অপহরণ আতঙ্কে রামুর রাবার বাগানে যাচ্ছেন না শ্রমিকরা

49

বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীন রামুর রাবার বাগানের শ্রমিকরা অপহরণ আতঙ্কে বাগানে যাচ্ছে না। এতে রাবার কষ আহরণ কমে গেছে, ব্যাহত হচ্ছে রাবার উৎপাদন। মাদকসেবী, ডাকাত ও অপহরণকারীরা গোপনস্থান হিসেবে ব্যবহার করছে রামুর রাবার বাগানকে। প্রায় সময় ঘটছে অপহরণের ঘটনা। অপরাধীচক্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে রাবার বাগানের দুই শতাধিক শ্রমিক ও রাবার বাগানের পাশ্ববর্তী কাউয়ারখোপ এবং জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। অপহরণ ঠেকাতে সম্প্রতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় রাবার বাগান ও আশেপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এই অপহরণকারীচক্রই আশপাশের লোকালয়ে ডাকাতি, চুরি সহ নানা অপকর্মে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অপহরণ ঘটনার পরে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা ও রামু থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের পুলিশ ফোর্স নিয়ে রামু রাবার বাগান এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।
অপহরণের ঘটনায় আর্থিক শংকায় আছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীন রামু রাবার বাগান। অপহরণ ঘটনায় দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রামু থানায় জিডি করেছেন রাবার বাগান ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায়।
রাবার বাগানের শ্রমিক (টেপার) দিদারুল আলম, ছৈয়দ হোছন ও ওয়াচার মো. রাসেল অপহৃত হয়। কৌশলে অপহরণকারীচক্রের কবল থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসে। অপহৃত রাবার বাগান ওয়াচার মো. রাসেল জানান, তাকে অপহরণ করে পরিবার থেকে তিন লক্ষ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। কৌশলে অপহরণকারীচক্রের কবল থেকে পালিয়ে এসে অপহরণের ঘটনা রাবার বাগান কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন তিনি। অপহরণকারীদের হামলায় সোহেল নামে এক শ্রমিক আহত হয়েছেন জানিয়ে মো. রাসেল বলেন, মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীরা দেশের বৃহৎ রামু রাবার বাগানকে আপহরণকারীদের আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছে।
অপহরণ আতঙ্কের ঘটনা স্বীকার করে রামু রাবার বাগান ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় জানান, রাবার কষ সংগ্রহের ভরা মৌসুমে শ্রমিকদের অপহরণ করা হচ্ছে। গত ১৪ অক্টোবর দিবাগত রাত ২টার দিকে রামু রাবার বাগানের জামতলী এলাকার বাসিন্দা রাবার বাগানের ওয়াচার মো. রাসেলকে দুষ্কৃতিকারীরা গভীর অরণ্যে অপহরণ করে নিয়ে বেদম মারধর করে এবং তিন লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরদিন ১৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে মো. রাসেল দুষ্কৃতিকারীর কবল থেকে কৌশলে পালিয়ে আসে। মঙ্গলবার মধ্য রাতে আবারও দুষ্কৃতিকারীরা রাবার বাগান ওয়াচার মো. রাসেলের বাড়িতে হামলা করে। এ সময় স্থানীয় জনতা প্রতিহত করায় দুষ্কৃতিকারীরা পালিয়ে যায়।
রামু রাবার বাগান ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় বলেন, পালিয়ে যাওয়ার সময় দুষ্কৃতিকারীরা বাগানের টেপিং কাজে নিয়োজিত স্থানীয় কয়েকজন টেপারকে লাঠি, দা, লোহার রড দিয়ে বেদম মারধর এবং বিভিন্ন হুমকি প্রদর্শন করে। বর্তমানে টেপিং কাজে নিয়োজিত টেপারসহ রাবার বাগান শ্রমিক, কর্মচারীরা চরম আতংকে রয়েছে। টেপাররা ভয়ে টেপিং কাজে যাচ্ছে না। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের ‘রামু রাবার বাগান’ এ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
রামু থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, রাবার বাগানের পাহাড়ে দুষ্কৃতিকারীরা নিরীহ, হতদরিদ্র লোকজনকে তুলে নিয়ে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের মতো ঘৃণ্য কর্মকান্ড করছে। যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ সজাগ রয়েছে। ইতিমধ্যে অভিযান চালানো হয়েছে। ভবিষ্যতে দুষ্কৃতিকারীদের নির্মূলে আরো বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে। রাবার বাগানের নিজস্ব নিরাপত্তা জোরদার ও অপহরণের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনকেও অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে রামু রাবার বাগান ব্যবস্থাপক নন্দী গোপাল রায় জানান, দুষ্কৃতিকারীরা প্রায় সময়ই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাগানের চৌধুরী খামার, জুমছড়ি ও জামতলী এলকায় চলাচল করায় বাগানের কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারীরা আতঙ্কে রয়েছে। প্রশাসন ও স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় দেশের বৃহৎ এই রাবার বাগানকে নিরাপদ উৎপাদন স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। রাবার বাগানকে অপরাধীদের আস্তানা হিসেবে গড়ে তুলতে দেয়া যাবেনা বলে তিনি জানান।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স জানান, রামুর রাবার বাগানে অপহরণকারীচক্রের উৎপাত বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠিত হচ্ছে এ বাগানে। অপহরণকারীচক্রের কারণেই আতংকে টেপাররা (শ্রমিক) যথাসময়ে বাগানে রাবার কষ সংগ্রহে যেতে পারছে না। এতে রাবার কষ সংগ্রহ ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে সরকার যেমন রাজস্ব হারাবে, তেমনি কষ সংগ্রহে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানও আর্থিক লোকসানের মুখে পড়বে। তিনি আরো জানান, রাবার বাগানে অপহরণসহ সকল অপরাধ দমনে পুলিশ প্রশাসন ও বাগানের আনসার সদস্যরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
রামুর রাবার বাগানের কষ সংগ্রহে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বদরুদ্দোজা রাবার প্লান্টার্স এন্ড লেবার সাপ্লাইয়ার্সের পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বাগানে অপহরণকারীদের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা যথাসময়ে রাবারের কষ সংগ্রহ করতে পারছে না। এমনকি প্রায় সময় আনসার সদস্যদের পাহারায় শ্রমিকরা কষ সংগ্রহ করছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাগানে রাবার উৎপাদনে ধস নামবে।