আল মানাহিল নার্চার হাসপাতালের যাত্রা

51

নগরীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মুত্যুবরণকারীদের দাফন ও সৎকারের ব্যবস্থা করে আসা বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এবার ফইল্যাতলী বাজারে যাত্রা শুরু করল ৭০ শয্যার একটি করোনা হাসপাতাল। ‘আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল’ নামের এই ফিল্ড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারে শুধুমাত্র করোনাভাইরাসে আক্রান্তদেরই চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। হাসপাতলে সেন্ট্রাল অক্সিজের প্ল্যান্ট থেকে রোগী প্রতিটি শয্যায় অক্সিজেন সুবিধা সরবরাহেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
হালিশহরের ফইল্যাতলী বাজার এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার এই করোনা ডেডিকেটেড ফিল্ড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারের উদ্বোধন করেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। তিনি এ অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা এবং ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে নতুন হাসপাতালটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নাসরিন বাকি নামে স্থানীয় এক দানশীল নারীর মালিকানাধীন পাঁচতলা ভবনে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা করছে নগর পুলিশ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম, শ্যামল কুমার নাথসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও স্বেচ্ছাসেবীরা উপস্থিত ছিলেন।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে অবদান রেখে যাচ্ছেন। অপরদিকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনও মহামারির শুরু থেকেই মৃত ব্যক্তিদের দাফন ও সৎকারসহ জনগণের পাশে থেকে মানবিক কাজ করছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন এই হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এ ধরনের উদ্যোগ মানুষকে শুধু চিকিৎসা সেবাই দেবে না, বরং আরও বেশি মানবিক হতেও উদ্বুদ্ধ করবে।
ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, গত জুন মাসের মাঝামাঝিতে হালিশহরের ফইল্যাতলী বাজারে ৭০ শয্যার ‘আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতির কাজ শুরু করা হয়। হাসপাতালটিতে ১০টি আইসিইউ শয্যাসহ সর্বমোট ৭০ শয্যার প্রতিটিে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যাট থেকে অক্সিজেন সুবিধা সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাও। শিগগির হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার ইক্যুইপমেন্টে যুক্ত হবে তিনটি ভেন্টিলেটর।
আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মাওলানা ফরিদ উদ্দিন বলেন, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে আমরা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফন ও সৎকার করে আসছি। পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত বা উপসর্গ থাকা ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে অন্যরা যখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল, তখন আমরা ফাউন্ডেশনের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের। হাসপাতালে পৌঁছে দিতে গিয়ে আমরা দেখি, কোনও কোনও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের ভর্তি করাচ্ছে না। কোথাওবা চিকিৎসা সেবার মাঝপথে রোগীদের হাসপাতাল থেকে বের করে দিতেও আমরা দেখলাম। অপরদিকে, কোনও কোনও হাসপতালে ধারণক্ষমতারও অনৈক বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। ফলে এ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে রাস্তায় রাস্তার ঘুরতে হয়েছে অনেক সময়। এর মধ্যে অনেকে পথিমধ্যে মারাও গেছেন। এসব পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা নিজেরাই একটি হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
মাওলানা ফরিদ জানান, হালিশহরের ফইল্যাতলী বাজারে নাসরিন বাকি নামের এক দানশীল নারী দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের চিকিৎসাসেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে একটি হাসপাতাল করার জন্য পাঁচতলা ভবনটি নির্মাণ করেন। কিন্তু নিজের কর্মব্যস্ততার কারণে সময় দিতে না পেরে তিনি স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার স্বপ্ন পূরণে ভবনটি আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনকে হস্তান্তর করেন গত বছর। এখন সেই ভবনটিতেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল’। করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে চলে আসলে হাসপাতালটিতে নবজাতক ও প্রসূতি মায়েদের সেবা দেয়া হবে। পাশাপাশি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্যও সেখানে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে।
আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ইফতেখার হাসান জানান, পাঁচতলা ভবনের পুরোটাই করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে পঞ্চম তলায় পুরুষ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হবে। চারতলায় থাকছে আইসিইউ আর তৃতীয় তলায় কেবিনের ব্যবস্থা। এ ছাড়া দ্বিতীয় তলায় নারী-পুরুষের জন্য আলাদাভাবে চিকিৎসা শয্যার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিচতলায় থাকছে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড। হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টও বসানো হয়েছে।