকে মুক্তির ইঙ্গিতময় আলো হিসেবে দেখলেও ভুল হয় না বোধহয়। আল মাহমুদ এমন কুশলী শিল্পী যার চরিত্র চিত্রণকে কখনো মনে হয় না আরোপিত; বাইরের আনুষ্ঠানিকতায় ভরপুর; হৃদয়ের অনুভূতি দিয়ে গল্প সৃজন করেন বলে মাহমুদ এর গল্প হয়ে ওঠে চেনা ভ‚গোলের হৃদয়জ প্রতিবেশি।
‘পারাপার’ গল্পের লীলাবতীকে বিস্মৃত হবার কোন উপলক্ষ রাখেন না গল্পকার। বিপ্লবীদের জীবনাচারের সাথে রাজনীতি-সময়-স্বকাল এবং অভ্যন্তরীণ নানা কথকতার ভেতর লীলাবতী যেন জেগে থাকে আপন মহিমায়। কমরেড যখন লেখেন ‘…. আমি আশা করছি আমার জন্য আগামীকাল শনিবার খুব ভোরে তোমার কোসা নৌকাটি নিয়ে যমচরের খেয়াঘাটে আসবে। যদি আস ভাবব তুমিও অমিয়র খালি জায়গায় আমাকে চাও। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক। লাল সালাম—।’ বিপ্লবীর আত্মগোপনে একজন নারীর প্রতি এমন অনুরাগ, বলা যায় নির্ভরশীলতা শুধু রাজনৈতিক ভাষ্যকে উন্মোচিত করে না, চেতনাপুঞ্জের গোপন ইশতিহারও যেন ন্যাংটা হয়ে যায় পাঠকের কাছে। লীলাবতীর ‘অমিয়ও চলে গেল, দ্বিতীয়বার শূন্যস্থানে খালি বিছানায় তোমাকে নিতে এসেছি যে’ উক্তির মাধ্যমে নারী হিসেবে তার বলিষ্ঠতা প্রকাশ পায়, বিধবার চরিতার্থের চেয়ে কমরডের কামনাও যে সমানে বিস্তৃত হতে থাকে গল্পের জমিনে।
নিজে নৌকা চালিয়ে, ভোররাতে, কুয়াশা ভেদ করে কমরেডকে নিয়ে আসে লীলাবতী— জেলে বউদের হাসির জবাবে বলে- ‘না, বামচরের হাটে গিয়েছিলাম। একে তুলে আনতে, জায়গা খালি হয়েছে, মানুষের বড় দরকার। পুরুষ মানে তো নেতা, আমি তোদের জন্য নেতা নিয়ে এসেছি।’ কামের আদিম বাসনার বিপরীতে ‘নেতা’ ঘোষণার মাধ্যমে লীলাবতী নিজেকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়। পুরুষকে উচ্চাসন দেয়ার সাথে সাথে লীলাবতীর সাহস আর স্বাভাবিকতার একটা গল্পযোগ টেনে রাখেন গল্পকার। যেখানে শেষতক জয়ী হয় লীলাবতীর সাহস। ‘ভেতরের মানুষ’ গল্পের আমজাদ স্মৃতিকাতর হয়ে খুলে বসেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের রঙিন দিনগুলো। কবিতাচর্চা, ক্যাম্পাসের স্বপ্নমেধুর দিনে আমজাদ জয়নক জাহানকে বন্ধু হিসেবে বেশ গভীরেই জায়গা দিয়েছিলেন। আর দশটা গ্রাম্য নারীর ভাগ্য নিয়ে জয়নক জাহান ওরফে জাপানী পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে-থা নিয়ে বেশ ভালোই আছেন। ঢাকার একগেয়েমি কাটিয়ে আমজাদ স্মৃতি ঘেঁটে মফস্বলে জাপানীর শ্বশুরবাড়ি খুঁজে নেবার বর্ণনা গল্পকার এত নিপুনভাবে আঁকেন তা অসামান্য। তারচেও বড়ভাবে ধরা দেয় পাঠকের কাছে— ‘… এত ভয় পাচ্ছেন কেন আমজাদ ভাই। এটি তো আমার শ্বশুরবাড়ি। নিজের বাড়ি না। এখানে আমার স্বামী দেউরেরা সবাই আপনার কথা জানে, সবাই জানে ঢাকার বিখ্যাত লেখক আমজাদ আলম খান জাপানীর বন্ধু। কোনও ভয়ের কারণ নেই, একটা রাত অন্তত থাকুন, কাল চলে যাবেন।’ গ্রাম্য বধূর ক্লাসমেট-বন্ধুর প্রতি এমন আবেদন যেখানে ভাবনারও অতীত— জাপানী নিজে যেন সেই প্রথা ভাঙলেন। সহজ স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ‘আমার শ্বশুরবাড়ি’ টার্মটা দিয়েই জাপানী নারীর প্রকৃত অবস্থানকে তুলে ধরেন অনায়াসে। ব্যক্তিত্বে ভরা, স্বতঃস্ফূর্ত নারী চরিত্র অঙ্কনে মাহমুদ এর সিদ্ধি অপ্রতুল। চিরায়ত ঢঙের ভেতর দিয়েই গল্পকার নারীমুক্তির মিহি অথচ প্রবল একটা ধারা যেনবা যোগ করে দেন গল্পের ভ‚বনে।
‘রাগ যন্ত্রণা’ অসাধারণ গল্প। আল মাহমুদ এর অন্যান্য অনেক জনপ্রিয় ও বহুলপঠিত গল্পের সাথে এটি উচ্চারিত হয় না। সংগীতবিষয়ক একটা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গল্পের অবতারণা হলেও আমরা মূলত মুগ্ধ হই প্রতিযোগী দিল আফরোজের প্রতিবাদমুখর যুক্তিতে ‘… বলবেন একটা; বাজাবেন অন্যটা? আপনি বিচারকদের মূর্খ ভাবলেও আমি আপনার চাতুরি ধরে ফেলেছি। আমি সেখানেই প্রতিবাদ করতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আপনার সম্মান ও বয়সের কথা ভেবে চুপ করে বসেছিলাম।’ ওস্তাদ আমির খান লজ্জ্বিত। আফরোজের নির্ভুল সংগীতজ্ঞান ওস্তাদের চাতুরিকে পরাজিত করেছিল নিদারুণভাবে। দিল আফরোজের এহেন সত্য উচ্চারণ গল্পটিতে দেয় ভিন্ন ব্যঞ্জন। দিলারা’র কথা কি মনে আছে? পাঠক নিশ্চয়ই ‘মাংসের তোরণ’ গল্পটি ভুলতে পারার কথা নয়। জীবনের দায়ে দিলারা রূপপ্রসারিণী হয় বটে তাতেও গল্পকারের গোপন ইচ্ছা আছে সম্ভবত। না-হয় যে দিলারা আনজামকে ‘হোটেলে আমার ঘুম পায় না’ বলে বাড়িতে যাওয়াকে জায়েয করতে রশিদা বেগমের অমন মাতৃত্ব দেখানোর আয়োজন সারবেন কেন গল্পকার! মাতৃমায়ায় দিলারা গলে যায়, তবে ভুলতে পারে না নিজের প্রয়োজনের কথা। দেহ না পেলে আনজাম কি বিনিময় দেবে? সুযোগমতো দিলারাকে বলতে হয় ‘আসুন, এই যে আমি।’ এমন সপ্রতিভ আহ্বান হয়তো তাদের নৈমত্তিক ব্যাপার তবুও দিলারার ভেতরে ‘বাংলাদেশের মানচিত্র; এমনকি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বা ধলেশ্বরী’ দেখতে পায় আনজাম, তাকে কোন তুল্যমূল্যে বিবেচনা করবো?
পশর নদীর কর্পূরীকে যেন ফিরে ফিরে পাঠ করতে হয় আমাদের। ‘পশর নদীর গাঙচিল’ গল্পটিকে উপমহাদেশের ইতিহাসের সমান্তরালে দেখার উৎসমুখ তৈরি করেন গল্পকার। বৈদেশি জাহাজের বাবুরা কর্পূরীদের থেকে এটা-সেটা কিনবে অথচ তার দাম পরিশোধ করবে না তা তো হতে পারে না! কিশোরী কর্পূরী অলৌকিক শক্তিতে নয় বরং নিজের সাহসে ভর করে জাহাজে ওঠে যায় অবলীলায়। ‘দাঁড়া না মজা দেখাচ্ছি, ছাগলের দাম আদায় করে টালাইয়ে নামব’ দৃঢ়তায় কর্পূরী উঠে যায় জাহাজে, একা নিয়ে আসে তাদের জিনিসপত্র। রতনের ভাষ্যমতে, কর্পূরী আর মানবী থাকে না, ‘বাদার বাঘিনী’ হয়ে ওঠে যেনবা। গল্পপাঠে মনে হতে পারে কর্পূরী মাহমুদ এর সে-ই মানসকন্যা, যে চঞ্চল, প্রতিবাদী এবং পরিবারের বোঝা টানছে কিশোর বয়সেই। সুন্দরবনের বাঘ, বনদস্যু, দালাল এড়িয়ে কর্পূরীর এই জল মাখামাখি সত্যিকার অর্থেই নায়িকাসুলভ। জলে-জঙ্গলে কর্পূরীদের বেঁচে থাকার নির্মম ইতিহাস গল্পের সত্য করে হাজির করেন শব্দভাষ্যে। কর্পূরী এখানে সিম্বল; শোষণ প্রবণতার বিরুদ্ধে, বড়ত্বের বিরুদ্ধে কর্পূরীর অধিকার ছিনিয়ে আনার কঠিন বাস্তবতা মহৎশিল্পী হিসেবে মাহমুদ এড়াতে পারেননি, উল্টো কর্পূরীকে এঁকেছেন পরম মমতায়।
‘গন্ধবডুক’ আল মাহমুদ এর অন্যতম প্রতিনিধিত্বশীল গল্প। ব্যক্তিগত জীবনের, বেড়ে ওঠার এবং সামাজিক বিবর্তনের প্রাতিস্বিক দলিল এই গল্পে কুলসুম চরিত্রের খুশবো আলাদাভাবে ছড়ানোর উপাদান সরবরাহ করেন স্বয়ং গল্পকার। আতরবিক্রেতা নানার মৃত্যুতে গল্পের কথক বিহŸল হয়, স্মৃতিকাতর হয় কিন্তু ভররাতে একা একটা ঘরে মন্তু নানার লাশ দেখতে যাবার সাহস পুরুষই যেখানে করতে পারেন না, সেখানে কুলসুম প্রস্তাব দিয়ে বসে— ‘… তারচেয়ে চলো টর্চটা নিয়ে গিয়ে মন্তু নানাকে শেষ দেখা দেখেই আসি। সকালবেলা তো লোকজনের ভীড়ে আমি বউমানুষ বেরুতে পারবো না। যাবে?’ কুলসুমের স্বপ্রণোদিত এই প্রস্তাবনা নিশ্চই পাঠককে আবেগাক্রান্ত করে! তারচে বড়, স্বামীকে সঙ্গ দিয়ে, স্বামীর মনোবাসনা ধরতে পারার কুলসুমের হৃদয়সিক্ত শ্রদ্ধা ঠুনকো করে দেখার কোন সুযোগই নেই, বিশেষত অমন মুর্হূতে। গল্পকার কায়দা করে তাই টর্চ তুলে দেয় কুলসুমের হাতে, একজন নারীর হাতে। কিংবা ‘কালোনৌকা’ গল্পে সতীর প্রাণপণ প্রচেষ্ঠা, অমানুষিক শ্রম সবই তো রসুর সংসারের সমৃদ্ধির জন্যে! সেই ধারা দমোদরের সংসারে এসে কালীও বজায় রাখে। কিন্তু বঙ্গোপসাগর কবে রেখেছে কার কথা? কালীর এই শ্রমকে নিষ্ঠার সাথেই দেখতে হয়, এমনকি ‘রাসুর শক্তবাহুর পেষণে কালী একবার শুধু অস্পষ্টভাবে আওয়াজ তুলে উচ্চারণ করল দমোদর’ তখনো আমাদের মনেহয় কালী ঠিকই আছে। মাহমুদ এর অমন প্রেক্ষিত সৃষ্টিতে বিস্ময় মানতে হয় আমাদের; কালী তখন অপ্রকৃতিস্থ কেউ নয়, যেনবা সমাজের ঘূর্ণিপাকে পড়ে নিজের ময়লা দিয়ে পরিচ্ছন্ন করছে পার্থিবতাকে। ‘জলবেশ্যা’র বাউলা সুন্দরী— নারীর ফাঁদ ব্যবহার করে আবিদ বেপারীর টাকাকড়ি নিয়ে যেভাবে তুলে দেয় নৌকায় এটাকে নারী চরিত্রের বজ্জাতপনার পটুচাল হিসেবে দেখতে পারেন পাঠক। বাউলা সুন্দরী যেভাবে পাঁজাকোলে তুলে নেয় বেপারীর লাষ তা শক্তির বিচারে তো বটেই কালভেদেও অকল্পনীয়। বাউলা সুন্দরী আতঙ্কিত হয় না বরং তড়িৎ সিদ্ধান্তে বেপারীর লাশ নৌকায় তুলে দিয়েও নিজেকে বিদ্ধ করে না অনুশোচনায়। ‘পানকৌড়ির রক্ত’র আদিনার ‘আজ হবে, ব্যাপারটা বন্ধ হয়েছে’ যতটা না সৃজনশীলতার পরিচায়ক তার নব্বই ডিগ্রি উল্টো বাউলা সুন্দরী। নারীর আগ্রহে তৈরি হয় ইমারত, ক্রোধে ভাঙে মন্দির— আল মাহমুদ এর গল্পের নারীরা যেন জীবনের বহুবিচিত্র ধারণা নিয়ে হাজির হয় পাঠকের কাছে। রিপুর যত রকম তাড়না আছে, মানবীয় যত অপরাধ, অপসৃয়মানতা— সবটা উজাড় করে নারীর মাধ্যমেই, মাহমুদ। মূলত নারীর অভ্যেস-আচারের ছায়ায় মাহমুদ দেখান এদেশেরই প্রকৃত চিত্রভাষ্য, রাজনীতি আর শ্রেণিবিভাজনের নিগূঢ় শাব্দিক ইতিহাস।
বল্লরী সেন এর ‘আল মাহমুদ আমাদের না-দেখা পুরাকাল, না-চাখা আতশপ্রাকৃত। তিনি তাঁর গল্পে যে সুড়ঙ্গ পথে মার্গ দেখান, তা দুর্গম ও অনিশ্চিত’ এমন মন্তব্যে গল্পকার মাহমুদ এর ভ‚গোলকে চেনা সহজ হয়ে যায় আমাদের জন্য। জীবনকে যিনি দেখতে পারেন পরিপূর্ণ চোখ দিয়ে, শিল্পে তার বাহাদুরি অনিবার্য। নারীকে যিনি আঁকতে পারেন তাবৎ সংস্কার উপেক্ষা করে তিনি কালজয়ী। অসংখ্য গল্প লিখেছেন আল মাহমুদ, একগেঁয়েমি কখনোই ভর করেনি তার গল্পে। পৌণঃপৌণিকতার আক্ষেপহীন প্রতিটা গল্পই দাবি করে আলাদা মনোযোগ। গল্পের ঘনঘাটায় মাহমুদ এর নারীরা কখনো মাতৃরূপে, কখনো প্রেমিকা হয়ে, কখনো ঘাতকের চোরাস্রোত হয়ে হাজিরা দেয়। মনোবিকলনের নানা স্ফূর্তি, অর্জনের প্রবল আগ্রহ, ধরে রাখার আকুতি, ঝেড়ে ফেলার বাসনা— নগর ছেড়ে গ্রাম, গ্রাম ছেড়ে নগরান্তরে; নদীবিধৌত এ-বাংলার প্রায় প্রতিটা জনপদে মাহমুদ এর নারীরা বেঁচে থাকে নানাভাবে। একরৈখিক সস্তা গল্পপনায় নয়, ভেতরকার গূঢ়-চিতকে এমনভাবে নারীর ভেতর দিয়ে দৃশ্যমান করেন মাহমুদ, তা যেন বাংলাদেশরই ছবি! ফলে একজন শ্রেষ্ঠকবির গল্পপাঠ শেষ হলেও পাঠকের করোটিতে ক্রমাগত খেলা করে যায় একেকটি নারী চরিত্রের অসম্ভব ক্ষমতাবান প্রভাব। হয়তো এ কারণেই এত বাস্তবিক-বিস্ময় হয়ে বেঁচে আছে আল মাহমুদ এর ছোটগল্প!